বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য তথ্য

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - বাংলা সাহিত্যপাঠ | - | NCTB BOOK
2.9k
2.9k
common.please_contribute_to_add_content_into বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য তথ্য.
common.content

বাংলা সাহিত্যের যুগ বিভাগ

7k
7k

বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগ সম্পর্কে পণ্ডিতেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের শাসক ও ধর্মমতের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে কেউ কেউ যুগবিভাগ করেছেন। বলে এই মতানৈক্য প্রত্যক্ষ করা যায়। প্রাচীন ও আধুনিক কালের বাংলা সাহিত্যের প্রথম ইতিহাস রচনার গৌরব পণ্ডিত রামগতি ন্যায়রত্নের প্রাপ্য। ১৮৭৩ সালে তিনি "বাঙ্গালা ভাষা ও বাঙ্গালা সাহিত্যবিষয়ক প্রস্তাব' গ্রন্থে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ ও উনিশ শতকের সাহিত্য সম্বন্ধে ধারাবাহিক আলোচনা করেন। তাঁর ইতিহাস তিনটি অংশে বিভক্ত হয়েছিল :

১. আদ্যকাল অর্থাৎ প্রাক-চৈতন্য পর্ব। এই অংশে বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস ও কৃত্তিবাসের আলোচনা আছে,

২. মধ্যকাল অর্থাৎ চৈতন্যযুগ থেকে ভারতচন্দ্রের পূর্ব পর্যন্ত,

৩. ইদানীন্তন কাল – ভারতচন্দ্র থেকে রামগতি ন্যায়রত্নের সমকালীন কবি সাহিত্যিকদের বিবরণ রয়েছে।

১৮৯৬ সালে প্রকাশিত 'বঙ্গভাষা ও সাহিত্য' গ্রন্থে ড. দীনেশচন্দ্র সেন বাংলা সাহিত্যের বিস্তৃত ইতিহাস তুলে ধরেন এবং সেখানে বিভিন্ন সাহিত্যসৃষ্টির বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করে বাংলা সাহিত্যকে কয়েকটি যুগে বিভক্ত করেন।

ড. দীনেশচন্দ্র সেন যুগবিভাগ করেছেন এ ভাবে :

ক. হিন্দু-বৌদ্ধ যুগ (৮০০ থেকে ১২০০ সাল), খ. গৌড়ীয় যুগ বা শ্রীচৈতন্য পূর্ব যুগ,

গ. শ্রীচৈতন্য সাহিত্য বা নবদ্বীপের প্রথম যুগ,

ঘ. সংস্কার যুগ এবং ঙ. কৃষ্ণচন্দ্রীয় যুগ অথবা নবদ্বীপের দ্বিতীয় যুগ।

ড. দীনেশচন্দ্র সেনের সামনে তথ্যের অভাব ও গবেষণার অপূর্ণতা বিদ্যমান ছিল। বলে তিনি যুগ লক্ষণ সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারেন নি। প্রাচীন যুগকে তিনি যে অর্থে হিন্দু-বৌদ্ধযুগ বলে চিহ্নিত করেছেন তা একমাত্র নিদর্শন চর্যাপদ দিয়ে প্রমাণিত হয়। না। কোন সঠিক সূত্র প্রয়োগে তিনি যুগবিভাগ করেন নি; কোথাও ধর্ম, কোথাও শাসক তাঁর যুগবিভাগে আদর্শ হয়েছে বলে তা সুষ্ঠু হতে পারে নি ।

ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের যে যুগবিভাগ করেছেন তা হল : ক. প্রাচীন বা মুসলমানপূর্ব যুগ (৯৫০-১২০০ সাল),

খ. তুর্কি বিজয়ের যুগ (১২০০-১৩০০),

গ. আদি মধ্যযুগ বা প্রাকচৈতন্য যুগ (১৩০০-১৫০০),

ঘ. অন্ত্য মধ্যযুগ (১৫০০-১৮০০), চৈতন্য যুগ বা বৈষ্ণবসাহিত্য যুগ (১৫০০- ১৭০০) ও নবাবি আমল (১৭০০-১৮০০) এবং

ড. আধুনিক বা ইংরেজি যুগ (১৮০০ সাল থেকে)।

common.content_added_by

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

ধর্ম কাজে জয়লাভ
ন্যায় পথে সাফল্য
জয়ী হতে হলে ধর্ম দরকার
কোনোটিই নয়

বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন বা আদি যুগ (৬৫০-১২০০ খ্রি)

1.9k
1.9k

বাংলা সাহিত্যের সামগ্রিক ইতিহাসকে তিন যুগে ভাগ করা হয়েছে। এর প্রথম যুগের নাম প্রাচীন যুগ। তবে কেউ কেউ আরও কয়টি নামে এ যুগকে অভিহিত করেছেন। সে নামগুলো হল : আদ্যকাল, গীতিকবিতার যুগ, হিন্দু-বৌদ্ধ যুগ, আদি যুগ, প্রাক-তুর্কি যুগ, গৌড় যুগ ইত্যাদি। তবে প্রাচীন যুগ নামটির ব্যবহার ব্যাপক ও যথার্থ যুক্তিসঙ্গত ।

বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের একমাত্র নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন চর্যাপদ। চর্যাপদের প্রায় সমসাময়িক কালে বাংলাদেশে যে সব সংস্কৃত-প্রাকৃত-অপভ্রংশ সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছিল সেগুলো প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের প্রত্যক্ষ উপকরণ নয়। বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের রচিত চর্যাপদগুলো সম্পর্কে ১৯০৭ সালের আগে কোন তথ্যই জানা ছিল। না। ১৮৮২ সালে প্রকাশিত Sanskrit Buddhist Literature in Nepal গ্রন্থে রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র সর্বপ্রথম নেপালের বৌদ্ধতান্ত্রিক সাহিত্যের কথা প্রকাশ করেন

common.content_added_by

বাঙালা জাতির উদ্ভব

639
639

বাংলার পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে প্রাচীন ও নব্য প্রস্তরযুগ এবং তাম্রযুগের নিদর্শন পাওয়া গেছে বলে ঐতিহাসিকেরা উল্লেখ করেছেন। এ সকল যুগে বাংলার পার্বত্য সীমান্ত অঞ্চলেই মানুষ বাস করত এবং ক্রমে তারা অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে।

বর্তমান বাঙালি জনগোষ্ঠী বহুকাল ধরে নানা জাতির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। এর মূল কাঠামো সৃষ্টির কাল প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে মুসলমান অধিকারের পূর্ব পর্যন্ত বিস্তৃত। সমগ্র বাঙালি জনগোষ্ঠীকে দু ভাগে ভাগ করা যায় : ক. প্রাক-আর্য বা অনার্য নরগোষ্ঠী এবং খ. আর্য নরগোষ্ঠী। এদেশে আর্যদের আগমনের পূর্ব পর্যন্ত অনার্যদেরই বসতি ছিল । এই প্রাক-আর্য নরগোষ্ঠী বাঙালি জীবনের মেরুদণ্ড। আর্যদের আগমনে সে জীবন উৎকর্ষমণ্ডিত হয়ে ওঠে।

বৈদিক যুগে আর্যদের সঙ্গে বাংলাদেশবাসীর কোন সম্পর্ক ছিল না। বৈদিক গ্রন্থাদিতে বাংলার নরনারীকে অনার্য ও অসভ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলার আদিম অধিবাসী আর্যজাতি থেকে উদ্ভূত হয় নি। আর্যপূর্ব জনগোষ্ঠী মূলত নেগ্রিটো, অস্ট্রিক, দ্রাবিড় ও ভোটচীনীয়—এই চার শাখায় বিভক্ত ছিল ।

নিগ্রোদের মত দেহগঠনযুক্ত এক আদিম জাতির এ দেশে বসবাসের কথা অনুমান করা হয়। কালের পরিবর্তনে তাদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব এখন বিলুপ্ত। অস্ট্রো-এশিয়াটিক বা অস্ট্রিক গোষ্ঠী থেকে বাঙালি জাতির প্রধান অংশ গড়ে উঠেছে বলে গবেষকগণের ধারণা। কেউ কেউ তাদের 'নিষাদ জাতি' বলেন। প্রায় পাঁচ-ছয় হাজার বছর পূর্বে ইন্দোচীন থেকে আসাম হয়ে বাংলায় প্রবেশ করে অস্ট্রিক জাতি নেগ্রিটোদের উৎখাত করে । এরাই কোল ভীল সাঁওতাল মুণ্ডা প্রভৃতি উপজাতির পূর্বপুরুষ হিসেবে চিহ্নিত। বাঙালির রক্তে এদের প্রভাব আছে। বাংলা ভাষার শব্দে ও বাঙালি জীবনের সংস্কৃতিতে এরা প্রভাব বিস্তার করেছে। অস্ট্রিক জাতির সমকালে বা কিছু পরে প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে দ্রাবিড় জাতি এদেশে আসে এবং সভ্যতায় উন্নততর বলে তারা অস্ট্রিক জাতিকে গ্রাস করে। অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় জাতির সংমিশ্রণেই সৃষ্টি হয়েছে আর্যপূর্ব বাঙালি জনগোষ্ঠী। এদের রক্তধারা বর্তমান বাঙালি জাতির মধ্যে প্রবহমান।

common.content_added_by

বাংলা ভাষার উদ্ভব

652
652

বাংলাদেশের অধিবাসীরা প্রথম থেকেই বাংলা ভাষায় কথা বলত না। বাংলা প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষাগোষ্ঠীর অন্যতম ভাষা হিসেবে বিবর্তিত হয়েছে। তাই প্রাক- আর্য যুগের অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর ভাষার সঙ্গে তা সংশ্লিষ্ট নয়। তবে সেসব ভাষার শব্দসম্ভার রয়েছে বাংলা ভাষায়। অনার্যদের তাড়িয়ে আর্যরা এ দেশে বসবাস শুরু করলে তাদেরই আর্যভাষা বিবর্তনের মাধ্যমে ক্রমে ক্রমে বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয়েছে।

বাঙালি জাতি যেমন সঙ্কর জনসমষ্টি, বাংলা ভাষাও তেমনি সঙ্কর ভাষা। বর্তমান বাংলা ভাষা প্রচলনের আগে গৌড় ও পুণ্ড্রের লোকেরা অসুর ভাষাভাষী ছিল বলে অষ্টম শতকে রচিত 'আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প' নামক সংস্কৃত গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। এই অসুর ভাষাভাষী লোকেরা ছিল সমগ্র প্রাচীন বঙ্গের লোক। অসুর ভাষাই অস্ট্রিক বুলি । ড. মুহম্মদ এনামুল হক মন্তব্য করেছেন, ‘বর্তমান বাংলা ভাষা প্রচলিত হইবার পূর্বে আমাদের দেশে যে এই অসুর ভাষা বা অস্ট্রিক বুলি প্রচলিত ছিল, তাহাতে কোন সন্দেহ নাই।' অস্ট্রিক বুলির কিছু শব্দ ও বাকরীতি এখনও বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়।

বাংলা ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় মূল ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ মনে করেছেন, আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ হাজার বছর আগে এই মূল ভাষার অস্তিত্ব ছিল । আনুমানিক আড়াই হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে মূল ভাষা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেসব প্রাচীন শাখার সৃষ্টি হয়, তার অন্যতম হল আর্য শাখা। এ থেকেই ভারতীয় আর্য ভাষার সৃষ্টি। এর কাল ১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। ভারতীয় আর্য ভাষার তিনটি স্তর :

ক. প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা (বৈদিক-সংস্কৃত), খ্রিস্টপূর্ব দ্বাদশ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ

শতাব্দী পর্যন্ত। খ. মধ্য ভারতীয় আর্যভাষা (পালি, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ), খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে খ্রিস্টীয় দশম শতক পর্যন্ত ।

গ. নব্য ভারতীয় আর্যভাষা (বাংলা, হিন্দি, মারাঠি, আসামি ইত্যাদি) খ্রিস্টীয় দশম

শতক থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত ।

ভারতীয় আর্যভাষার এই স্তরবিভাগ থেকে দেখা যায় যে, প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষার স্তরে বৈদিক ও সংস্কৃত ভাষা প্রচলিত ছিল। জনতার প্রভাবে এ ভাষা পরিবর্তিত হয়ে মধ্যভারতীয় আর্যভাষার স্তরে আসে। প্রথম পর্যায়ে পালি এবং পরে প্রাকৃত ভাষা নামে তা চিহ্নিত হয়। অঞ্চলভেদে প্রাকৃত ভাষা কয়েকটি শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে যায়। এর একটি ছিল মাগধি প্রাকৃত। এ ভাষার প্রাচ্যতর রূপ গৌড়ী প্রাকৃত । তা থেকে গৌড়ী অপভ্রংশের মাধ্যমে বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয়েছে। এই পর্যায়ের অন্যান্য ভাষা হল মৈথিলি, মাগধি, ভোজপুরিয়া, আসামি ও উড়িয়া। বাংলা ভাষার জন্মকাল কেউ কেউ দশম শতক বলে নির্ণয় করেছেন।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র মতে বাংলা ভাষার উৎপত্তিকাল খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দী। কম পক্ষে হাজার বছরের পুরানো বাংলা ভাষা উৎপত্তির পর থেকে নানা পর্যায়ে পরিবর্তনের মাধ্যমে আধুনিক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। বাংলা ভাষার বিবর্তনের ইতিহাসে আদি মধ্য ও আধুনিক—এই তিন যুগের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য উপলব্ধি করা যায়। আদি বা প্রাচীন যুগের বাংলা ভাষার কাল দ্বাদশ শতক পর্যন্ত বিস্তৃত। এ সময়ের প্রধান নিদর্শন চর্যাপদ। এর ভাষা থেকে তখন পর্যন্ত তার পূর্ববর্তী অপভ্রংশের প্রভাব দূর হয়ে যায় নি, এমন কি প্রাকৃতের প্রভাবও তাতে বর্তমান ছিল। তবে এখানেই বাংলা ভাষা তার স্বতন্ত্র মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছে।

common.content_added_by

বাংলা লিপির উদ্ভব

2.4k
2.4k

বাংলা লিপি ব্রাহ্মী লিপি থেকে উৎপন্ন। শুধু বাংলা নয় সকল ভারতীয় লিপিই এই ব্রাহ্মী লিপি থেকে জন্মলাভ করেছে। ব্রাহ্মী লিপি ভারতের মৌলিক লিপি। সিংহলি, ব্রহ্মী, শ্যামী, যবদ্বীপী ও তিব্বতি লিপির উৎসও ব্রাহ্মী লিপি। সম্রাট অশোকের অনুশাসন সুগঠিত ব্রাহ্মী লিপিতেই উৎকীর্ণ। ব্রাহ্মী লিপির সমসাময়িক কালে উত্তর- পশ্চিম ভারতে খরোষ্ঠী লিপির প্রচলন ছিল। পরে ব্রাহ্মী লিপি সে স্থান অধিকার করে।

অষ্টম শতাব্দীতে ব্রাহ্মী লিপি থেকে পশ্চিমা লিপি, মধ্যভারতীয় লিপি ও পূর্বী লিপি—এই তিনটি শাখার সৃষ্টি হয়। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাচীন ব্রাহ্মী লিপি থেকে উদ্ভব হয়েছে মধ্যভারতীয় ও পূর্বী লিপির এবং দক্ষিণী ব্রাহ্মী লিপি থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমের নাগরী লিপির উদ্ভব হয়েছে। পূর্বী লিপি থেকেই বাংলার জন্ম। নাগরী লিপি বাংলা অক্ষরের চেয়ে পুরানো নয়। উত্তর-পশ্চিমা লিপি ষষ্ঠ শতক থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের লিপিকে স্থানচ্যুত করে। তবে সপ্তম শতকে উত্তর-পূর্ব ভারতে পূর্বী লিপি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। নাগরী লিপি পূর্বভারতে কিছুকাল প্রাধান্য বজায় রেখেছিল, কিন্তু পূর্ব-ভারতে পূর্বী লিপি অক্ষত থাকে এবং একাদশ-দ্বাদশ শতকের মধ্যেই এই পূর্বী লিপি থেকে বাংলা লিপির উদ্ভব হয়েছে।

সেন যুগে বাংলা লিপির গঠনকার্য শুরু হলেও পাঠান যুগে তার মোটামুটি আকার লাভ করে। ১৮০০ সালে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস স্থাপিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সুদীর্ঘ সময়ে হাতে লেখা হয়েছে বলে বাংলা লিপি নানা পরিবর্তনের মাধ্যमে হয়েছে। ছাপাখানার প্রভাবে পরবর্তীকালে বাংলা লিপির তেমন কোন পরিবর্তন ঘটে। নি। উড়িয়া, মৈথিলি ও আসামি লিপির ওপর বাংলা লিপির প্রভাব বিদ্যমান। আমি ও বাংলা অক্ষরের মধ্যে গুটিকয়েক অক্ষর ছাড়া কোন পার্থক্য নেই। বাংলা জনগোষ্ঠী বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভক্ত হলেও, বাংলা লিপির কোন ব্যবধান সৃষ্টি হয় নি ।

শব্দসম্ভার

বাংলা ভাষার শব্দসম্ভারকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায় :

১. তৎসম, ২. অর্ধতৎসম, ৩, তদ্ভব, ৪. দেশি ও ৫. বিদেশি শব্দ।

১. তৎসম শব্দ : যেসব শব্দ পরিবর্তন ছাড়াই সংস্কৃত থেকে বাংলায় এসেছে। সেগুলো তৎসম শব্দ। যেমন: চন্দ্র, সূর্য, হস্ত, পদ ইত্যাদি। ২. অর্ধতৎসম শব্দ : যেসব শব্দ সংস্কৃত থেকে কিছুটা বিকৃত হয়ে বাংলায় এসেছে

সেগুলো অর্ধতৎসম শব্দ। যেমন : গিন্নি, পিরীত, অঘ্রান, গেরাম ইত্যাদি । ৩. তদ্ভব শব্দ : যেসব শব্দ সংস্কৃত থেকে পরিবর্তিত হয়ে বাংলায় এসেছে সেগুলো তদ্ভব শব্দ। যেমন : হাত, পা, ছাতা, পাখা ইত্যাদি ।

৪. দেশি শব্দ : যেসব শব্দ এদেশের আদিম অধিবাসী অনার্যদের ভাষা থেকে

বাংলায় এসেছে সেগুলো দেশি শব্দ। যেমন : ঢেঁকি, ডোঙা, খড়, চুলা ইত্যাদি। ৫. বিদেশি শব্দ : যেসব শব্দ বিদেশি ভাষা থেকে বাংলায় এসেছে সেগুলো বিদেশি শব্দ। যেমন : কলম, চেয়ার, চিনি, বেগম ইত্যাদি।

বাংলা বর্ণমালা গড়ে উঠেছে এগারটি স্বরবর্ণ এবং ঊনচল্লিশটি ব্যঞ্জনবর্ণ নিয়ে। সাকুল্যে এই পঞ্চাশটি বর্ণের সাহায্যে সৃষ্টি হয়েছে সোয়া লক্ষের মত শব্দের—যার পঞ্চাশ হাজার তৎসম শব্দ, আড়াই হাজার আরবি-ফারসি, শ চারেক তুর্কি, হাজার খানেক ইংরেজি, দেড় শ পর্তুগিজ-ফরাসি, আর কিছু শব্দ বিদেশি, বাদবাকি শব্দ তত্ত্বৰ ও দেশি ।

উপসংহারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায় বলা যায়, 'বাংলাদেশের ইতিহাস খণ্ডতার ইতিহাস। পূর্ববঙ্গ পশ্চিমবঙ্গ, রাঢ় বরেন্দ্রের ভাগ কেবল ভূগোলের ভাগ নয়; অন্তরের ভাগও ছিল তার সঙ্গে জড়িয়ে, সমাজের মিলও ছিল না। তবু এর মধ্যে এক ঐক্যের ধারা চলে এসেছে সে ভাষার ঐক্য নিয়ে। আমাদের যে বাঙালি বলা হয়েছে তার সংজ্ঞা হচ্ছে, আমরা বাংলা বলে থাকি।'

common.content_added_by

চর্যাপদ

746
746

চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম পদ সংকলন তথা সাহিত্য নিদর্শন। নব্য ভারতীয় আর্যভাষারও প্রাচীনতর রচনা এটি।খ্রিষ্টীয় অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত এই গীতিপদাবলির রচয়িতারা ছিলেন সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ।

বৌদ্ধ ধর্মের গূঢ় অর্থ সাংকেতিক রূপের আশ্রয়ে ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যেই তাঁরা পদগুলো রচনা করেছিলেন। বাংলা সাধন সংগীত শাখাটির সূত্রপাতও হয়েছিলো এই চর্যাপদ থেকেই। সে বিবেচনায় এটি একটি ধর্মগ্রন্থজাতীয় রচনা।

একই সঙ্গে সমকালীন বাংলার সামাজিক ও প্রাকৃতিক চিত্রাবলি এই পদগুলোতে উজ্জ্বল। এর সাহিত্যগুণ এখনও চিত্তাকর্ষক। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থশালা থেকে চর্যার একটি খণ্ডিত পুঁথি উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে চর্যাপদের সঙ্গে বাংলা ভাষার অনস্বীকার্য যোগসূত্র বৈজ্ঞানিক যুক্তিসহ প্রতিষ্ঠিত করেন। চর্যাপদের প্রধান কবিগণ হলেন লুইপাদ, কাহ্নপাদ, ভুসুকুপাদ, শবরপাদ প্রমুখ।

বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ ( ১২০১-১৮০০ খ্রি)

4.2k
4.2k

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ১২০০ থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত সময় মধ্যযুগ বলে চিহ্নিত। এর মধ্যে ১২০০ থেকে ১৩৫০ সাল পর্যন্ত দেড় শ বছরকে কেউ কেউ অন্ধকার যুগ বা তামস যুগ বলে অভিহিত করেছেন। বাংলাদেশে তুর্কি বিজয়ের মাধ্যমে মুসলমান শাসনামলের সূত্রপাতের পরিপ্রেক্ষিতে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য সাহিত্য সৃষ্টি হয় নি অনুমান করে এ রকম সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ১২০৪ সালে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খিলজি বাংলার সেন বংশের শাসক অশীতিপর বৃদ্ধ লক্ষ্মণ সেনের রাজধানী নদীয়া বিনা বাধায় জয় করে এদেশে মুসলমান শাসনের সূত্রপাত করেন। ১৩৪২ সালে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ গৌড়ের সিংহাসন দখল করে দিল্লির শাসনমুক্ত রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর পুত্র সেকান্দর শাহের আমলে বড়ু চণ্ডীদাসের আবির্ভাব হয়। বড়ু চণ্ডীদাসের কাব্য 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' মধ্যযুগের প্রথম নিদর্শন

common.content_added_by

বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ (১২০১-১৩৫০)

456
456
common.please_contribute_to_add_content_into বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ (১২০১-১৩৫০).
common.content
common.content_added_by

বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ পরবর্তী মধ্যযুগ

489
489

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে আনুমানিক ১২০০ সাল থেকে চৌদ্দ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত কাল সৃজনহীন ঊষরতায় আচ্ছন্ন বলে মনে হয় ।

বলা হয়ে থাকে, ক্ষমতালোভী বিদেশাগত মুসলমান আক্রমণকারীরা বিবেচনাহীন সংগ্রাম শাসন আর শোষণের মাধ্যমে দেশে এক অস্বস্তিকর আবহাওয়ার সৃষ্টি করেছিল। চারুজ্ঞান বিবর্জিত জঙ্গীবাদী বস্তুবাদী শাসকদের অত্যাচারে সাহিত্য সৃষ্টি করার মত সুকুমার বৃত্তির চর্চা অসম্ভব হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংঘর্ষের ফলে বাঙালির বহির্জীবনে ও অন্তর্জীবনে ভীতি বিহ্বলতার সৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু মুসলমান শাসনের সূত্রপাত এদেশের জন্য কোন কল্যাণ বহন করে এনেছিল কিনা তা সর্বাগ্রে পর্যালোচনা করে বিতর্কের অবতারণা করা উচিত ছিল।

প্রকৃত পক্ষে বাংলা সাহিত্যবর্জিত তথাকথিত অন্ধকার যুগের জন্য তুর্কিবিজয় ও তার ধ্বংসলীলাকে দায়ী করা বিভ্রান্তিকর। এ সময়ের যে সব সাহিত্য নিদর্শন মিলেছে এবং এ সময়ের রাজনৈতিক অবস্থার যে সব তথ্য লাভ করা গেছে তাতে অন্ধকার যুগের অস্তিত্ব স্বীকৃত হয় না। অন্ধকার যুগের দেড় শ বছর মুসলমান শাসকেরা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন এ কথা সত্য নয়। ইলিয়াস শাহি আমলের পূর্ব পর্যন্ত খিলজি বলবন ও মামলুক বংশের যে পঁচিশ জন শাসক বাংলাদেশ শাসন করেছিলেন তাঁদের কারও কারও রাজত্বে সাকুল্যে পনের-বিশ বৎসর মাত্র দেশে অশান্তি ছিল, অন্যদের বেলায় শান্ত পরিবেশ বিদ্যমান ছিল বলে ইতিহাস সমর্থন করে। তৎকালীন যুদ্ধবিগ্রহ দিল্লির শাসকের বিরুদ্ধে অথবা অন্তর্বিরোধে ঘটেছে বলে তা ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে নি। ফলে তাতে জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ার কোনও কারণ ঘটে নি। বরং এদেশে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামি শিক্ষাদীক্ষা, ধর্মকর্ম, আচারব্যবহার, আহারবিহার প্রভৃতির প্রবর্তনের মাধ্যমে দেশবাসীর মধ্যে ইসলামি পরিবেশ গড়ে উঠছিল ।

common.content_added_by

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য

687
687

'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' মধ্যযুগের প্রথম কাব্য এবং বড়ু চণ্ডীদাস মধ্যযুগের আদি কবি। ভাগবত প্রভৃতি পুরাণের কৃষ্ণলীলা-সম্পর্কিত কাহিনি অনুসরণে, জয়দেবের গীতগোবিন্দ কাব্যের প্রভাব স্বীকার করে, লোকসমাজে প্রচলিত রাধাকৃষ্ণ প্রেম-সম্পর্কিত গ্রাম্য গল্প অবলম্বনে কবি বড়ু চণ্ডীদাস শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য রচনা করেন। ১৯০৯ সালে (১৩১৬ বঙ্গাব্দ) বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার কাঁকিল্যা গ্রামে এক গৃহস্থ বাড়ির গোয়ালঘর থেকে পুঁথি আকারে অযত্নে রক্ষিত এ কাব্য আবিষ্কার করে বাংলা সাহিত্যে এক নতুন অধ্যায়ের সংযোজন ঘটান। বৈষ্ণব মহান্ত শ্রীনিবাস আচার্যের দৌহিত্র-বংশজাত দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের অধিকারে এই গ্রন্থটি রক্ষিত ছিল। ১৯১৬ সালে (১৩২৩ সনে) বসন্তরঞ্জন রায়ের সম্পাদনায় গ্রন্থটি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত হয়।

পুঁথিটির প্রথম দিকের দুটি পাতা এবং শেষের পাতাটি ছিল না। এ ছাড়া পুঁথির মধ্যেও কিছু পাতা নেই। রীতি অনুযায়ী পুঁথির প্রথম দিকে দেবতার প্রশংসা, কবির পরিচয় ও গ্রন্থনাম উল্লেখিত হয় এবং শেষ দিকের পাতায় পুঁথির রচনাকাল ও লিপিকাল লিখিত থাকে। প্রথম ও শেষ অংশ খণ্ডিত থাকায় কবির আত্মপরিচয় ও রচনাকালের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লোকচক্ষুর আড়ালেই রয়ে গেছে।

বৈষ্ণব মতবাদে গৃহীত রাধাকৃষ্ণের রূপকের বাইরে এ কাব্যের পরিচয়। বৈষ্ণব সাধনা ও ঐতিহ্যের বিরোধী এ কাব্য রুচিহীন গ্রাম্যতা, যৌনকামনা ও মিলনের বর্ণনায় অশ্লীল, সূক্ষ্ম ইন্দ্ৰিয়াতীত অনুভূতির ব্যঞ্জনার অভাব এ কাব্যকে করে তুলেছে বিতর্ক মুখর। তাই মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন হিসেবে কাব্যটি অচিরেই ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি করে ।

বাংলা সাহিত্যে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের স্থানটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ভাষাতত্ত্বের দিক থেকে বিবেচনা করলে এই কাব্যের মূল্য অসাধারণ বলে গ্রহণযোগ্য। ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে প্রাচীন যুগের নিদর্শন চর্যাপদের পর এবং মধ্যযুগের প্রথম নিদর্শন শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের মাঝামাঝি সময়ে আর কোন বাংলা কাব্য আবিষ্কৃত হয় নি। শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের সমকালে বা কিছু পরে রচিত বিদ্যাপতির পদাবলি, কৃত্তিবাসের রামায়ণ, মালাধর বসুর শ্রীকৃষ্ণ বিজয় ইত্যাদি কাব্যের প্রাচীন পুঁথি পাওয়া যায় নি। এ সবের ভাষা যুগের পরিবর্তনে অপেক্ষাকৃত আধুনিক হয়ে পড়েছে। পরবর্তী বৈষ্ণব ভাবধারা ও রসপর্যায়ের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের আদর্শগত বিরোধ বিদ্যমান থাকায় কাব্যটি লোকসমাজে বিশেষ প্রচলিত ছিল না। ফলে এর ভাষায় পরিবর্তন ঘটতে পারে নি।

common.content_added_by
common.content_updated_by

বৈষ্ণব সাহিত্য/পদাবলি

562
562

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের প্রধানতম গৌরব বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্য। রাধা- কৃষ্ণের প্রেমলীলা অবলম্বনে এই অমর কবিতাবলির সৃষ্টি এবং বাংলাদেশে শ্রীচৈতন্যদের প্রচারিত বৈষ্ণব মতবাদের সম্প্রসারণে এর ব্যাপক বিকাশ। জয়দেব-বিদ্যাপতি-চণ্ডীদাস থেকে সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত বৈষ্ণব গীতিকবিতার ধারা প্রবাহিত হলেও প্রকৃতপক্ষে ষোল-সতের শতকে এই সৃষ্টিসম্ভার প্রাচুর্য ও উৎকর্ষপূর্ণ ছিল। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ ফসল বৈষ্ণব পদাবলি ।

পদাবলি সাহিত্য বৈষ্ণবতত্ত্বের রসভাষ্য। বৈষ্ণব পদাবলি বৈষ্ণবসমাজে মহাজন পদাবলি এবং বৈষ্ণব পদকর্তাগণ মহাজন নামে পরিচিত। বৈষ্ণবমতে স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক বিদ্যমান। এই প্রেম সম্পর্ককে বৈষ্ণব মতাবলম্বীগণ রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলার রূপকের মাধ্যমে উপলব্ধি করেছেন। রাধা ও শ্রীকৃষ্ণের রূপাশ্রয়ে ভক্ত ও ভগবানের নিত্যবিরহ ও নিত্যমিলনের অপরূপ আধ্যাত্মিক লীলা কীর্তিত হয়েছে। বৈষ্ণবদের উপাস্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তাঁর আনন্দময় তথা প্রেমময় প্রকাশ ঘটেছে রাধার মাধ্যমে । রাধা মানবী নয়, শ্রীকৃষ্ণরূপ পূর্ণ ভগবৎ-তত্ত্বের অংশ। ভগবানের লীলা চলে। তাঁর স্বরূপভূতা শক্তি রাধার সঙ্গে। বৈষ্ণবেরা ভগবান ও ভক্তের সম্পর্কের স্বরূপ নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে কৃষ্ণকে পরামাত্মা বা ভগবান এবং রাধাকে জীবাত্মা বা সৃষ্টির রূপক মনে করে তাঁদের বিচিত্র প্রেমলীলার মধ্যেই ধর্মীয় তাৎপর্য উপলব্ধি করেছেন। ফলে “এক প্রাচীন গোপজাতির লোকগাথার নায়ক প্রেমিক কৃষ্ণ এবং মহাভারতের নায়ক অবতার কৃষ্ণ কালে লোকস্মৃতিতে অভিন্ন হয়ে উঠেন। গোপী-প্রধানা রাধার সঙ্গে তাঁর প্রণয়ই জীবাত্মা-পরমাত্মার প্রণয়লীলার রূপক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে ধর্ম-দর্শনের ও সাধন-ভজনের অবলম্বন হয়েছে।' নীলরতন সেন মন্তব্য করেছেন, 'পদাবলির কাহিনি, তথ্য উপকরণ এবং ভক্তি-ভাবাশ্রিত সৌন্দর্য চিত্রায়ণে বৈষ্ণব কবিরা উপনিষদ, হালের গাথাসপ্তশতী, আভীর ও অন্যান্য জাতির মৌলিক প্রেমগাথা, ভাগবতসহ বিবিধ পুরাণ, বাৎসায়নের কামসূত্র, অমরুশতক, আনন্দবর্ধনের ধ্বন্যালোক, কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়, সদুক্তিকর্ণামৃত, সুভাষিতাবলী, সূক্তিমুক্তাবলী প্রভৃতি প্রাচীন শাস্ত্র, পুরাণ, লোকধর্ম ও

প্রেমগীতিকে আশ্রয় করে ভারতের পূর্বাচার্যদের অনুসৃত পথেই অগ্রসর হয়েছেন। চৈতন্যদেবের (১৪৮৬-১৫৩৩) যুগান্তকারী আবির্ভাবের পূর্বেই রাধাকৃষ্ণ প্রেম- লীলার মাধুর্য পদাবলিগানের উপজীব্য হয়েছিল। কিন্তু চৈতন্যদেবের প্রভাবে যে নব্য মানবীয় প্রেমভক্তিধারার বিকাশ ঘটে তা অবলম্বনেই বিপুল ঐশ্বর্যময় পদাবলি। সাহিত্যের সার্থকতর রূপায়ণ সম্ভবপর হয়। চৈতন্যদেবের আবির্ভাবের পূর্বে কৃষ্ণলীলা। বিষয়ক গানে ভক্তিরসের রং লাগলেও তা থেকে আদিরসের ক্লেদ দূর হয়ে রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা ভক্তহৃদয়ের প্রতিফলন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

common.content_added_by

মঙ্গলকাব্য

485
485

বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে বিশেষ এক শ্রেণির ধর্মবিষয়ক আখ্যান কাব্য 'মঙ্গলকাব্য' নামে পরিচিত। এগুলো খ্রিস্টীয় পনের শতকের শেষ ভাগ থেকে আঠার শতকের শেষার্ধ পর্যন্ত পৌরাণিক, লৌকিক ও পৌরাণিক-লৌকিক সংমিশ্রিত দেবদেবীর লীলামাহাত্ম্য, পূজাপ্রচার ও ভক্তকাহিনি অবলম্বনে রচিত সম্প্রদায়গত প্রচারধর্মী আখ্যানমূলক কাব্য। বলা হয়ে থাকে, যে কাব্যে দেবতার আরাধনা, মাহাত্ম্য-কীর্তন করা হয়, যে কাব্য শ্রবণেও মঙ্গল হয় এবং বিপরীতটিতে হয় অমঙ্গল; যে কারা মঙ্গলাধার, এমন কি, যে কাব্য যার ঘরে রাখলেও মঙ্গল হয়—তাকেই বলা হয়। মঙ্গলকাব্য। 'মঙ্গল' শব্দটির আভিধানিক অর্থ 'কল্যাণ'। যে কাব্যের কাহিনি শ্রবণ করলে সর্ববিধ অকল্যাণ নাশ হয় এবং পূর্ণাঙ্গ মঙ্গল লাভ ঘটে, তাকেই মঙ্গলকাব্য বলা যায়। মঙ্গলকাব্যের 'মঙ্গল' শব্দটির সঙ্গে শুভ ও কল্যাণের অর্থসাদৃশ্য থাকা ছাড়াও এসব কাব্যের অনেকগুলো এক মঙ্গলবারে পাঠ আরম্ভ হয়ে পরের মঙ্গলবারে সমাপ্ত হত বলে এ নামে অভিহিত হয়েছে। বিভিন্ন দেবদেবীর গুণগান মঙ্গলকাব্যগুলোর উপজীব্য। তন্মধ্যে স্ত্রীদেবতাদের প্রাধান্যই বেশি এবং মনসা ও চণ্ডীই এদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। লৌকিক দেবদেবীর কাহিনি অবলম্বনে রচিত মঙ্গলকাব্যগুলোতে ক. বন্দনা, খ. গ্রন্থ রচনার কারণবর্ণনা, গ. দেবখণ্ড ও ঘ. নরখণ্ড বা মূলকাহিনি বর্ণনা—মোটামুটি এই চারটি অংশ থাকত। বারমাসী' ও 'চৌতিশা' জাতীয় কাব্যাংশ মঙ্গলকাব্যে স্থান লাভ করত। কবি কাব্যে নিজের পরিচয়ও উল্লেখ করতেন।

মঙ্গলকাব্য প্রধানত কাহিনিকেন্দ্রিক। মূল কাহিনির সঙ্গে দেবলীলা, ধর্মতত্ত্ব ও নানা ধরনের বর্ণনায় এসব কাব্য বিপুলায়তন লাভ করেছে। কেউ কেউ মঙ্গলকাব্যকে সংস্কৃত পুরাণের শেষ বংশধর বলতে চান, কেউবা তাকে মহাকাব্য বলেছেন, কেউ মঙ্গলকাব্যকে ধর্মগ্রন্থ বলে ভক্তি করেন, আবার কেউবা এ ধরনের সাহিত্যসৃষ্টি থেকে বাংলার তৎকালীন যথার্থ ঐতিহাসিক স্বরূপ সন্ধান করতে আগ্রহশীল। তবে মঙ্গলকাব্য যে একটি মিশ্র শিল্প তাতে সন্দেহ নেই। সংস্কৃত পুরাণের সঙ্গে এর বৈশিষ্ট্যগত কিঞ্চিৎ সাদৃশ্য আছে। পুরাণে যেমন দেবমাহাত্ম্য বা রাজবংশের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে, মঙ্গলকাব্যের সীমাবদ্ধ পরিসরে প্রায় অনুরূপ ব্যাপার আংশিক ভাবে সমাধা হয়েছে বলে লক্ষ করা যায়। তবে মঙ্গলকাব্যে সংস্কৃত পুরাণের আদর্শ কিছুটা ছায়াপাত করলেও তাকে পুরোপুরি পুরাণ বলা যায় না। লৌকিক ও পৌরাণিক আদর্শ-মিশ্রিত লৌকিক দেবদেবীর মহিমা প্রচারক এবং ভক্তের গৌরববাচক এই মঙ্গলকাব্যগুলো আখ্যানকেন্দ্রিক ধর্মীয় সাহিত্য হিসেবে গৃহীত হতে পারে। মঙ্গলকাব্যে লৌকিক গ্রামীণ সংস্কার, আর্যেতর দেববিশ্বাস এবং পৌরাণিক ব্রাহ্মণ্য সংস্কার ও চিন্তাধারা ক্রমে ক্রমে সমন্বয় লাভ করে। মঙ্গলকাব্যে সাম্প্রদায়িক দেবকাহিনি সর্বজনীন মানবিক সংবেদনাপূর্ণ সাহিত্যরূপে নবজন্ম লাভ করেছিল। গোষ্ঠিগত সাধনায় মঙ্গলকাব্যের শিল্পধর্মী অভিব্যক্তি ঘটেছিল। সৃষ্টির পটভূমি ও স্রষ্টা—উভয়পক্ষের বিচারেই মঙ্গলকাব্যকে যৌথ শিল্প হিসেবে বিবেচনা করা যায় । সে আমলে কবিরা নিত্যনতুন কাহিনি রচনার পথ পরিহার করেছিলেন। তখন হয়ত নবনব উন্মেষশালিনী প্রতিভার অভাব ছিল। কবিদের প্রতিভার গুণেই কাব্যগুলো বৈচিত্র্যহীন অনুকরণমাত্র না হয়ে শিল্পসম্মত যুগজীবনবাণী রূপে প্রতিভাত হয়েছে।

মঙ্গলকাব্যের উন্মেষ পর্যায়ে পনের শতকে রচনারীতি গতানুগতিক ছিল। তখন বিষয়বস্তুর পরিকল্পনা ছিল বৈশিষ্ট্যবর্জিত। নায়ক স্বর্গভ্রষ্ট দেবশিশু তাকে অভিশাপগ্রস্ত হয়ে কোন দেবতার পূজাপ্রচারের জন্য মানবীর গর্ভে পৃথিবীতে জন্ম নিতে হত। পূজাপ্রচারের বিপদসঙ্কুল পথে মঙ্গলকারী দেবতা তার রক্ষক। ষোল শতকের পরবর্তী কাব্যগুলোতে বিষয়বস্তুগত কোন অভিনবত্ব নেই, কেবল চরিত্রগুলোর মার্জিত রসরূপ দান করা হয়েছে। এর সঙ্গে নানা উপকরণের সংযোগে মঙ্গলকাব্যগুলোর যে কাহিনিগত কাঠামো দাঁড়িয়েছে তাতে আছে : প্রথমেই পঞ্চদেবতার বন্দনা, তারপর গ্রন্থোৎপত্তির কারণ বর্ণনা, সৃষ্টির রহস্য বর্ণনা, মনুর প্রজাসৃষ্টি, প্রজাপতির শিবহীন যজ্ঞ, সতীর দেহত্যাগ, উমার তপস্যা, মদনভস্ম, রতিবিলাপ, গৌরীর বিয়ে, কৈলাসে হরগৌরীর কোন্দল, শিবের ভিক্ষাযাত্রা, পার্বতী-চণ্ডী বা শিবের সম্পর্কিত অন্য কেউ যেমন মনসা প্রভৃতির নিজেদের পূজাপ্রচারের চেষ্টা, বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে পূজাপ্রচার, স্বর্গভ্রষ্ট দেবশিশুর স্বর্গে প্রত্যাবর্তন প্রভৃতির বৈচিত্র্যহীন বর্ণনা। তাছাড়া বারমাসী, নারীগণের পতিনিন্দা, চৌতিশা বা বর্ণানুক্রমিক চৌত্রিশ অক্ষরে দেবতার স্তব প্রভৃতিও মঙ্গলকাব্যের অঙ্গ হয়ে আছে।

বাংলা সাহিত্যের নানা শ্রেণির কাব্যে মঙ্গল কথাটির প্রয়োগ থাকলেও কেবল বাংলা লৌকিক দেবতাদের নিয়ে রচিত কাব্যই 'মঙ্গলকাব্য' নামে অভিহিত হয়। বৈষ্ণব সাহিত্যের চৈতন্যমঙ্গল, গোবিন্দমঙ্গল প্রভৃতি মঙ্গল নামধেয় কাব্যের সঙ্গে মঙ্গলকাব্যের কোন যোগসূত্র নেই। প্রকৃতপক্ষে মঙ্গলকাব্যগুলোকে শ্রেণিগত দিক থেকে পৌরাণিক ও লৌকিক এই দু ভাগে ভাগ করা যায়। পৌরাণিক শ্রেণির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল : গৌরীমঙ্গল, ভবানীমঙ্গল, দুর্গামঙ্গল, অন্নদামঙ্গল, কমলামঙ্গল, গঙ্গামঙ্গল, চণ্ডিকামঙ্গল ইত্যাদি । লৌকিক শ্রেণি হল : শিবায়ন বা শিবমঙ্গল, মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, কালিকামঙ্গল (বা বিদ্যাসুন্দর), শীতলামঙ্গল, রায়মঙ্গল, ষষ্ঠীমঙ্গল, সারদামঙ্গল, সূর্যমঙ্গল প্রভৃতি।

মঙ্গলকাব্যের উৎপত্তির উৎস এদেশের সুপ্রাচীন ধর্মাদর্শের সঙ্গে বিজড়িত। বাংলাদেশে আর্য আগমনের পূর্বে এখানকার আদিম জনগণ নিজস্ব ধর্মাদর্শ ও দেবদেবীগণের পরিকল্পনার অনুসারী ছিল। পরবর্তী কালে জৈন-বৌদ্ধ-ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মাধ্যমে আর্যদের সঙ্গে অনার্যদের সংস্পর্শ ঘটার ফলে তাদের আদিম দেবপরিকল্পনা ও ধর্মসংস্কার পরিবর্তিত হয়েছে। তবে তারা তাদের নিজস্ব আদর্শানুসারে নিজ নিজ লৌকিক দেবতাদের পূজাপদ্ধতি ও মহিমাজ্ঞাপক কাহিনি নিয়ে পাঁচালি রচনা করেছে। এগুলোই পরবর্তী কালে মঙ্গলকাব্যের আকার পেয়েছে।

common.content_added_by

জীবনী সাহিত্য

572
572

বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের গতানুগতিক ধারায় জীবনী সাহিত্য এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে। শ্রীচৈতন্যদেব ও তাঁর কতিপয় শিষ্যের জীবনকাহিনি অবলম্বনে। এই জীবনী সাহিত্যের সৃষ্টি। তবে এর মধ্যে চৈতন্য জীবনীই প্রধান। চৈতন্যদের জীবিতকালেই কারও কারও কাছে অবতাররূপে পূজিত হন। তাঁর শেষজীবন দিব্যোন্মাদ রূপে অতিবাহিত হয়েছে বলে তাঁর পক্ষে ধর্মমত প্রচার করা সম্ভব হয় নি। তাঁর শিষ্যরা এ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ধর্মপ্রচার করতে গিয়ে তাঁরা শ্রীচৈতন্যের জীবনকাহিনি আলোচনা করতেন। চৈতন্যের জীবদ্দশায়ই সংস্কৃত শ্লোকে, কাব্যে ও নাটকে এবং বাংলা গানে ও কাব্যে তাঁর চরিতকথা স্থান পেয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর জীবনী সাহিত্য সৃষ্টিতে প্রাচুর্য এসে বাংলা সাহিত্যে স্বাতন্ত্র্য এনেছে। বৈষ্ণব জীবনী সাহিত্যেই রক্ত-মাংসের মানুষ সর্বপ্রথম বাংলা সাহিত্যে একক প্রসঙ্গ হয়ে আত্মপ্রকাশ করল। চৈতন্য-জীবনী গ্রন্থগুলোর সমবেত উপাদান থেকে শ্রীচৈতন্যের নরলীলার দেশ-কাল-চিহ্নিত বিশেষিত স্বভাবের একটি নির্ভরযোগ্য মোটামুটি কাঠামো আবিষ্কার করা সম্ভব ।

আধুনিক জীবনী সাহিত্যের সঙ্গে মধ্যযুগের জীবনী সাহিত্যের পার্থক্য সম্পর্কে অধ্যাপক আহমদ কবির মন্তব্য করেছেন, ‘একালের জীবনীগ্রন্থ বলতে আমরা যা বুঝি, বৈষ্ণব চরিতকাব্যগুলো সেরকম নয়। জীবনচরিতে বাস্তব মানুষের জীবনালেখ্য, কর্ম, কীর্তি ও আদর্শের পরিচয় থাকে, আর থাকে তাঁর দেশকালের ছবি। যে-মানুষ তাঁর কর্ম ও আদর্শের প্রেরণায় বহু মানুষকে প্রভাবিত করেছেন, সে মানুষেরই জীবনী রচিত হয়। ভক্ত ও অনুরাগীরাই এ-জীবনী লিখে থাকেন। এভাবে জীবনী রচিত হয়েছে ধর্মগুরু, দার্শনিক, লেখক, কবি, বিজ্ঞানী, রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মী, ত্যাগী মানবদরদী কীর্তিধন্যদের। এঁরা অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব— এঁদের গুণমাহাত্ম্য ও মহিমা অপরকে প্রভাবিত করে। অবশ্য ব্যক্তি দোষেগুণে মানুষ। শুধু গুণের আদরে ব্যক্তিকে ভূষিত করলে ব্যক্তির পূর্ণ ছবি পাওয়া যায় না। ভক্তের লেখায় ব্যক্তির দোষ সাধারণত পরিত্যাজ্য। তবু একালের জীবনীগ্রন্থ অনেকাংশে বস্তুনিষ্ঠ। সন্দেহ নেই যে, একালে মানুষের ভক্তিনিষ্ঠাও অনেক কমেছে এবং মানুষ ক্রমশ বিজ্ঞানমনস্ক ও যুক্তিবাদী হয়ে উঠেছে। তাছাড়া খ্যাতিমান ব্যক্তিদের জীবনসম্পর্কিত তথ্যাদি ও বিবরণ পাওয়ার সুবিধাও হয়েছে। এক্ষেত্রে সংবাদপত্রের খবর, ব্যক্তিগত ডায়েরি, আত্মজীবনী, ঘনিষ্ঠজনের স্মৃতিকথা, ক্যাসেট, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ভিডিও চিত্র ফিল্ম ইত্যাদি একজন লোকমান্য ব্যক্তির জীবনী-প্রণয়নে সহায়তাদান করে। এভাবে গড়ে ওঠে একটি তথ্যনিষ্ঠ সত্য জীবনকাহিনি। একালের জীবনচরিত রক্তমাংসের বাস্তব মানুষেরই বাস্তব জীবনালেখ্য।

ধর্মীয় বিষয় অবলম্বনে সাহিত্যসৃষ্টি মধ্যযুগের বৈশিষ্ট্য। চৈতন্য জীবনী সাহিত্যও এই বৈশিষ্ট্য থেকে মুক্ত নয়। কারণ চৈতন্যদেবকে অনেকেই অবতার হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন এবং তাঁকে অবলম্বন করে রচিত কাব্য ভক্তিকাব্য হয়ে পড়েছে। ভক্তেরা চৈতন্যদেবকে মানুষরূপে কল্পনা করেন নি, করেছেন নররূপী নারায়ণরূপে। ফলে জীবনীগ্রন্থ হয়েছে দেব-অবতারের মঙ্গলপাঁচালী। তবে কৃষ্ণলীলার আদলে নরনারায়ণের জীবনলীলা বর্ণনা কালে কবিরা নিজেদের দেশ-কাল-পরিবেশ উপেক্ষা করতে পারেন নি। ড. আহমদ শরীফের মতে, জীবনী সাহিত্য 'ষোল শতকের শাস্ত্রিক সামাজিক ভৌগোলিক অবস্থা ও সাম্প্রদায়িক, প্রশাসনিক, নৈতিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অবস্থানের সংবাদ-চিত্র বহন করেছে। চরিতাখ্যানগুলির সর্বাধিক গুরুত্ব এখানেই।' জীবনী কাব্যগুলো যে সামাজিক ইতিহাস হিসেবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তাতে কোন সন্দেহ নেই।

চৈতন্য জীবনের কাহিনিতে কবিরা অলৌকিকতা আরোপ করেছেন। তবু চৈতন্য ও তাঁর শিষ্যরা বাস্তব মানুষ ছিলেন এবং এ ধরনের বাস্তব কাহিনি নিয়ে সাহিত্যসৃষ্টি বাংলা সাহিত্যে এই প্রথম। এ পর্যন্ত রচিত বাংলা সাহিত্যের বিষয় ছিল পৌরাণিক গল্প, দেবতার মাহাত্ম্যকাহিনি ও রাধাকৃষ্ণ লীলাবিষয়ক পদাবলি। কিন্তু জীবনী সাহিত্যে সমকালীন ইতিহাস প্রতিফলিত হয়েছে। বাস্তব মানুষের জীবনকাহিনি সাহিত্যের উপজীব্য হয়ে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। চৈতন্য জীবনী সাহিত্য সম্পর্কে ড. অসিতকুমার বন্ধ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন, ইহাতে একজন মহাপুরুষের ভাবজীবনের গভীর ব্যাকুলতা, তাঁহার সর্বত্যাগী পার্ষদগণের পূত জীবনকথা, ভক্তিদর্শন ও বৈষ্ণবতত্ত্বের নিগূঢ় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, বৈষ্ণবসমাজ ও বৈষ্ণবসমাজের বাহিরে বৃহত্তর বাঙালি হিন্দুসমাজ, হিন্দু মুসলমানের সম্পর্ক প্রভৃতি বিবিধ তথ্য সবিস্তারে বর্ণিত হইয়াছে বলিয়াই এই জীবনীকাব্যগুলি শুধু জীবনী মাত্র হয় নাই, – ইহাতে গৌড় বিশেষত নবদ্বীপ, শান্তিপুর, খড়দহ, নীলাচল ও ব্রজমণ্ডলের বৈষ্ণব সমাজের ইতিহাস, বিকাশ, পরিণতি প্রভৃতি ব্যাপারে ঐতিহাসিক তথ্যের যে প্রকার বাহুল্য দেখা যায়, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে তাহার মূল্য বিশেষভাবে স্বীকার করিতে হইবে। মধ্যযুগীয় বাংলার ইতিবৃত্ত আলোচনা করিতে গেলে চৈতন্য-জীবনীকাব্যগুলির সাহায্য অপরিহার্য।

common.content_added_by

অনুবাদ সাহিত্য

747
747

সকল সাহিত্যের পরিপুষ্টিসাধনে অনুবাদমূলক সাহিত্যকর্মের বিশিষ্ট ভূমিকা আছে। বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয় না। সমৃদ্ধতর নানা ভাষা থেকে বিচিত্র নতুন ভাব ও তথ্য সঞ্চয় করে নিজ নিজ ভাষার বহন ও সহন ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলাই অনুবাদ সাহিত্যের প্রাথমিক প্রবণতা। ভাষার মান বাড়ানোর জন্য ভাষার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হয়, আর তাতে সহায়তা করে অনুবাদকর্ম। উন্নত সাহিত্য থেকে ঋণ গ্রহণ করা কখনও অযৌক্তিক বিবেচিত হয় নি। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত ভাষার সীমিত শব্দাবলিতে কোন বিশেষ ধ্যানধারণা তত্ত্ব-তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়। উন্নত ও সমৃদ্ধ ভাষা-সাহিত্যের সান্নিধ্যে এলে বিভিন্ন বিষয়ের প্রতিশব্দ তৈরি করা সম্ভব হয়, অন্য ভাষা থেকে প্রয়োজনীয় শব্দও গ্রহণ করা যায়। অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্ব সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থের বক্তব্য আয়ত্তে আসে। ভাষা ও সাহিত্যের যথার্থ সমৃদ্ধির লক্ষ্যে শ্রেষ্ঠ ও সম্পদশাহী ভাষায় উৎকর্ষপূর্ণ সাহিত্যসৃষ্টির অনুবাদ একটি আবশ্যিক উপাদান । নতুন বিকাশমান ভাষার পক্ষে অনুবাদ 'আত্মোন্নতি সাধনের এক অপরিহার্য পন্থা ।

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের বিস্তৃত অঙ্গন জুড়ে অনুবাদ সাহিত্যের চর্চা হয়েছিল এবং পরিণামে এ সাহিত্যের শ্রীবৃদ্ধিসাধনে অনুবাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অবশ্যস্বীকার্য। সত্যিকার সার্থক সাহিত্য অনুবাদের মাধ্যমে সৃষ্টি করার বিস্তর বাধা থাকলেও ভাষা সাহিত্যের গঠনযুগে অনুবাদের বিশেষ প্রয়োজন অনুভূত হয়। তাই ড. দীনেশ সেন। মন্তব্য করেছেন, “ভাষার ভিত্তি দৃঢ় করিতে প্রথমত অনুবাদ গ্রন্থেরই আবশ্যক।' অনুবাদমূলক সাহিত্যসৃষ্টি ভিত্তি করেই মুখের ভাষা সাহিত্যের ভাষায় উন্নীত হয়ে থাকে । আবার এ ধরনের রচনা সাহিত্যকে সম্প্রসারিত হতে সাহায্য করে। শ্রেষ্ঠ ভাষা থেকে সাহিত্যিক অনুবাদের মাধ্যমে নতুন ভাষা কেবল সমৃদ্ধ শব্দভাণ্ডার ও দক্ষ প্রকাশরীতিই আয়ত্ত করে না, শ্রেষ্ঠতর ভাবকল্পনার সঙ্গেও পরিচিত ও অন্বিত হতে পারে। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অনুবাদ শাখার ভূমিকা থেকে এ কথার তাৎপর্য সহজেই অনুধাবন করা যায় ।

জ্ঞানবিজ্ঞানের বিষয়ের বেলায় শুদ্ধ অনুবাদ অভিপ্রেত। কিন্তু সাহিত্যের অনুবাদ শিল্পসম্মত হওয়া আবশ্যিক বলেই তা আক্ষরিক হলে চলে না। ভিন্ন ভাষার শব্দ সম্পদের পরিমাণ, প্রকাশক্ষমতা ও বাগভঙ্গি অনুযায়ী ভিন্ন ভাষায় ব্যক্ত কথায় সংকোচন, প্রসারণ, বর্জন ও সংযোজন আবশ্যিক হয়। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে যে অনুবাদের ধারাটি সমৃদ্ধি লাভ করে তাতে সৃজনশীল লেখকের প্রতিভা কাজ করেছিল। সে কারণে মধ্যযুগের এই অনুবাদকর্ম সাহিত্য হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে

common.content_added_and_updated_by

রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান

894
894

বাংলাদেশে মুসলমান আগমনের ফল ছিল দু ধরনের—প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ। তের শতকের মুসলমান শাসনের সূত্রপাতের পরিপ্রেক্ষিতে অবহেলিত বাংলা সাহিত্য তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতায় যে প্রাণচাঞ্চল্য লাভ করেছিল তা হল পরোক্ষ ফল। আবার মুসলমান কবিরা পনের-ষোল শতকে রোমান্টিক প্রণয়কাব্য রচনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে প্রত্যক্ষ অবদান সৃষ্টিতে সক্ষম হন। বাংলা সাহিত্যে মুসলমান শাসকগণের উদার পৃষ্ঠপোষকতায় যে নবজীবনের সূচনা হয়েছিল সে সম্পর্কে ড. মুহম্মদ এনামুল হক মন্তব্য করেছেন, “বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশে বাংলার মুসলমানদের যতখানি হাত রহিয়াছে, হিন্দুদের ততখানি নহে। এদেশের হিন্দুগণ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্মদাতা বটে; কিন্তু তাহার আশৈশব লালন পালন ও রক্ষাকর্তা বাংলার মুসলমান। স্বীকার করি, মুসলমান না হইলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য মনোরম বনফুলের ন্যায় পল্লীর কৃষককণ্ঠেই ফুটিয়া উঠিত ও বিলীন হইত, কিন্তু তাহা জগতকে মুগ্ধ করিবার জন্য উপবনের মুখ দেখিতে পাইত না, বা ভদ্র সমাজে সমাদৃত হইত না।' পরোক্ষ এই প্রভাবের সঙ্গে মধ্যযুগে মুসলমান কবিগণ মানবিক গুণসম্পন্ন রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান রচনা করে প্রত্যক্ষভাবে বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধি সাধনে অনন্য ভূমিকা রেখে গেছেন।

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের মুসলমান কবিগণের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান এই রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান বা প্রণয়কাহিনি। এই শ্রেণির কাব্য মধ্যযুগের সাহিত্যে বিশিষ্ট স্থান জুড়ে আছে। ফারসি বা হিন্দি সাহিত্যের উৎস থেকে উপকরণ নিয়ে রচিত অনুবাদমূলক প্রণয় কাব্যগুলোতে প্রথমবারের মত মানবীয় বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে। মধ্যযুগের কাব্যের ইতিহাসে ধর্মীয় বিষয়বস্তুর আধিপত্য ছিল, কোথাও কোথাও লৌকিক ও সামাজিক জীবনের ছায়াপাত ঘটলেও দেবদেবীর কাহিনির প্রাধান্যে তাতে মানবীয় অনুভূতির প্রকাশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে নি। এই শ্রেণির কাব্যে মানব-মানবীর প্রেমকাহিনি রূপায়িত হয়ে গতানুগতিক সাহিত্যের ধারায় ব্যতিক্রমের সৃষ্টি করেছে। মুসলমান কবিগণ হিন্দুধর্মাচারের পরিবেশের বাইরে থেকে মানবিক কাব্য রচনায় অভিনবত্ব দেখান। রোমান্টিক কবিরা তাঁদের কাব্যে ঐশ্বর্যবান, প্রেমশীল, সৌন্দর্যপূজারী, জীবনপিপাসু মানুষের ছবি এঁকেছেন। ড. সুকুমার সেন মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের এই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য লক্ষ করে মন্তব্য করেছেন, 'রোমান্টিক কাহিনি কাব্যে পুরানো মুসলমান কবিদের সর্বদাই একচ্ছত্রতা ছিল। মুসলমানদের ধর্মীয় আদর্শের পরিপ্রেক্ষিতে দেবদেবীর কল্পনার কোন অবকাশ ছিল না। তাই বাংলা সাহিত্যের ধর্মীয় পরিবেশের বাইরে থেকে এই কবিরা স্বতন্ত্র কাব্যধারার প্রবর্তন করেন। ধর্মীয় বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কহীন এসব কাব্যে নতুন ভাব, বিষয় ও রসের যোগান দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের সাহিত্যের গতানুগতিক ঐতিহ্যের বাইরে নতুন ভাবনা চিন্তা ও রসমাধুর্যের পরিচয় এ কাব্যধারায় ছিল স্পষ্ট। ধর্মের গণ্ডির বাইরে এই শ্রেণির জীবনরসাশ্রিত প্রণয়োপাখ্যান রচিত হয়েছিল বলে তাতে এক নতুনতর ঐতিহ্যের সৃষ্টি হয় ।

রোমান্টিক প্রণয়কাব্যগুলোতে স্থান পেয়েছে বিষয়বস্তু হিসেবে মানবীয় প্রণয়কাহিনি। এই প্রণয়কাহিনি মর্ত্যের মানুষের। ড. ওয়াকিল আহমদ মন্তব্য করেছেন, 'মানুষের প্রেমকথা নিয়েই প্রণয়কাব্যের ধারা, কবিগণ মধুকরী বৃত্তি নিয়ে বিশ্বসাহিত্য থেকে সুধারস সংগ্রহ করে প্রেমকাব্যের মৌচাক সাজিয়েছেন। বাংলা সাহিত্যে তা অভিনব ও অনাস্বাদিতপূর্ব। মুসলমান কবিরাই এ কৃতিত্বের অধিকারী।”

প্রণয়কাব্যগুলোর বিকাশ ঘটেছিল বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের পরিসরে। মুসলমান কবিগণের সামনে দৃষ্টান্ত হিসেবে ছিল হিন্দুপুরাণ পরিপুষ্ট পাঁচালি। এই একঘেঁয়ে ধর্মগীতির ধারা তাঁদের কাছে প্রধান আকর্ষণ হয়ে ওঠে নি। বরং প্রণয়কাব্য রচনায় মূল্যবান অবদান রেখে তাঁরা বাংলা কাব্যে সঞ্চার করে গেছেন এক অনাস্বাদিত রস। মঙ্গলকাব্যের কাহিনি গ্রথিত হয়েছে দেবদেবীর মাহাত্ম্য বর্ণনার উদ্দেশ্যে। কিন্তু প্রণয়কাব্যের লক্ষ্য ছিল শিল্পসৃষ্টি ও রসসঞ্চার। রোমান্টিক কথা ও কাহিনির অসাধারণ ভাঙার আরবি-ফারসি সাহিত্যের প্রত্যক্ষ অনুপ্রেরণায় বাংলা সাহিত্যে এই ধারার সৃষ্টি। আর এতে আছে জীবনের বাস্তব পরিবেশের চেয়ে ইরানের যুদ্ধামোদী রাজদরবার ও নাগর সমাজের মানসাভ্যাসের প্রতিফলন।' প্রণয়কাব্যগুলোতে উপাদান হিসেবে স্থান পেয়েছে 'মানবপ্রেম, রূপ-সৌন্দর্য, যুদ্ধ ও অভিযাত্রা, অলৌকিকতা ও আধ্যাত্মিকতা।

বাংলার মুসলমান কবিগণের মধ্যে প্রাচীনতম কবি শাহ মুহম্মদ সগীর চৌদ্দ শতকের শেষে বা পনের শতকের প্রথমে 'ইউসুফ জোলেখা' কাব্য রচনা করার মাধ্যমে এই ধারার প্রবর্তন করেন। তারপর অসংখ্য কবির হাতে এই কাব্যের বিকাশ ঘটে এবং আঠার শতক পর্যন্ত তা সম্প্রসারিত হয়। এই দীর্ঘ সময় ধরে মুসলমান কবিগণের স্বতন্ত্র অবদান ব্যাপকতা ও ঔজ্জ্বল্যে বাংলা সাহিত্যকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলা সাহিত্যকে আরবি ফারসি হিন্দি সংস্কৃত সাহিত্যের সঙ্গে সংযোগ সাধন করে যে নতুন ঐতিহ্যের প্রবর্তন করা হয় তার তুলনা নেই। পরবর্তী পর্যায়ে দোভাষী পুঁথির মধ্যে এই ধরনের বিষয় স্থান পেলেও তাতে কোন ঔজ্জ্বল্য পরিলক্ষিত হয় না।

common.content_added_by

আরাকান রাজসভায় বাংলা সাহিত্য

680
680

আরাকান রাজসভার পৃষ্ঠপোষকতায় মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের যে বিকাশ সাধিত হয়েছিল তা এদেশের সাহিত্যের ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাঙালি মুসলমান কবিরা ধর্মসংস্কারমুক্ত মানবীয় প্রণয়কাহিনি অবলম্বনে কাব্যধারার প্রথম প্রবর্তন করে এ পর্যায়ের সাহিত্যসাধনাকে স্বতন্ত্র মর্যাদার অধিকারী করেছেন। ধর্মীয় ভাবভাবনায় সমাচ্ছন্ন কাব্যজগতের পাশাপাশি মুক্ত মানবজীবনের আলেখ্য অঙ্কনের মাধ্যমে মুসলমান কবিগণ সূচনা করেছেন স্বতন্ত্র ধারার। সুদূর আরাকানে বিজাতীয় ও ভিন্ন ভাষাভাষী রাজার অনুগ্রহ লাভ করে বঙ্গভাষাভাষী যে সকল প্রতিভাশালী কবির আবির্ভাব ঘটেছিল তাঁরা তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান অবদানে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ করেছেন এবং মধ্যযুগের ধর্মনির্ভর সাহিত্যের পাশে মানবীয় প্রণয়কাহিনি স্থান দিয়ে অভিনবত্ব দেখিয়েছেন। আরাকান রাজসভার মুসলমান কবিগণকর্তৃক সৃষ্ট কাব্যরসাস্বাদনের নতুন ধারাটি বাংলা সাহিত্যের মূল প্রবাহ থেকে স্বতন্ত্র এবং ভৌগোলিক দিক থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও তা সর্বজনীন বাংলা সাহিত্যের অভ্যুদয় ক্ষেত্রে এক অবিস্মরণীয় প্রভাব বিস্তার করেছিল।

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে মুসলমান কবিগণের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের বিষয়টি পণ্ডিতদের দৃষ্টিতে আসতে বিলম্বিত হয়েছে। মুসলমান কবিরা ইসলামি বিষয় অবলম্বনে কাব্যরচনা করায় বৃহত্তর হিন্দুসমাজ তার প্রতি সমাদর দেখায় নি। ফলে হিন্দুসমাজে এসব কবির নাম অজানা ছিল। উনিশ শতকের শেষ দিকে ড. দীনেশচন্দ্র সেন প্রমুখের উদ্যোগে হাতে লেখা পুঁথি সংগ্রহের ব্যাপক প্রচেষ্টা শুরু হলেও মুসলমান কবিদের রচনা উপেক্ষিত থেকেছে। পরবর্তী কালে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মুসলমান কবিগণের পুঁথি আবিষ্কার করে মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে মুসলমান কবিদের বিস্ময়কর অবদানের বিশাল ভাণ্ডার উদ্ঘাটন করেন। বাংলাদেশের গবেষকগণের ঐকান্তিক চেষ্টায় মধ্যযুগের মুসলমান কবিগণ স্বমহিমায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন। ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক কারণে আরাকানের মুসলিম সংস্কৃতি বাংলাদেশের ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন ও স্বতন্ত্র হয়ে পড়লেও তার মানবিক চেতনাসমৃদ্ধ নতুন সাহিত্যসৃষ্টি যে স্বতন্ত্র ঐতিহ্যের উজ্জ্বলতম প্রকাশ হিসেবে দেখা। দিয়েছিল তা বাংলাদেশের গবেষকগণের ঐকান্তিকতায় সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশের বাইরে বার্মার (বর্তমান মায়ানমার) অন্তর্ভুক্ত মগের মুল্লুক আরাকানে বাংলা কাব্যচর্চার বিকাশ বিশেষ কৌতূহলের ব্যাপার বলে মনে হতে পারে। আরাকানকে বাংলা সাহিত্যে 'রোসাং' বা 'রোসাঙ্গ' নামে উল্লেখ করা হয়েছে। বার্মার উত্তর-পশ্চিম সীমায় এবং চট্টগ্রামের দক্ষিণে সমুদ্রের তীরে এর অবস্থান ছিল। আরাকানবাসীরা তাদের দেশকে 'রখইঙ্গ' নামে অভিহিত করত। কথাটি সংস্কৃত 'রক্ষ' থেকে উৎপন্ন বলে মনে করা হয়। আরাকানি ভাষায় 'রখইঙ্গ' শব্দের অর্থ দৈত্য বা রাক্ষস এবং সে কারণে দেশকে বলে 'রখইঙ্গ তঙ্গী' বা রাক্ষসভূমি। 'রখইঙ্গ' থেকেই 'রোসাঙ্গ' শব্দের উৎপত্তি। আইন-ই-আকবরিতে এদেশ 'আখরত্ব' নামে অভিহিত হয়েছে। ড. মুহম্মদ এনামুল হক 'রখইং' শব্দের ইংরেজি অপভ্রংশ 'আরাকান' বলে উল্লেখ করেছেন। আরাকানের অধিবাসীরা সাধারণভাবে বাংলাদেশে 'মগ' নামে পরিচিত। এই 'মগ' বা "মঘ শব্দটি ‘মগধ' শব্দজাত এবং শব্দটি আরাকানি ও বৌদ্ধ শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে বিবেচিত।

বাংলাদেশ মুসলমান অধিকারে আসার পূর্বে আরাকানে মুসলমানদের আগমন ঘটে। খ্রিস্টীয় আট-নয় শতকে আরাকানরাজ মহাতৈং চন্দয় (৭৮৮-৮১০) এর রাজত্বকালে যে সকল আরবিয় বণিক স্থায়ীভাবে সে দেশে বসবাস শুরু করে তাদের মাধ্যমেই সেখানে ইসলাম ধর্মের প্রচার হয়। একই সময় থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলেও ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটে। ফলে ধর্মীয় বন্ধনের মাধ্যমে এই দুই অঞ্চলের জনসাধারণের মধ্যে ছিল ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। ইতিহাসের সাক্ষ্যে প্রমাণ মিলে যে, আরাকানরাজারা দেশধর্মের প্রভাবের ঊর্ধ্বে একটি সর্বজনীন সংস্কৃতির অধিকারী হয়েছিলেন এবং সেখানে ছিল মুসলমানদের ব্যাপক প্রভাব। মেঃৎ-চৌ-মৌন-এর আমলে ১৪৩০ থেকে ১৪৩৪ সাল পর্যন্ত রোসাঙ্গ গৌড়ের সুলতান জালালুদ্দিন মহম্মদ শাহর করদরাজ্য রূপে বিদ্যমান ছিল।

‘বার্মার মূল ভূখণ্ড ও আরাকানের মধ্যেকার দুরতিক্রম্য পর্বতই আরাকানের স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীন সত্তার এবং সমুদ্রসান্নিধ্য তার সমৃদ্ধির কারণ।' আরাকান রাজ নরমিখলা বার্মারাজার ভয়ে ১৪৩৩ সালে চট্টগ্রামের রামু বা টেকনাফের শত মাইলের মধ্যে অবস্থিত 'মোহ' নামক স্থানে রাজধানী স্থাপন করেন। সে সময় থেকে ১৭৮৫ সাল পর্যন্ত তিন শ বছর ম্রোহঙ আরাকানের রাজধানী ছিল। এই ম্রোহঙ শব্দ থেকেই রোসাঙ্গ নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে অনেকের ধারণা।

রোসাঙ্গের রাজারা ছিলেন বৌদ্ধধর্মাবলম্বী। এই সময় থেকে তাঁরা নিজেদের বৌদ্ধ নামের সঙ্গে এক একটি মুসলমানি নাম ব্যবহার করতেন। তাঁদের প্রচলিত মুদ্রার একপীঠে ফারসি অক্ষরে কলেমা ও মুসলমানি নাম লেখার রীতিও প্রচলিত হয়েছিল। যে সব ইসলামি নাম তাঁরা ব্যবহার করেছেন সেগুলো হল : কলিমা শাহ্, সুলতান, সিকান্দর শাহ্, সলীম শাহ্, হুসেন শাহ প্রভৃতি। ১৪৩৪ থেকে ১৬৪৫ সাল পর্যন্ত দুই শতাধিক বৎসর ধরে আরাকান রাজগণ মুসলমানদের ব্যাপক প্রভাব স্বীকার করে নিয়েছিলেন। এই সময়ের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ড. মুহম্মদ এনামুল হক মুসলিম বাঙ্গলা সাহিত্য' গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন, 'এই শত বৎসর ধরিয়া বঙ্গের (মোগল-পাঠান) মুসলিম রাজশক্তির সহিত স্বাধীন আরাকান রাজগণের মোটেই সদ্ভাব ছিল না, অথচ তাঁহারা দেশে মুসলিম রীতি ও আচার মানিয়া আসিতেছিলেন। ইহার কারণ খুঁজিতে গেলে মনে হয়, আরাকানি মঘসভ্যতা, রাষ্ট্রনীতি ও আচারব্যবহার হইতে বঙ্গের মুসলিম সভ্যতা রাষ্ট্রনীতি ও আচারব্যবহার অনেকাংশে শ্রেষ্ঠ ও উন্নত ছিল বলিয়া আরাকানি রাজগণ বঙ্গের মুসলিম প্রভাব হইতে মুক্ত হইতে পারেন নাই।

common.content_added_by

মর্সিয়া সাহিত্য

487
487

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে 'মর্সিয়া সাহিত্য' নামে এক ধরনের শোককাব্য বিস্তৃত অঙ্গন জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। এমন কি তার বিয়োগাত্মক ভাবধারার প্রভাবে আধুনিক যুগের পরিধিতেও তা ভিন্ন আঙ্গিকে এসে উপনীত হয়েছে। শোক বিষয়ক ঘটনা অবলম্বনে সাহিত্যসৃষ্টি বিশ্ব সাহিত্যের প্রাচীন রীতি হিসেবে বিবেচিত। 'মর্সিয়া' কথাটি আরবি, এর অর্থ শোক প্রকাশ করা। আরবি সাহিত্যে মর্সিয়ার উদ্ভব নানা ধরনের শোকাবহ ঘটনা থেকে হলেও পরে তা কারবালা প্রান্তরে নিহত ইমাম হোসেন ও অন্যান্য শহীদকে উপজীব্য করে লেখা কবিতা মর্সিয়া নামে আখ্যাত হয়। আরবি সাহিত্য থেকে মর্সিয়া কাব্য ফারসি সাহিত্যে স্থান পায়। ভারতে মোগল শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে এদেশে ফারসি ভাষায় মর্সিয়া প্রচলিত হয় এবং পরে উর্দু ভাষাতেও তার প্রসার ঘটে। এসব আদর্শ অনুসরণ করে বাংলা ভাষায় মর্সিয়া সাহিত্যের প্রচলন হয়। ভারতে বিভিন্ন ভাষায় মর্সিয়া সাহিত্যের প্রচলনের পিছনে পারস্য দেশীয় বণিক, দরবেশ, পণ্ডিত, কবি প্রমুখের অনুপ্রেরণা বিশেষ ভাবে কাজ করেছে।

এসব কাব্যের কোন কোনটি যুদ্ধ কাব্য হিসেবে বিবেচনার যোগ্য। যুদ্ধের কাহিনি নিয়ে কোন কোনটি পরিণতিতে চরম বিয়োগাত্মক রূপ গ্রহণ করেছে। শেষে কাব্য হয়ে উঠেছে মর্সিয়া বা শোক কাব্য। কোথাও কোথাও যুদ্ধকাহিনি নিয়ে রচিত হয়েছে জঙ্গনামা। কারবালার বিষাদময় কাহিনিতে যুদ্ধের ঘটনা যত প্রাধান্য পেয়েছে তার চেয়ে বেশি পেয়েছে শোকের অনুভূতি। এ প্রসঙ্গে ড. গোলাম সাকলায়েন মন্তব্য করেছেন, ‘জঙ্গনামা বা যুদ্ধকাহিনি-সংবলিত কাব্যগুলি মুসলিম কবিসৃষ্ট সাহিত্যধারার মধ্যে নানাকারণে বৈশিষ্ট্যের দাবি করতে পারে। কারবালা-যুদ্ধভিত্তিক কাব্যনির্মাণ সেকালের কবিদের কাছে ফ্যাশান হিসাবে গণ্য হতো এবং সেটা প্রলোভনের ব্যাপারও ছিল। তার কারণ সুস্পষ্ট। মুহরম মাস এলেই বাংলার গ্রামে-গঞ্জে মুসলমানদের মন বেদনাকরুণ পুথিপাঠের আসর বসাতো আর সেইজন্য কবিরাও কারবালার করুণ কাহিনি নিয়ে শহীদে কারবালা, জঙ্গনামা, হানিফার লড়াই ইত্যাদি কাব্য লেখার তাগিদ বোধ করতেন।'

মর্সিয়া কাব্য বা শোক কাব্যের পটভূমিকা বর্ণনা করতে গিয়ে ড. আহমদ শরীফ লিখেছেন, 'যুদ্ধ কাব্যের মধ্যে কারবালাযুদ্ধ কাব্যই ষোল-সতের শতক থেকে বাংলার মুসলিম সমাজে বিশেষ জনপ্রিয় হতে থাকে। তার কারণ দাক্ষিণাত্যের বাহমনিরাজ্যে- বিজাপুরে-বিদরে-বেরারে-গোলকুণ্ডায়-আহমদনগরে ইরানি বংশজ শিয়ারাই সুলতান ও শাসকগোষ্ঠী ছিলেন। শিয়ারা কারবালা যুদ্ধকে স্মরণ করা অবশ্য পালনীয় ধর্মীয় পার্বণ বলেই জানে। চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে দাক্ষিণাত্যের শিয়াদের ও ইরানি শিয়াদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল, সে সূত্রে ষোল শতক থেকেই চট্টগ্রাম অঞ্চলে 'মাতুল হোসেন' (হোসেন নিধন) কাব্য রচিত হতে থাকে, তারপর শিয়া সাক্ষাতী-শাসিত ইরানে আশ্রিত হুমায়ুনের দিল্লি প্রত্যাবর্তনের পরে দরবারসূত্রে ইরানের ও ইরানীয় প্রভাব প্রবল ও সর্বব্যাপী হতে থাকে। আবার আঠার শতকে সাফাতী রাজত্বের অবসানে ভারতে বাংলায় আশ্রিত শিয়া ইরানিদের প্রভাবে মুহররম তাজিয়াদি সহ একটি জনপ্রিয় জাতীয় পার্বণের মর্যাদায় স্থায়ী প্রতিষ্ঠা পায়।

মোগল আমলে মুর্শিদাবাদ, ঢাকা প্রভৃতি অঞ্চলে শিয়া শাসক ও আমীর ওমরাগণ শাসনকার্য উপলক্ষে এসে বসবাস করতেন। মুসলমানদের মধ্যে শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা মর্সিয়া সাহিত্য বিকাশের প্রেরণা দান করেন। তৎকালীন শিয়া শাসকরা কবিগণকে উৎসাহ প্রদান করতেন। অনেক কবি মুর্শিদাবাদের নবাবের মনোরঞ্জনের জন্য মর্সিয়া রচনায় আত্মনিয়োগ করতেন।

মর্সিয়া সাহিত্যের উৎপত্তি সম্পর্কে ড. আহমদ শরীফ মন্তব্য করেছেন, 'যদিও ইমাম হাসান-হোসেনের প্রতি সমকালে হযরত আলীর ভক্ত-অনুগতদের ছাড়া আর কারও তেমন সমর্থন সহানুভূতি ছিল না, তবু কালক্রমে আল্লাহর বান্দা ও রসুলের নাতি বলেই মুসলিম মাত্রই হাসান-হোসেনের ভক্ত-সমর্থক এবং মুয়াবিয়া-এজিদের নিন্দুক হয়ে ওঠে। যেহেতু পরবর্তী কালে মুসলিমমাত্রই রসুলের আত্মীয় বলে তাঁর হতভাগ্য দৌহিত্রদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে, অর্থাৎ পরাজিত পক্ষের সমর্থক হয়ে যায়, যেহেতু নায়ক বিজয়গৌরব হীন, সেহেতু তার প্রধান রস করুণ হতেই হয়—শোকের বা কান্নার আধার বলেই এ বিলাপ-প্রধান সাহিত্যের নাম 'মর্সিয়া সাহিত্য বা শোক সাহিত্য।'

মর্সিয়া সাহিত্যের উৎপত্তি কারবালার বিষাদময় কাহিনি ভিত্তি করে হলেও তার মধ্যে অন্যান্য শোক ও বীরত্বের কাহিনির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। মুসলিম সাম্রাজ্যের খলিফাগণের বিজয় অভিযানের বীরত্বব্যঞ্জক কাহিনিও এই শ্রেণির কাব্যে স্থান পেয়েছে। 'জঙ্গনামা' নামে বাংলা সাহিত্যে এ ধরনের কাব্য রচিত হয়েছে। মর্সিয়া সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ড. গোলাম সাকলায়েন তাঁর 'বাংলায় মর্সিয়া সাহিত্য' গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন, 'এই কাব্যগুলির মাধ্যমে বাঙালি মুসলমান তাঁহাদের প্রাণের কথা প্রতিধ্বনিত হইতে শুনিলেন ও তাঁহারা ইহার মারফত অতীত ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করিতে শিখিলেন। বাংলা মর্সিয়া কাব্যগুলি প্রধানত অনুবাদ সাহিত্য হিসাবেই গড়িয়া উঠে। বাঙালি কবিগণ যদিও মূলত ফারসি ও উর্দু কাব্যগুলির ভাবকল্পনা ও ছায়া আশ্রয় করিয়া তাহাদের কাব্যাদি রচনা করিয়াছিলেন তথাপি এগুলির মধ্যে তাঁহাদের মৌলিকতার যথেষ্ট পরিচয় বিদ্যমান। ফলে এই কাব্যগুলি এক প্রকার অভিনব সৃষ্টি হইয়া দাঁড়াইয়াছে। সুদূর আরব পারস্যের মানুষের কাহিনি কাব্যাকারে লিপিবদ্ধ করিতে গিয়া কবিগণ যে বাগভঙ্গি ও পরিকল্পনার আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছেন তাহা অনেক ক্ষেত্রে অবাস্তব ও উদ্ভট হইয়াছে। ইহাতে মনে হয়, বাঙালি কবিগণ মাটির প্রভাব অতিক্রম করিতে পারেন নাই।'

common.content_added_by

লোকসাহিত্য

499
499

লোকসাহিত্য মৌখিক ধারার সাহিত্য যা পুরানো ঐতিহ্য ও সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতাকে ভিত্তি করে রচিত হয়। লোকসাহিত্য লোকসংস্কৃতির একটি জীবন্ত ধারা; এর মধ্য দিয়ে জাতির আত্মার স্পন্দন শোনা যায়। 

তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একে ‘জনপদের হূদয়-কলরব’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। লোকসাহিত্যকে প্রধানত লোকসঙ্গীত, গীতিকা, লোককাহিনী, লোকনাট্য, ছড়া, মন্ত্র, ধাঁধা ও প্রবাদ এই আটটি শাখায় ভাগ করা যায়…আরো পড়ুন 

common.content_added_by

ছড়া

441
441
common.please_contribute_to_add_content_into ছড়া.
common.content

লোকগীতি/লোকগান

481
481
common.please_contribute_to_add_content_into লোকগীতি/লোকগান.
common.content

গীতিকা (Ballad)

443
443
common.please_contribute_to_add_content_into গীতিকা (Ballad).
common.content

নাথগীতিকা/নাথসাহিত্য

456
456
common.please_contribute_to_add_content_into নাথগীতিকা/নাথসাহিত্য.
common.content

মৈমনসিংহ গীতিকা

416
416
common.please_contribute_to_add_content_into মৈমনসিংহ গীতিকা.
common.content

পূর্ববঙ্গ গীতিকা

418
418
common.please_contribute_to_add_content_into পূর্ববঙ্গ গীতিকা.
common.content

ডাক ও খনার বচন

460
460
common.please_contribute_to_add_content_into ডাক ও খনার বচন.
common.content

লোককথা

458
458
common.please_contribute_to_add_content_into লোককথা.
common.content

কবিগান

423
423
common.please_contribute_to_add_content_into কবিগান.
common.content

কবিওয়ালা ও শায়ের

534
534
common.please_contribute_to_add_content_into কবিওয়ালা ও শায়ের.
common.content

পুঁথিসাহিত্য

396
396
common.please_contribute_to_add_content_into পুঁথিসাহিত্য.
common.content

টপ্পাগান

371
371
common.please_contribute_to_add_content_into টপ্পাগান.
common.content

পাঁচালি গান

434
434
common.please_contribute_to_add_content_into পাঁচালি গান.
common.content

বাউল গান ও লালন শাহ

427
427
common.please_contribute_to_add_content_into বাউল গান ও লালন শাহ.
common.content

অবক্ষয় যুগ/যুগ সন্ধিক্ষণ (১৭৬০-১৮৬০ খ্রি.)

1.7k
1.7k

অবক্ষয় যুগ:

১। ১৭৬০সালে ভারতচন্দ্র রায়ের মৃত্যুুর পর থেকে আধুনিকতার যথার্থ বিকাশকাল পর্যন্ত(১৮৬০সালে   মাইকেলের আবির্ভাব) অর্থাৎ ১৭৬০ থেকে ১৮৬০ সাল পর্যন্ত সময়ের বাংলা সাহিত্য সৃষ্টির স্বল্পতা,পরিবেশ-পরিস্থিতি ও বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে এ পর্যায়কে একটি স্বতন্ত্র যুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

২। কেউ কেউ এ যুগের পরিধি ১৭৬০ থেকে ১৮৩০ সাল অর্থাৎ কবি ঈশ্বরগুপ্তের আবির্ভাব-পূর্বকাল পর্যন্ত নির্ধারণ করার পক্ষপাতী। মধ্যযুগের শেষ আর আধুনিক যুগের শুরুর এ সময়টাকে ‘অবক্ষয় যুগ’ বলে। কেউ কেউ এ সময়টাকে ‘যুগ সন্ধিক্ষণ’ নামেও অভিহিত করেন।

৩। মধ্য ও আধুনিক যুগের মধ্যবর্তী এ একশত বছরের সাহিত্য নিদর্শন বাংলা সাহিত্যের দুই যুগের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করেছে।

৪। অবক্ষয় যুগ তথা যুগ সন্ধিক্ষণের ফসল হিন্দু কবিওয়ালাদের কবিগান আর মুসলমান শায়েরদের দোভাষী পুঁথি।

common.content_added_by

বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ (১২০১-১৩৫০)

648
648

মুসলমান শাসনের সূত্রপাতে দেশে রাজনৈতিক অরাজকতার অনুমান করে কোন কোন পণ্ডিত অন্ধকার যুগ চিহ্নিত করেছেন। এ ধরনের ইতিহাসকারেরা বিজাতীয় বিরূপতা নিয়ে মনে করেছেন, 'দেড় শ দু শ কিংবা আড়াই শ বছর ধরে হত্যাকাণ্ড ও অত্যাচার চালানো হয় কাফেরদের ওপর। তাদের জীবন-জীবিকা এবং ধর্ম-সংস্কৃতির ওপর চলে বেপরোয়া ও নির্মম হামলা। উচ্চবিত্ত ও অভিজাতদের মধ্যে অনেকেই মরল, কিছু পালিয়ে বাঁচল, আর যারা এর পরেও মাটি কামড়ে টিকে রইল, তারা ত্রাসের মধ্যেই দিনরজনী গুণে গুণে রইল। কাজেই, ধন জন ও প্রাণের নিরাপত্তা যেখানে অনুপস্থিত, যেখানে প্রাণ নিয়ে সর্বক্ষণ টানাটানি, সেখানে সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার বিলাস অসম্ভব । ফলে সাহিত্য-সংস্কৃতির উন্মেষ-বিকাশের কথাই ওঠে না।' ড. সুকুমার সেনের মতে, “মুসলমান অভিযানে দেশের আক্রান্ত অংশে বিপর্যয় শুরু হয়েছিল। গোপাল হালদারের মতে, তখন 'বাংলার জীবন ও সংস্কৃতি তুর্ক আঘাতে ও সংঘাতে, ধ্বংসে ও অরাজকতায় মূর্ছিত অবসন্ন হয়েছিল। খুব সম্ভব, সে সময়ে কেউ কিছু সৃষ্টি করবার মত প্রেরণা পায় নি।' কেউ মনে করেন এ সময়ে 'বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বারম্বার হরণকারী বৈদেশিক তুর্কিদের নির্মম অভিযান প্রবল ঝড়ের মত বয়ে যায় এবং প্রচণ্ড সংঘাতে তৎকালীন বাংলার শিক্ষা সাহিত্য সভ্যতা সমস্তই বিনষ্ট ও বিলুপ্ত হয়ে যায়। ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, 'শারীরিক বল, সমরকুশলতা ও বীভৎস হিংস্রতার দ্বারা মুসলমানেরা অমানুষিক বর্বরতার মাধ্যমে বঙ্গসংস্কৃতির ক্ষেত্রে তামসযুগের সৃষ্টি করে।' তিনি মনে করেন, 'বর্বর শক্তির নির্মম আঘাতে বাঙালি চৈতন্য' হারিয়েছিল এবং পাঠান, খিলজি, বলবন, মামলুক, হাবশি সুলতানদের চণ্ডনীতি, ইসলামি ধর্মান্ধতা ও রক্তাক্ত সংঘর্ষে বাঙালি হিন্দুসম্প্রদায় কূর্মবৃত্তি অবলম্বন করে কোন প্রকারে আত্মরক্ষা করছিল।' তিনি আরও লিখেছেন, 'তুর্কি রাজত্বের আশি বছরের মধ্যে বাংলার হিন্দুসমাজে প্রাণহীন অখণ্ড জড়তা ও নাম-পরিচয়হীন সন্ত্রাস বিরাজ করিতেছিল ।...কারণ সেমীয় জাতির মজ্জাগত জাতিদ্বেষণা ও ধর্মীয় অনুদারতা।...১৩শ শতাব্দীর প্রারম্ভেই বাংলাদেশ মুসলমান শাসনকর্তা, সেনাবাহিনী ও পীর ফকির গাজীর উৎপাতে উৎসন্নে যাইতে বসিয়াছিল। শাসনকর্তৃগণ পরাভূত হিন্দুকে কখনও নির্বিচারে হত্যা করিয়া, কখনও বা বলপূর্বক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করিয়া এদেশে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি করিতে আরম্ভ করেন। ... হিন্দুকে হয় স্বধর্মত্যাগ, না হয় প্রাণত্যাগ, ইহার যে কোন একটি বাছিয়া লইতে হইত।' ভূদেব চৌধুরীর মতে, *বাংলার মাটিতে রাজ্যলিপ্সা, জিঘাংসা, যুদ্ধ, হত্যা, আততায়ীর হস্তে মৃত্যু— নারকীয়তার যেন আর সীমা ছিল না। সঙ্গে সঙ্গে বৃহত্তর প্রজাসাধারণের জীবনের উৎপীড়ন, লুণ্ঠন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ধর্মহানির সম্ভাবনা উত্তরোত্তর উৎকট হয়ে উঠেছে। স্বভাবতই জীবনের এই বিপর্যয় লগ্নে কোন সৃজনকর্ম সম্ভব হয় নি।' ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় মুসলমানদের সম্পর্কে লিখেছেন, 'শারীরিক বল, সমরকুশলতা ও বীভৎস হিংস্রতার দ্বারা বাংলা ও তাহার চতুষ্পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ইসলামের অর্ধচন্দ্রখচিত পতাকা প্রোথিত হইল। খ্রিঃ ১৩শ হইতে ১৫শ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত—প্রায় দুই শত বছর ধরিয়া এই অমানুষিক বর্বরতা রাষ্ট্রকে অধিকার করিয়াছিল; এই যুগ বঙ্গসংস্কৃতির তামসযুগ, য়ুরোপের মধ্যযুগ The Dark Age-এর সহিত সমতুলিত হইতে পারে।' এ সব পণ্ডিত মুসলমান শাসকদের অরাজকতাকেই অন্ধকার যুগ সৃষ্টির কারণ হিসেবে বিবেচনা করেছেন।

common.content_added_by

বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ (১৮০১ খ্রি-বর্তমান)

1k
1k

বাংলা সাহিত্যে আধুনিক যুগের শুরু প্রায় সুনিশ্চিতভাবেই ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ধরা হয়। এ যুগ নানা দিক থেকে বাংলা সাহিত্যের বিকাশ, সমৃদ্ধি হওয়ার যুগ; বিশ্ব দরবারে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সুবিখ্যাত ও সমাদৃত হওয়ার যুগ।

common.content_added_by

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

বাংলা গদ্যের উৎপত্তি

471
471
common.please_contribute_to_add_content_into বাংলা গদ্যের উৎপত্তি.
common.content

শ্রীরামপুর মিশন ও ছাপাখান

496
496
common.please_contribute_to_add_content_into শ্রীরামপুর মিশন ও ছাপাখান.
common.content

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ

438
438
common.please_contribute_to_add_content_into ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ.
common.content

হিন্দু কলেজ ও ইয়ংবেঙ্গল

506
506
common.please_contribute_to_add_content_into হিন্দু কলেজ ও ইয়ংবেঙ্গল.
common.content

মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটি

409
409
common.please_contribute_to_add_content_into মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটি.
common.content

বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমাজ

457
457
common.please_contribute_to_add_content_into বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমাজ.
common.content

ঢাকা মুসলিম সাহিত্য সমাজ

414
414
common.please_contribute_to_add_content_into ঢাকা মুসলিম সাহিত্য সমাজ.
common.content

বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি

537
537
common.please_contribute_to_add_content_into বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি.
common.content

বাংলা একাডেমি

441
441
common.please_contribute_to_add_content_into বাংলা একাডেমি.
common.content

বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন বা আদি যুগ (৬৫০-১২০০ খ্রি)

406
406

বাংলা সাহিত্যের সামগ্রিক ইতিহাসকে তিন যুগে ভাগ করা হয়েছে। এর প্রথম যুগের নাম প্রাচীন যুগ। তবে কেউ কেউ আরও কয়টি নামে এ যুগকে অভিহিত করেছেন। সে নামগুলো হল : আদ্যকাল, গীতিকবিতার যুগ, হিন্দু-বৌদ্ধ যুগ, আদি যুগ, প্রাক-তুর্কি যুগ, গৌড় যুগ ইত্যাদি। তবে প্রাচীন যুগ নামটির ব্যবহার ব্যাপক ও যথার্থ যুক্তিসঙ্গত ।

বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের একমাত্র নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন চর্যাপদ। চর্যাপদের প্রায় সমসাময়িক কালে বাংলাদেশে যে সব সংস্কৃত-প্রাকৃত-অপভ্রংশ সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছিল সেগুলো প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের প্রত্যক্ষ উপকরণ নয়। বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের রচিত চর্যাপদগুলো সম্পর্কে ১৯০৭ সালের আগে কোন তথ্যই জানা ছিল। না। ১৮৮২ সালে প্রকাশিত Sanskrit Buddhist Literature in Nepal গ্রন্থে রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র সর্বপ্রথম নেপালের বৌদ্ধতান্ত্রিক সাহিত্যের কথা প্রকাশ করেন

common.content_added_by

বাংলা সংবাদপত্র

539
539

পৃথিবীর প্রথম সংবাদপত্র ১৫৬০ সালে জার্মান থেকে প্রকাশিত হয়। ১৭০২ সালে ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত হয় বিশ্বের প্রথম দৈনিক পত্রিকা। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ সরকার ১৭৯৫ সালে পত্র-পত্রিকায় প্রথম সেন্সর প্রথা চালু করে।

প্রশ্নঃ ভারতবর্ষের প্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্রের নাম কী?

 উঃ. জেমস্ অগাস্টাস হিকি সম্পাদিত ‘বেঙ্গল গেজেট’( ১৭৮০)। এটি ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়।

প্রশ্নঃ. বাংলা ভাষার প্রথম সাময়িকপত্র কোনটি?

উঃ. জন ক্লার্ক মার্শম্যান সম্পাদিত 'দিগদর্শন' (১৮১৮)। 

প্রশ্নঃ. বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্র কোনটি?

উঃ. জন ক্লার্ক মার্শম্যান সম্পাদিত 'সমাচার দর্পণ' (১৮১৮)। এটি সাপ্তাহিক হিসেবে প্রকাশিত হয়।

প্রশ্নঃ. বাঙালি কর্তৃক প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্র কোনটি?

উঃ. গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য সম্পাদিত 'বাঙ্গাল গেজেট' (১৮১৮)।

প্রশ্নঃ. বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র কোনটি?

উঃ. ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত সম্পাদিত 'সংবাদ প্রভাকর'। সাপ্তাহিক হিসেবে ১৮৩১ সালে এবং দৈনিক হিসেবে ১৮৩৯ সালে প্রকাশিত হয়।

প্রশ্নঃ. মুসলমান কর্তৃক প্রকাশিত প্রথম পত্রিকা কোনটি? 

উঃ. শেখ আলিমুল্লাহ সম্পাদিত 'সমাচার সভারাজেন্দ্র (১৮৩১)।

প্রশ্ন. বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্র কোনটি?

উঃ. গুরুচরণ রায় সম্পাদিত ‘রংপুর বার্তাবহ” (১৮৪৭)।

প্রশ্নঃ. ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্র কোনটি? 

উঃ. কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার সম্পাদিত 'ঢাকা প্রকাশ (১৮৬১)।

common.content_added_by

বঙ্গদর্শন

446
446
common.please_contribute_to_add_content_into বঙ্গদর্শন.
common.content

কল্লোল

470
470
common.please_contribute_to_add_content_into কল্লোল.
common.content

সমকাল

393
393
common.please_contribute_to_add_content_into সমকাল.
common.content

বঙ্গদূত

427
427
common.please_contribute_to_add_content_into বঙ্গদূত.
common.content

বাংলা সাহিত্যের শাখা

2.2k
2.2k

চর্যাপদ

চর্যাপদ পুঁথির একটি পৃষ্ঠা

চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম কাব্য তথা সাহিত্য নিদর্শন। নব্য ভারতীয় আর্যভাষারও প্রাচীনতম রচনা এটি। খ্রিস্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত এই গীতিপদাবলির রচয়িতারা ছিলেন সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ। বৌদ্ধ ধর্মের গূঢ়ার্থ সাংকেতিক রূপবন্ধে ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যেই তারা পদগুলি রচনা করেছিলেন। বাংলা সাধন সংগীতের শাখাটির সূত্রপাতও এই চর্যাপদ থেকেই। এই বিবেচনায় এটি ধর্মগ্রন্থ স্থানীয় রচনা। একই সঙ্গে সমকালীন বাংলার সামাজিক ও প্রাকৃতিক চিত্রাবলি এই পদগুলিতে উজ্জ্বল। এর সাহিত্যগুণ আজও চিত্তাকর্ষক। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থশালা থেকে চর্যার একটি খণ্ডিত পুঁথি উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে চর্যাপদের সঙ্গে বাংলা ভাষার অনস্বীকার্য যোগসূত্র বৈজ্ঞানিক যুক্তিসহ প্রতিষ্ঠিত করেন। চর্যার প্রধান কবিগণ হলেন লুইপাদ, কাহ্নপাদ, ভুসুকুপাদ, শবরপাদ প্রমুখ।

 

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন বড়ুচণ্ডীদাস নামক জনৈক মধ্যযুগীয় কবি রচিত রাধাকৃষ্ণের প্রণয়কথা বিষয়ক একটি আখ্যানকাব্য। ১৯০৯ সালে বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ বাঁকুড়া জেলার কাঁকিল্যা গ্রাম থেকে এই কাব্যের একটি পুথি আবিষ্কার করেন। ১৯১৬ সালে তারই সম্পাদনায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন নামে পুথিটি প্রকাশিত হয়। যদিও কারও কারও মতে মূল গ্রন্থটির নাম ছিল শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ। কৃষ্ণের জন্ম, বৃন্দাবনে রাধার সঙ্গে তার প্রণয় এবং অন্তে বৃন্দাবন ও রাধা উভয়কে ত্যাগ করে কৃষ্ণের চিরতরে মথুরায় অভিপ্রয়াণ – এই হল শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের মূল উপজীব্য। আখ্যানভাগ মোট ১৩ টি খণ্ডে বিভক্ত। পুথিটি খণ্ডিত বলে কাব্যরচনার তারিখ জানা যায় না। তবে কাব্যটি আখ্যানধর্মী ও সংলাপের আকারে রচিত বলে প্রাচীন বাংলা নাটকের একটি আভাস মেলে এই কাব্যে। গ্রন্থটি স্থানে স্থানে আদিরসে জারিত ও গ্রাম্য অশ্লীলতাদোষে দুষ্ট হলেও আখ্যানভাগের বর্ণনানৈপূণ্য ও চরিত্রচিত্রণে মুন্সিয়ানা আধুনিক পাঠকেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করে। চর্যাপদের পর ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ বাংলা ভাষার দ্বিতীয় প্রাচীনতম আবিষ্কৃত নিদর্শন। বাংলা ভাষাতত্ত্বের ইতিহাসে এর গুরুত্ব তাই অপরিসীম। অপরদিকে এটিই প্রথম বাংলায় রচিত কৃষ্ণকথা বিষয়ক কাব্য। মনে করা হয়, এই গ্রন্থের পথ ধরেই বাংলা সাহিত্যে বৈষ্ণব পদাবলির পথ সুগম হয়।

 

মধ্যযুগীয় বাংলা অনুবাদ সাহিত্য

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের বিস্তৃত অঙ্গন জুড়ে অনুবাদ সাহিত্যের চর্চা হয়েছিল এবং পরিণামে এ সাহিত্যের শ্রীবৃদ্ধিসাধনে অনুবাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অপরিসীম।সকল সাহিত্যের পরিপুষ্টিসাধনে অনুবাদমূলক সাহিত্যকর্মের বিশিষ্ট ভূমিকা আছে।বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রেও এর ব্যতীক্রম পরিলক্ষিত হয় না।"সমৃদ্ধতর নানা ভাষা থেকে বিচিত্র নতুন ভাব ও তথ্য সঞ্চয় করে নিজ নিজ ভাষার বহন ও সহন ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলাই অনুবাদ সাহিত্যের প্রাথমিক প্রবণতা।"ভাষার মান বাড়ানোর জন্য ভাষার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হয়,আর তাতে সহায়তা করে অনুবাদকর্ম।উন্নত সাহিত্য থেকে ঋণ গ্রহণ করা কখনো অযৌক্তিক বিবেচিত হয়নি।উন্নত ও সমৃদ্ধ ভাষা-সাহিত্যের সান্নিধ্যে এলে বিভিন্ন বিষয়ের প্রতিশব্দ তৈরি করা সম্ভব হয়,অন্য ভাষা থেকে প্রয়োজনীয় শব্দও গ্রহণ করা যায়। অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ বক্তব্য আয়ত্তে আসে।ভাষা ও সাহিত্যের যথার্থ সমৃদ্ধির লক্ষ্যে শ্রেষ্ঠ ও সম্পদশালী ভাষায় উৎকর্ষপূর্ণ সাহিত্যসৃষ্টির অনুবাদ একটি আবশ্যিক উপাদান।

জ্ঞানবিজ্ঞানের বিষয়ের বেলায় শুদ্ধ অনুবাদ অভিপ্রেত।কিন্তু সাহিত্যের অনুবাদ শিল্পসম্মত হওয়া আবশ্যিক বলেই তা আক্ষরিক হলে চলে না। ভিন্ন ভাষার শব্দ সম্পদের পরিমাণ, প্রকাশক্ষমতা ও বাগভঙ্গি অনুযায়ী ভিন্ন ভাষায় ব্যক্ত কথায় সংকোচন, প্রসারণ, বর্জন ও সংযোজন আবশ্যিক হয়। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে যে অনুবাদের ধারাটি সমৃদ্ধি লাভ করে তাতে সৃজনশীল লেখকের প্রতিভা কাজ করেছিল।সে কারণে মধ্যযুগের এই অনুবাদকর্ম সাহিত্য হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে।

বুলিকে লেখ্য ভাষার তথা সাহিত্যের ভাষায় উন্নীত করার সহজ উপায় হচ্ছে অনুবাদ।অন্যভাষা থেকে সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান প্রভৃতি জ্ঞান-মননের বিভিন্ন বিসয় অনুবাদ করতে হলে সে বিষয়ক ভাব-চিন্তা-বস্তুর প্রতিশব্দ তৈরী করা অনেক সময় সহজ হয়,তৈরী সম্ভব না হলে মূল ভাষা থেকে শব্দ গ্রহণ করতে হয়।এভাবেই সভ্য জাতির ভাষা-সাহিত্য মাত্রই গ্রহণে-সৃজনে ঋদ্ধ হয়েছে।এ ঋণে লজ্জা নেই।যে জ্ঞান বা অনুভব আমাদের দেশে পাঁচশ বছরেও লভ্য হত না,তা আমরা অনুবাদের মাধ্যমে এখনই পেতে পারি।যেমনঃ বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থগুলো,শ্রেষ্ঠ দার্শনিক চিন্তাগুলো,বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো,সমাজতত্ত্বগুলো-মানবচিন্তার শ্রেষ্ঠ সম্পদগুলো এভাবে আয়ত্তে আসে।

চৌদ্দ পনেরো শতকে আমাদের লেখ্য সাহিত্যও তেমনি সংস্কৃত-অবহটঠ থেকে ভাব-ভাষা-ছন্দ গ্রহণ করেছে,পুরাণাদি থেকে নিয়েছে বর্ণিত বিষয় ও বর্ণনাভঙ্গি এবং রামায়ণ-মহাভারত-ভাগবত-প্রণয়োপাখ্যান-ধর্মশাস্ত্র প্রভৃতি সংস্কৃত-ফারসী-আরবী-হিন্দি থেকে অনূদিত হয়েছে আমাদের ভাষায়।এভাবেই আমাদের লিখিত বা শিষ্ট বাংলা ভাষাসাহিত্যের বুনিয়াদ নির্মিত হয়েছিল।

আদর্শ অনুবাদকের একটা বিশেষ যোগ্যতা অপরিহার্য। ভাষান্তর করতে হলে উভয় ভাষার গতিপ্রকৃতি, বাকভঙ্গি ও বাকবিধির বিষয়ে অনুবাদকের বিশেষ ব্যুৎপত্তির দরকার।তাহলেই ভাষান্তর নিখুঁত ও শিল্পগুণান্বিত হয়।তাই ভাষাবিদ কবি ছাড়া অন্য কেউ কাব্যের সুষ্ঠু অনুবাদে সমর্থ হয় না।মধ্যযুগে অ-কবিও অনুবাদ কর্মে উৎসাহী ছিলেন।তাই অনুবাদে নানা ত্রুটি দেখা যায়।এছাড়া এঁরা নিজেদের সামর্থ্য রুচিবুদ্ধি ও প্রয়োজন অনুসারে মূল পাঠের গ্রহণ-বর্জন ও সংক্ষেপ করেছেন।এজন্য মধ্যযুগের বাংলা ভাষায় কোন তথাকথিত অনুবাদই নির্ভরযোগ্য নয়।সবগুলোই কিছু কায়িক,কিছু ছায়িক,কিছু ভাবিক অনুবাদ এবং কিছু স্বাধীন রচনা।কাব্য সাহিত্যের অনুবাদ আক্ষরিক হতেই পারে না।

 

বৈষ্ণব পদাবলি

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্য একটি বিস্তৃত কালপর্ব জুড়ে বিন্যস্ত। প্রাকচৈতন্যযুগে বিদ্যাপতি,চণ্ডীদাস এবং চৈতন্য ও চৈতন্য পরবর্তী যুগে গোবিন্দদাস,জ্ঞানদাস বিশেষভাবে খ্যাতিমান হলেও আরও বহু কবি বৈষ্ণব ধর্মাশ্রিত পদ লিখেছেন। তবে ধর্মবর্ণনির্বিশেষে পদাবলি চর্চার এই ইতিহাস চৈতন্যের ধর্মান্দোলনের পরই ছড়িয়েছিল। বৈষ্ণব পদাবলির মূল বিষয়বস্তু হল কৃষ্ণের লীলা এবং মূলত মাধুর্যলীলা। অবশ্য এমন নয় যে কৃষ্ণের ঐতিহ্যলীলার চিত্রণ হয়নি। তবে সংখ্যাধিক্যের হিসেবে কম। আসলে বৈষ্ণব পদাবলির মধ্যে রাধাকৃষ্ণের প্রণয়লীলা স্তরে স্তরে এমন গভীর ও বিস্তৃতভাবে বর্ণিত হয়েছে যে অনেকের ধারণা বাংলা সাহিত্যে এ আসলে একটি রোমান্টিক প্রণয়কাব্যের নমুনা। বস্তুত পৃথিবীর অন্যান্য মধ্যযুগীয় সাহিত্যের মতনই এও বিশেষভাবে ধর্মাশ্রিত ও বৈষ্ণব ধর্মের তত্ত্ববিশ্বের উপরে প্রতিষ্ঠিত। তবে যে কোন ধর্মের মতনই বৈষ্ণব ধর্মতত্ত্বেরও আনেকগুলি ঘরানা ছিল। এর মধ্যে তাত্ত্বিকভাবে সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিল বৃন্দাবনের বৈষ্ণবগোষ্ঠী। এদের ধর্মীয় দর্শনের প্রভাব পড়েছে চৈতন্যপরবর্তী পদকর্তাদের রচনায়। প্রাকচেতন্যযুগের পদাবলিকারদের রচনায় তন্ত্র বা নানা সহজিয়া সাধনপন্থার প্রভাব রয়েছে। ভারতীয় সাধনপন্থা মূলত দ্বিপথগামী- স্মার্ত ও তান্ত্রিকী। শশীভূষণ দাশগুপ্ত এই দুই পথকেই বলেছেন "উল্টাসাধন" তন্ত্রও হল এই উল্টাসাধনই। দেহভান্ডই হল ব্রহ্মান্ড এই বিশ্বাস সহজিয়া ও তান্ত্রিক পন্থীদের। সেই কারণে চন্ডীদাস ও বিদ্যাপতির সঙ্গে জ্ঞানদাস বা গোবিন্দদাসদের মূলগত প্রভেদ রয়েছে। বৃন্দাবনের বৈষ্ণবগোষ্ঠী যে তত্ত্ববিশ্ব নির্মাণ করলেন তাতে কৃষ্ণলীলার মূল উৎস ভাগবত ও আন্যান্য পুরাণ হলেও,আসলে কৃষ্ণের বৃন্দাবনলীলা, সর্বোপরি রাধাকৃষ্ণের প্রণয়লীলা প্রাধান্য পেল। কেননা এঁদের মতে কৃষ্ণের দুই রূপ। প্রথমটি ঐশ্বর্যস্বরূপ ঈশ্বর, যিনি সর্বশক্তিমান। কৃষ্ণের ঘনিষ্ঠ প্রতিটি লোক সে তার মাতা-পিতা বা, স্ত্রী বা সখা যেই হোক না কেন- কৃষ্ণকে তারা ভগবান বলে জানেন, সেভাবেই তাকে দেখেন। দ্বিতীয়টি হল মাধুর্যস্বরূপ কৃষ্ণ। এইরূপে কৃষ্ণের লীলার যে বিচিত্র প্রকাশ অর্থাৎ প্রভুরূপে,পুত্ররূপে,সখারূপে, প্রেমিকরূপে সর্বোপরি রাধামাধবরূপে তাতে কোথাও কৃষ্ণের মনে বা কৃষ্ণলীলাসহকারদের মনে কৃষ্ণের ঐশ্বর্যমূর্তির জাগরণ ঘটেনা। ঐশ্বর্যমূর্তি নেই বলে কৃষ্ণভক্তি এখানে শুদ্ধ থেকে শুদ্ধতর হয়ে শুদ্ধতম হয়েছে। তাই এই মতাবলম্বী বৈষ্ণব কবিসাধকরা কেউ প্রভু, কেউ পুত্র, কেউ সখা, আর কেউবা প্রেমিকরূপে কৃষ্ণকে প্রার্থনা করেছেন। শেষোক্ত কবিসাধকের সংখ্যাই বেশি।

বৃন্দাবনের ষড়গোস্বামীর অন্যতম রূপ গোস্বামী উজ্জ্বলনীলমণি-তে কৃষ্ণভক্তিকেই একমাত্র রসপরিনতি বলা হয়েছে। এর স্হায়ীভাব হল দুপ্রকারের-

১. বিপ্রলম্ভ শৃঙ্গার

২. সম্ভোগ শৃঙ্গার

আবার এই দুটি প্রকারও আবার চারটি করে উপবিভাগে বিন্যস্ত।

বিপ্রলম্ভ

  • পূর্বরাগ
  • মান (এরও দুটি ভাগ- সহেতু আর নির্হেতু)
  • প্রেমবৈচিত্ত
  • প্রবাস (এরও দুটি ভাগ- সুদূর আর অদূর)

সম্ভোগ

  • সংক্ষিপ্ত
  • সংকীর্ণ
  • সম্পূর্ণ
  • সমৃদ্ধিমান

বৈষ্ণব পদাবলিতে কৃষ্ণের লীলাবিলাস এই বিষয়পর্যায়ে বিন্যস্ত। অবশ্য,উপর্যুক্ত চারটি ছাড়াও বিপ্রলম্ভকে আরও সূক্ষাতিসূক্ষভাগে ভাগ করা হয়েছে নানাসময়। যেমন- অনুরাগ, আক্ষেপানুরাগ কিংবা, বিপ্রলব্ধা, খন্ডিতা বা, বাসরসজ্জিতা অথবা অভিসার। পুরাণ ছাড়া সাহিত্যে বা কাব্যে বাংলা বৈষ্ণব পদাবলির উৎস হল- সংস্কৃত পদসংকলন গ্রন্থগুলি। যথা, গাথা সপ্তশতী,....... তাছাড়া জয়দেবের গীতগোবিন্দের কথা তো এ প্রসঙ্গে বলতেই হয়। বিদ্যাপতি মূলত মৈথিলি ভাষায় বৈষ্ণব পদাবলি রচনা করেছেন। তবে অনেকে এই পদাবলিগুলির ভাষার বিশেষ মাধুর্যের জন্য একে ব্রজবুলি ভাষা বলে কল্পনা করতে চেয়েছেন। প্রাচীন এই মতটিকে পরবর্তীকালের আধুনিক সমালোচক শংকরীপ্রসাদ বসু স্বীকার করে নিয়েছেন এবং বিদ্যাপতিকে একটি সাহিত্যিক ভাষার মহান সর্জক বলে মনে করেছেন। সে যাই হোক ভাষাগত এই প্রভাব যে পরবর্তীকালের কবিদেরও বিরাট প্রভাবিত করেছিল তার প্রমাণ গোবিন্দদাস। জ্ঞানদাসের কিছু কিছু পদও এই তথাকথিত ব্রজবুলি ভাষাতেই রচিত। মধ্যযুগের বহু কবি এই ভাষাতেই পদরচনা করেছেন। এমনকি আধুনিক কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও যখন ' ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী ' লেখেন তখন তিনি লেখেন ব্রজবুলি ভাষাতেই। বৈষ্ণব পদাবালি সাহিত্যে বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস, গোবিন্দ দাস ছাড়াও যশোরাজ খান, চাঁদকাজী, রামচন্দ বসু, বলরাম দাস, নরহরি দাস, বৃন্দাবন দাস, বংশীবদন, বাসুদেব, অনন্ত দাস, লোচন দাস, শেখ কবির, সৈয়দ সুলতান, হরহরি সরকার, ফতেহ পরমানন্দ, ঘনশ্যাম দাশ, গয়াস খান, আলাওল, দীন চণ্ডীদাস, চন্দ্রশেখর, হরিদাস, শিবরাম, করম আলী, পীর মুহম্মদ, হীরামনি, ভবানন্দ প্রমুখ উল্লেখ্যযোগ্য কবি। বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যিক গুণে আসামান্য। বিভিন্ন কবির লেখা কিছু পদ এখানে উল্লেখ করা হল- ১.সই কেমনে ধরিব হিয়া।/আমার বঁধুয়া আন বাড়ি যায়/ আমার আঙিনা দিয়া।।/সে বধুঁ কালিয়া না চাহে ফিরিয়া/ এমতি করিল কে।/আমার অন্তর যেমন করিছে/তেমনি করুক সে।।/যাহার লাগিয়া সব তেয়াগিনু/ লোকে অপযশ কয়।/সেই গুণনিধি ছাড়িয়া পিরীতি/আর যেন কার হয়।।/যুবতী হইয়া শ্যাম ভাঙাইয়া/এমত করিল কে।/আমার পরাণ যেমতি করিছে/তেমতি হউক সে।। (চণ্ডীদাস) ২.চলে নীল সাড়ি নিঙারি নিঙারি/পরান সহিতে মোর।/সেই হৈতে মোর হিয়া নহে থির/মন্মথ জ্বরে ভোর । (চণ্ডীদাস) ৩.এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর/এ ভরা বাদর মাহ ভাদর/শূন্য মন্দির মোর।।/ঝম্পি ঘণ গন — জন্তি সন্ততি/ভুবন ভরি বরি খন্তিয়া।/কান্ত পাহুন কাম দারুন/সঘনে খন শর হন্তিয়া।।/কুলিশ শত শত পাত-মোদিত/ময়ূর নাচত মাতিয়া।/মও দাদুরী ডাকে ডাহুকী/ফাটি যাওত ছাতিয়া।।/তিমির দিক ভরি ঘোর যামিনী/অথির বিজুরিক পাঁতিয়া।/বিদ্যাপতি কহ কৈছে গোঙায়াবি/হরি বিনে দিন রাতিয়া।। (বিদ্যাপতি)

 

মঙ্গলকাব্য

মধ্যযুগের বাংলা কাব্যধারার একবিশিষ্ট শাখা হল মঙ্গলকাব্য। মঙ্গল শব্দের আভিধানিক অর্থ হল কল্যাণ। মধ্যযুগে বিভিন্ন দেব-দেবীর মহিমা ও মাহাত্ম্যকীর্তন এবং পৃথিবীতে তাদের পূজা প্রতিষ্ঠার কাহিনী নিয়ে যেসব কাব্য রচিত হয়েছে সেগুলোই বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মঙ্গল কাব্য নামে পরিচিত।মঙ্গলকাব্যের তিনটি প্রধান ঐতিহ্যের মধ্যে মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল ও ধর্মমঙ্গল ছিল অন্যতম । এই কাব্য তিনটির প্রধান চরিত্র হল যথাক্রমে মনসা, চণ্ডী ও ধর্মঠাকুর যারা বাংলার সকল স্থানীয় দেবতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হয়। এছাড়াও কিছু ছোট মঙ্গলকাব্য রয়েছে, যেমন- শিবমঙ্গল, কালিকা মঙ্গল, রায় মঙ্গল, শশী মঙ্গল, শীতলা মঙ্গল ও কমলা মঙ্গল প্রভৃতি নামে পরিচিত। মঙ্গলকাব্যের প্রচলিত প্রধান কবিরা হলেন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, বিজয়গুপ্ত, রূপরাম চক্রবর্তী প্রমুখ।

 

রাজসভার সাহিত্য

রাজসভার সাহিত্য হল রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় রচিত সাহিত্য। মধ্যযুগের প্রধান রাজসভার কবি ছিলেন আলাওল (১৫৯৭-১৬৭৩) এবং ভারত চন্দ্র প্রমুখ। মহাকবি আলাওল ছিলেন আরাকান রাজসভার প্রধান কবি। তিনি আরবি ও ফার্সি ভাষায় কাব্য রচনা করেছিলেন। ব্রজবুলি ও মঘী ভাষাও তার আয়ত্তে ছিল। প্রাকৃতপৈঙ্গল, যোগশাস্ত্র, কামশাস্ত্র, অধ্যাত্মবিদ্যা, ইসলাম ও হিন্দু ধর্মশাস্ত্র-ক্রিয়াপদ্ধতি, যুদ্ধবিদ্যা, নৌকা ও অশ্ব চালনা প্রভৃতিতে বিশেষ পারদর্শী হয়ে আলাওল মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। আলাওলের পদ্মাবতী (১৬৪৮ খৃ:) ছিল সবচেয়ে বিখ্যাত মহাকাব্য। তাছাড়া :

  • সতীময়না লোরচন্দ্রানী (১৬৫৯খৃঃ)
  • সপ্ত পয়কর (১৬৬৫ খৃঃ)
  • সয়ফুলমুলুক-বদিউজ্জামাল (১৬৬৯খৃঃ)
  • সিকান্দরনামা (১৬৭৩খৃঃ)
  • তোহফা (১৬৬৪ খৃঃ)
  • রাগতালনামা

মধ্যযুগের শেষ এবং আধুনিক যুগের প্রধান কবি ছিল ভারত চন্দ্র। তিনি তার অন্নদামঙ্গল কাব্যের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন। এই কাব্যের বিখ্যাত উক্তি হল, "আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে"।

 

শিবায়ন কাব্য

শিবায়ন কাব্য মধ্যযুগীয় বাংলা আখ্যানকাব্যের একটি ধারা। শিব ও দুর্গার দরিদ্র সংসার জীবন কল্পনা করে মঙ্গলকাব্যের আদলে এই কাব্যধারার উদ্ভব। শিবায়ন কাব্যে দুটি অংশ দেখা যায় – পৌরাণিক ও লৌকিক। মঙ্গলকাব্যের আদলে রচিত হলেও শিবায়ন মঙ্গলকাব্য নয়, মঙ্গলকাব্যের সঙ্গে এক কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। এই কাব্যের দুটি ধারা দেখা যায়। প্রথমটি মৃগলুব্ধ-মূলক উপাখ্যান ও দ্বিতীয়টি শিবপুরাণ-নির্ভর শিবায়ন কাব্য। শিবায়নের প্রধান কবিরা হলেন রতিদেব, রামরাজা, রামেশ্বর ভট্টাচার্য, রামচন্দ্র কবিচন্দ্র ও শঙ্কর কবিচন্দ্র।

 

শাক্তপদাবলি

শাক্তপদাবলী হল কালী-বিষয়ক বাংলা ভক্তিগীতির একটি জনপ্রিয় ধারা। এই শ্রেণীর সঙ্গীত শাক্তপদাবলীর একটি বিশিষ্ট পর্যায়। শাক্তকবিরা প্রধানত তন্ত্রাশ্রয়ী দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন বলে শাক্তপদাবলীতে তন্ত্রদর্শন নানাভাবে দ্যোতিত। শাক্তপদাবলীর পদগুলিতে কালী বা শ্যামা মাতৃরূপে ও ভক্ত সাধক সন্তানরূপে কল্পিত। ভক্তের প্রাণের আবেগ, আকুতি, আবদার, অনুযোগ, অভিযোগ, দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণার নিবেদন ছন্দোবদ্ধ হয়ে গীতধারায় প্রকাশিত হয়েছে এই পর্যায়ে। এই কারণে সাধনতত্ত্বের পাশাপাশি আত্মনিবেদনের ঘনিষ্ঠ আকুতি শাক্তপদাবলীর পদগুলিতে অপূর্ব কাব্যময় হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, সমাজজীবন ও লৌকিক সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ এই পদাবলির অধ্যাত্মতত্ত্ব শেষাবধি পর্যবসিত হয়েছে এক জীবনমুখী কাব্যে।

শাক্তপদাবলী ধারাটি বিকাশলাভ করে খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে। এই সময় বঙ্গদেশে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে এক রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকটকালে বৈষ্ণব ধর্মানুশীলনের পরিবর্তে শাক্তদর্শন ও শক্তিপূজা ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। তার কারণ দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়ার সতীরুপের শক্তিপীঠগুলির অনেকগুলিই বঙ্গদেশে। সেই শক্তিপীঠগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে এসেছে শক্তিসাধনা। তারই ফলশ্রুতিতে উদ্ভূত হয় শাক্তসাহিত্য। শাক্তপদাবলীর শ্রেষ্ঠ কবি রামপ্রসাদ সেন এবং তার পরেই স্থান কমলাকান্ত ভট্টাচার্যের। এই দুই দিকপাল শাক্তপদকর্তা ছাড়াও অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট পদকর্তা এই ধারায় সংগীতরচনা করে শাক্তসাহিত্য ও সর্বোপরি শাক্তসাধনাকে জনপ্রিয় করে তোলেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য – কৃষ্ণচন্দ্র রায়, শম্ভুচন্দ্র রায়, নরচন্দ্র রায়, হরুঠাকুর অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, রামনিধি গুপ্ত (নিধুবাবু), কালী মির্জা, দাশরথি রায় (দাশুরায়) প্রমুখ। অনেক মুসলমান কবিও শাক্তপদাবলী ধারায় নিজ নিজ কৃতিত্ব স্থাপন করে গেছেন। বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ শ্যামাসঙ্গীত রচয়িতা হলেন কাজী নজরুল ইসলাম। অন্যদিকে এই শতাব্দীর জনপ্রিয় শ্যামাসঙ্গীত গায়কদের অন্যতম হলেন পান্নালাল ভট্টাচার্য, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, রামকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।

 

নাথসাহিত্য

বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগে নাথধর্মের কাহিনি অবলম্বনে রচিত আখ্যায়িকা কাব্য।প্রাচীনকালে শিব উপাসক এক সম্প্রাদয় ছিল,তাদের ধর্ম ছিল নাথধর্ম। হাজার বছর আগে ভারতে এই সম্প্রাদয় খ্যাতি লাভ করেছিল। তাদের গতিবিধির ব্যাপকতার জন্য সারা ভারতবর্ষে তাদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। নাথ অর্থ প্রভু,দীক্ষালাভের পর নামের সাথে তারা নাথ শব্দটি যোগ করত। তারা বিশেষ ক্ষমতার অধিকারি ছিল। বৌদ্ধ ও শৈব ধর্মের সমন্বয়ে এ ধর্ম গরে ওঠে। এই নাথ পন্থা বৌদ্ধ মহাযান আর শূন্যবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত। অবিদ্যা ও অজ্ঞান থেকে মুক্তির জন্য এবং মহাজ্ঞান লাভ করাই নাথগনের লক্ষ্য ছিল।সাধনার মাধ্যমে দেহ পরিশুদ্ধ করে মহাজ্ঞান লাভের যোগ্য করলে তাকে পক্ক দেহ বলা হত। এই মতের প্রতিষ্ঠাতা মীননাথ। আর শিব হল আদি নাথ। সব নাথ তার অনুসারী। দশম-একাদশ শতকে নাথধর্মের প্রভাব বিস্তার লাভ করে। অই সময়ে নাথ সাহিত্য বিস্তার লাভ করে। প্রধান প্রধান নাথগন হলেন- মীননাথ,গোরখনাথ,প্রমুখ।

 

বাউল সাহিত্য

বাউল মতবাদের উপর ভিত্তি করে রচিত সাহিত্যই হল বাউল সাহিত্য। বাউল সাধকদের সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছেন জগন্মোহন গোসাঁই ও লালন সাঁই। লালন তার বিপুল সংখ্যক গানের মাধ্যমে বাউল মতের দর্শন এবং অসাম্প্রদায়িকতার প্রচার করেছিলেন। এছাড়াও বাউল কবিদের মধ্যে জালাল খাঁ, রশিদ উদ্দিন, হাছন রাজা, রাধারমণ, সিরাজ সাঁই, পাঞ্জু সাঁই, পাগলা কানাই, শীতলং সাঁই, দ্বিজদাস, হরিচরণ আচার্য, মনোমোহন দত্ত, লাল মাসুদ, সুলা গাইন, বিজয় নারায়ণ আচার্য, দীন শরৎ (শরৎচন্দ্র নাথ), রামু মালি, রামগতি শীল, মুকুন্দ দাস, আরকুন শাহ্‌, সিতালং ফকির, সৈয়দ শাহ্‌ নূর, শাহ আব্দুল করিম, উকিল মুন্সি, চান খাঁ পাঠান, তৈয়ব আলী, মিরাজ আলী, দুলু খাঁ, আবেদ আলী, উমেদ আলী, আবদুল মজিদ তালুকদার, আবদুস সাত্তার, খেলু মিয়া, ইদ্রিস মিয়া, আলী হোসেন সরকার, চান মিয়া, জামসেদ উদ্দিন, গুল মাহমুদ, প্রভাত সূত্রধর, আবদুল হেকিম সরকার, ক্বারী আমীর উদ্দিন আহমেদ, ফকির দুর্বিন শাহ, শেখ মদন, দুদ্দু সাঁই,কবি জয়দেব, কবিয়াল বিজয়সরকার, ভবা পাগলা, নীলকণ্ঠ, দ্বিজ মহিন, পূর্ণদাস বাউল, খোরশেদ মিয়া, মিরাজ উদ্দিন পাঠান, আব্দুল হাকিম, মহিলা কবি আনোয়ারা বেগম ইত্যাদির নাম উল্লেখযোগ্য। তাদের মাধ্যমেই বাউল মতবাদ বা বাউল সাহিত্য বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

 

বাংলা লোক সাহিত্য

বাংলাদেশের লোক সাহিত্য বাংলা সাহিত্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। যদিও এর সৃষ্টি ঘটেছে অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রসার ঘটেছে মৌখিকভাবে, তথাপি বাংলা সাহিত্যকে এ লোক সাহিত্য ব্যাপ্তি প্রদান করেছে, করেছে সমৃদ্ধ। পৃথক পৃথক ব্যক্তি-বিশেষের সৃষ্টি পরিণত হয়েছে জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যে যার মাধ্যমে প্রকাশ ঘটেছে ভালোবাসা, আবেগ, অনুভূতি ও চিন্তা চেতনার। লোক সাহিত্য মূলত মৌখিক সাহিত্য। ফলে এধরনের সাহিত্য স্মৃতিসহায়ক কৌশল, ভাষার গঠনকাঠামো এবং শৈলীর উপরও নির্ভর করে। এদেশের লোক সাহিত্য সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় বিচরণ করছে। এগুলো হচ্ছে মহাকাব্য, কবিতা ও নাটক, লোক গল্প, প্রবাদ বাক্য, গীতি কাব্য প্রভৃতি। লোক সাহিত্যের এই সম্পদগুলো সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে অথবা অন্য কোন উপায়ে এখনো এই অঞ্চলে টিকে রয়েছে। বহুবছর ধরে এদেশে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। বাংলাদেশের লোক সাহিত্য এই জাতিগোষ্ঠীগুলো দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত। ফলশ্রুতিতে বর্তমান বাংলাদেশের বহুমুখী বৈচিত্র্যপূর্ণ বিশাল লোক সাহিত্যের একাংশের ব্যাখ্যায় ইতিহাসের প্রয়োজন পরে।

বাংলাদেশের লোক সাহিত্য লোক সাহিত্যের প্রচলিত সকল শাখায় নিজেকে বিস্তার করেছে। এগুলো হচ্ছে গল্প, ছড়া, ডাক ও খনার বচন, সংগীত, ধাঁধা, প্রবাদ বাক্য, কুসংস্কার ও মিথ। লোকগীতি বাংলা লোক সাহিত্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশের সংগীত মূলত কাব্যধর্মী। এদেশীয় সংগীতে বাদ্যযন্ত্রের চেয়ে মৌখিক সুরের দক্ষতার উপর অধিক নির্ভরশীলতা লক্ষ করা যায়। লোকগীতিকে আমরা সাতটি শ্রেণীতে বিন্যস্ত করতে পারি। এগুলো হচ্ছেঃ প্রেম, ধর্মীয় বিষয়, দর্শন ও ভক্তি, কর্ম ও পরিশ্রম, পেশা ও জীবিকা, ব্যাঙ্গ ও কৌতুক এবং এসবের মিশ্রণ। অন্যদিকে এদেশীয় লোকসাহিত্যে আমরা গানের বিভিন্ন শাখা দেখতে পাই। এগুলো হচ্ছেঃ বাউল গান, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, গম্ভীরা, কবিগান, জারিগান, সারিগান, ঘাটু গান,যাত্রা গান ,ঝুমুর গান, জাগের গান,গাজী গান,উরি গান প্রভৃতি।

বাংলা লোক সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হল:

  • মৈমনসিংহ গীতিকা (ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রচলিত পালাগানগুলোকে একত্রে মৈমনসিংহ গীতিকা বলা হয়। এই গানগুলো প্রাচীন কাল থেকে মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে আসছে। তবে ১৯২৩-৩২ সালে ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন এই গানগুলো সম্পাদনা করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রকাশ করেন। বর্তমান নেত্রকোণা জেলার আইথর নামক স্থানের আধিবাসী চন্দ্রকুমার দে এসব গাঁথা সংগ্রহ করছিলেন।)
  • পূর্ববঙ্গ-গীতিকা (পূর্ববঙ্গ অঞ্চলের প্রচলিত লোকসাহিত্যকে একত্রে পূর্ববঙ্গ গীতিকা বলা হয়। প্রাচীন কাল থেকে মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে আসা পালাগুলি বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। ১৯২৬ সালে ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ সাহায্যে পালাগুলো সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন। পরে ১৯৭১-১৯৭৫ সালে ক্ষিতীশচন্দ্র মৌলিক ও সাত খণ্ডে প্রাচীন পূর্ববঙ্গ গীতিকা প্রকাশ করেন।)
  • ঠাকুরমার ঝুলি (বাংলা শিশুসাহিত্যের একটি জনপ্রিয় রূপকথার সংকলন। এই গ্রন্থের সংকলক দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার। দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার রূপকথার গল্পগুলো সংগ্রহ করেছিলেন তৎকালীন বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল থেকে। তবে সংগৃহীত হলেও দক্ষিণারঞ্জণের লেখনীর গুণে গল্পগুলো হয়ে উঠে শিশু মনোরঞ্জক। ৮৪ টি চিত্র সংবলিত ঠাকুরমার ঝুলির চিত্র অঙ্কন করেছেন গ্রন্থকার স্বয়ং। গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার 'ভট্টাচার্য এন্ড সন্স' প্রকাশনা সংস্থা হতে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বইয়ের ভূমিকা লিখেছিলেন। এরপর থেকে এর শত শত সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। রিনা প্রীতিশ নন্দী কর্তৃক অনূদিত এর একটি ইংরেজি সংস্করণও বের হয়েছে।)
common.content_added_by

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

ধর্মীয় সংস্কারের কারণে
হৃদয়ের নিবিড় আন্তরিকতার স্পর্শে
সামাজিক যোগাযোগের জন্য
সাম্প্রদায়িক মনোভাবের কারণে
কুলীন কুল সর্বস্ব
কৃষ্ণকুমারী
নীলদর্পণ
জমিদার দর্পণ
খরোষ্ঠী লিপি থেকে
ব্রাহ্মী লিপি থেকে
দেবনাগরী লিপি থেকে
ল্যাটিন লিপি থেকে

বাংলা কবিতা

1.4k
1.4k

বাংলা কবিতা এর উৎপত্তি হয়েছিল মূলত পালি এবং প্রাকৃত সংস্কৃতি এবং সামাজিক রীতি থেকে। এটি বৈদিক ধর্মীয় ধর্মানুষ্ঠান এবং বৌদ্ধ ধর্ম ও জৈন ধর্ম এর রীতিনীতির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং পরস্পর বিরোধি ছিলো। তবে আধুনিক বাংলার সংস্কৃত ভাষা ভাষার উপর ভিত্তি করেই তৈরী হয় নি। বাংলা ১৪১৫ সাল নাগাদ থেকে বাংলা সাহিত্য জগতে এক ভিন্ন স্বাদের কবিতাশ্রয়ী ঘরানার উদ্ভব হতে দেখা যায়-দশকোষী কাব্য ঘরানা, পঞ্চবান কাব্য ঘরানা ইত্যাদি।

 

 

common.content_added_by

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

সিপাহী বিদ্রোহ
পানিপথের ৩য় যুদ্ধ
পলাশীর যুদ্ধ
ছিয়াত্তরের মন্বন্তর
সোনালি অতীত
বিষাদময় রিক্ততা
শৈশবের স্মৃতি
মধুর বর্তমান
বিদীর্ণ দর্পনে মুখ
মানচিত্র
যখন উদ্যত সঙ্গিন
নিজ বাসভূমে
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ
ঐকতান
সেই অস্ত্র
আঠারো বছর বয়স

সনেট

493
493
common.please_contribute_to_add_content_into সনেট.
common.content

অমিত্রাক্ষর ছন্দ

471
471
common.please_contribute_to_add_content_into অমিত্রাক্ষর ছন্দ.
common.content

বাংলা নাটক

1.2k
1.2k
common.please_contribute_to_add_content_into বাংলা নাটক.
common.content

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

নবাব সিরাজউদ্দৌলার
মীর জাফরের
রাইসুল জুহালার
ক্লেটনের
নীলদর্পন
কৃষ্ণকুমারী
বসন্তকুমারী
জমিদার দর্পণ
ডাকঘর
রক্তকরবী
বিসর্জন
তাসের দেশ।
ওয়ার্টসের
মীর জাফরের
ক্লাইভের
রায়দুর্লভের

সিরাজউদ্দৌলা

1.2k
1.2k
common.please_contribute_to_add_content_into সিরাজউদ্দৌলা.
common.content

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নের উত্তর দাও :

আবুলের বাবা অনাথ শিব্বিরকে লালন-পালন করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেন। সময়ের আবর্তনে বিত্ত-সম্পত্তি নিয়ে আবুলের সঙ্গে তার চাচা জাফরের বিরোধ বাঁধলে জাফর শিব্বিরকে নিজের দলে ভেড়ান। অর্থের লোভে জাফরের নির্দেশে শিব্বির আবুলকে হত্যা করে । 

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নের উত্তর দাও :

“ইসমাইলের বাবা অনাথ সিহাবকে লালন-পালন করেন। ইসমাইলের সাথে তার চাচা তায়েবের বিরোধ বাধলে অর্থের লোভে তায়েবের নির্দেশে সিহাব ইসমাইলকে হত্যা করে।

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নের উত্তর দাও :

রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া মিঠুকে এনে নিজের সন্তানের মতো লেখাপড়া শেখান নিয়াজের মা। বিয়ে দিয়ে সংসারও সাজিয়ে দেন তিনি। অথচ ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে সামান্য কথা কাটাকাটির জের ধরে নিয়াজকে নির্মমভাবে হত্যা করে মিঠু।

বাংলা প্রবন্ধ

1.3k
1.3k
common.please_contribute_to_add_content_into বাংলা প্রবন্ধ.
common.content

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

বিখ্যাত ভ্রমণকাহিনী (বাংলায়)

1.2k
1.2k

মানব সভ্যতার বহমান পথ পরিক্রমায় ভ্রমণ সাহিত্য প্রাচীনত্বের দাবি করতেই পারে। অথচ বাংলা সাহিত্যে কোনটি প্রথম ভ্রমণ কাহিনী সেটি নিয়ে আলোচনা হয়না বললেই চলে। কিন্তু এমন ভ্রমণ কাহিনী রয়েছে সেগুলি পাঠ করে স্বাদ পেতে পারেন পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে আসার। কল্পনায় আপনি ঘুরে বেড়াতে পারেন আকাশচুম্বী পাহাড় পর্বতে, অ্যামাজনের গহীন জঙ্গলে, আন্টার্কটিকায় সীল মাছগুলোর সাথে কিংবা তারা ভরা আকাশের নীচে সাহারা মরুভূমিতে।

বাংলা সাহিত্যে সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত “পালামৌ” প্রথম বাংলা ভ্রমণ কাহিনী। রচনাটি ৬ কিস্তিতে প্র.না.ব ছদ্মনামে ১৮৮০-৮২ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গদর্শন পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। সঞ্জীবচন্দ্রের জীবৎকালে “পালামৌ” স্বতন্ত্র পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়নি। তাঁর মৃত্যুর পর বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় “সঞ্জীবণী সুধা” নাম দিয়ে সঞ্জীবচন্দ্রের রচনাগুলির সংকলন প্রকাশ করেন, সেখানেই “পালামৌ” সর্বপ্রথম পুস্তকাকারে মুদ্রণ গৌরব লাভ করে। “পালামৌ” রচনা প্রসঙ্গে সুকুমার সেন লিখেছিলেন - “বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বড় ভাই সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'পালামৌ' কে বাংলা গদ্য সাহিত্যে প্রথম সার্থক ভ্রমণ কাহিনী হিসেবে গন্য করা যায়।”

 

বাংলা সাহিত্যে ভ্রমণ কাহিনীর তালিকা যেমন দীর্ঘ, তেমনি গুণে, মানে বাংলা ভ্রমণ সাহিত্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় কিছু ভ্রমণ কাহিনীর তালিকা নিম্নে উল্লেখ করা হল –


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর :
• য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র (১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম ইংল্যান্ড যাত্রা)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর “য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র” রচনা সম্পর্কে চারুচন্দ্র দত্ত কে বলেছিলেন - “সেই প্রথম বয়সে যখন ইংল্যান্ড গিয়েছিলুম, ঠিক মুসাফেরের মতো যায়নি। অর্থাৎ রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে বাহির থেকে চোখ বুলিয়ে যাওয়া বরাদ ছিল না – ছিলেম অতিথির মতো, ঘরের মধ্যে প্রবেশ পেয়েছিলুম(রবীন্দ্র রচনাবলী, দশম, জন্ম শতবার্ষিক সংস্করণ, পৃ-৩৪০)।”
• য়ুরোপ যাত্রীর ডায়েরি (১৮৯০ খ্রিস্টাব্দ, দ্বিতীয় ইংল্যান্ড যাত্রা)
• পথের সঞ্চয় (১৯১২-১৩ খ্রিস্টাব্দ, তৃতীয়বার ইংল্যান্ড যাত্রা)
• জাপান যাত্রী (১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম জাপান যাত্রা)
• পশ্চিম যাত্রীর ডায়েরি (১৯২৪-২৫ খ্রিস্টাব্দ, দক্ষিণ আমেরিকা যাত্রা)
• জাভা যাত্রীর পত্র (১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ, জাভা ও বালি যাত্রা)
• রাশিয়ার চিঠি (১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ, রাশিয়া ভ্রমণ)
• পারস্য যাত্রী (১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ, পারস্য ও ইরাক ভ্রমণ)


বুদ্ধদেব বসু :
• আমি চঞ্চল হে (১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ, সস্ত্রীক ভুবনেশ্বর, পুরী, কোনার্ক, চিল্কা ভ্রমণ)
• সমুদ্র তীর (১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ, ক্রিসমাসে স্ত্রী ও শিশুকন্যা সহ গোপালপুর ও ওয়ালটেয়ার ভ্রমণ)
• সব পেয়েছির দেশ (১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ, শান্তিনিকেতন ভ্রমণ)
• দেশান্তর (১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ, বক্তৃতা ও অধ্যাপনার কারণে জাপান, হনলুলু, আমেরিকা, পিটসবার্গ, মিশর, ইউরোপ ভ্রমণ)
বুদ্ধদেব বসুর প্রথম বই দুটি সম্পর্কে চঞ্চল কুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন - “বুদ্ধদেবের সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গি সরস সাহিত্যের আমেজ তাঁর লেখনী কে করে তুলেছে অনন্য। পাঠকের ইচ্ছে হবে সমুদ্র তীরের দেশগুলোতে পুনর্বার নতুন চোখে বেড়িয়ে আসতে (পরিচয়, ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ পৌষ সংখ্যা)।”

 

অন্নদাশঙ্কর রায় :
• পথে প্রবাসে
• জাপানে
“পথে প্রবাসে” প্রসঙ্গে প্রথম চৌধুরী বলেছেন - “এ শুধু ভ্রমণ বৃত্তান্ত নয়, একখানি যথার্থ সাহিত্য গ্রন্থ।”

জসীমউদ্দীন :
• চলে মুসাফির ১৯৫২
• হলদে পরির দেশে ১৯৬৭
• যে দেশে মানুষ বড় ১৯৬৮
• জার্মানির শহরে বন্দরে ১৯৭৫

বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় :
• কালনা থেকে রংপুর (নৌকা যোগে ২৭ দিনে কালনা থেকে রংপুর যাওয়ার অভিজ্ঞতা)
বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় হলেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পিতামহ। এই ভ্রমণ বৃত্তান্ত সম্পর্কে ড. দীনেশ চন্দ্র সেন লিখেছিলেন - “এই ভ্রমণ বৃত্তান্ত ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দের, অর্থাৎ রাজা রামমোহন রায়ের মৃত্যুর মাত্র ৭ বৎসর পর লিখিত হয়। উক্ত রাজার বহু শতাব্দী পূর্ব হইতে সাধারণের মধ্যে বাংলা গদ্যের যে ধারা প্রচলিত ছিল, মৃত্যুঞ্জয় প্রভৃতি সংস্কৃত পণ্ডিত ও রাজা রামমোহন রায় প্রমুখ ইংরেজির পক্ষপাতী শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগন সেই প্রাচীন ধারাটি গ্রাহ্য করেন নাই।”


জলধর সেন :
• টপকেশ্বর ও গুচ্ছপানি (ভারতী ও বালক পত্রিকায় মাঘ ১২৯৯ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত)
• প্রবাসচিত্র ১৮৯৯
• হিমালয় ১৯০০
• পথিক ১৯০১
• হিমাচল বক্ষে ১৯০৪
• হিমাদ্রি ১৯১১
• দশদিন ১৯১৬


সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় :
• কবিতার জন্য সারা পৃথিবী
• তিন সমুদ্র সাতাশ নদী
• ছবির দেশে কবিতার দেশে

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় :
• চাঁদের পাহাড় (১৯৩৭)


দীনবন্ধু মিত্র :
• সুরধুনী কাব্য ১৮৭১


বিনয় মুখোপাধ্যায় (যাযাবর) :
• দৃষ্টিপাত


ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় :
• A Visit to Europe ১৮৮৯ (পরিমল গোস্বামী তাঁর এই বইটির বঙ্গানুবাদ করে নাম দেন “আমার ইউরোপ ভ্রমণ”)


রমেশচন্দ্র দত্ত :
• Three Years in Europe ১৮৯৬

শিবনাথ শাস্ত্রী :
• ইংল্যান্ডের ডায়েরি

কেশর সেন :
• Dairy in England

প্রবোধ কুমার সান্যাল :
• মহাপ্রস্থানের পথে

অবধূত :
• মরুতীর্থ হিংলাজ

কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য :
• দুরাকাঙ্খার বৃথা ভ্রমণ ১৮৫৮

প্রবোধ সান্যাল :
• রাশিয়ার ডায়েরি


নারায়ণ সান্যাল :
• জাপান থেকে ফিরে


বিকাশ বিশ্বাস :
• উদিত ভানুর দেশ জাপান

যদুনাথ সর্বাধিকারী :
• তীর্থ ভ্রমণের রোজনামচা ১৯১৫

ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় :
• শ্রীশ্রীগয়াতীর্থ বিস্তার

ঈশ্বরচন্দ্র বাগচী :
• তীর্থমুকুর

রাজেন্দ্র মোহন বসু :
• কাশ্মীর কুসুম ১৮৭৫

দুর্গাচরণ রক্ষিত :
• সচিত্র ভারত প্রদক্ষিণ ১৯০৩ (রয়েছে ভ্রমণ রসের পাশাপাশি সে সময়ের ১৮ টি দুর্লভ ছবি)

 

বাংলা সাহিত্যে মহিলা লিখিত  ভ্রমণ কাহিনী :


বাংলা সাহিত্যে মহিলা লিখিত প্রথম ভ্রমণ কাহিনী রচনা করেন কৃষ্ণভাবিনী দাস। তাঁর রচিত রচনাটির নাম - “ইংল্যান্ডে বঙ্গমহিলা” (১৮৯১)।


হরিপ্রভা দেবী :
• বঙ্গ মহিলার জাপান যাত্রা ১৯১৫

মৈত্রেয়ী দেবী :
• মহাসোভিয়েত

নবনীতা দেবসেন :
• করুণা তোমার কোন পথ দিয়ে (কুম্ভস্নান)
• ট্রাকবাহনে ম্যাকমোহনে
• হে পূর্ণ তবে চরণের কাছে

প্রসন্নময়ী দেবী :
• আর্য্যাবর্ত্তে বঙ্গমহিলা

জগৎমোহনী চৌধুরী :
• ইংল্যান্ডে সাত মাস ১৯০২

বিমলা দাশগুপ্ত :
• নরওয়ে ভ্রমণ ১৯১৫


শরৎরেণু দেবী :
• পারস্যে বঙ্গ রমনী ১৯১৬

অবলা বসু :
• জাপান ভ্রমণ ১৯১৬ (মুকুল পত্রিকায় প্রকাশিত)


• প্রথম ভারতীয় ও বাঙালি ভূপর্যটক বিমল মুখার্জি যিনি দুচাকার বাইসাইকেলে ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা থেকে রচনা করেন - “দু চাকায় দুনিয়া” (১৯৮৬)।

common.content_added_by

বিখ্যাত রম্যরচনা (বাংলায়)

514
514
common.please_contribute_to_add_content_into বিখ্যাত রম্যরচনা (বাংলায়).
common.content

বাংলা উপন্যাস

1.4k
1.4k

বিখ্যাত বাংলা উপন্যাস :

ঔপন্যাসিকউপন্যাসের নাম ও প্রকাশকাল
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসচিলে কোঠার সেপাই (১৯৮৭), খোয়াবনামা (১৯৯৩)।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যয়দুর্গেশনন্দিনী (১৮৬৫) বিষবৃক্ষ (১৮৭৩), কৃষ্ণকান্তের উইল (১৮৭৮), আনন্দমঠ (১৮৮২), দেবী চৌধুরানী (১৮৮৪)।
প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়রমা সুন্দরী (১৯০৮), রতœদ্বীপ (১৯১৫), মনের মানুষ (১৯২২), সতীর পতি (১৯২৮)।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়বড়দিদি (১৯১৩), বিরাজ বৌ (১৯১৪), পরিনীতা, মেজদিদি (১৯১৫), কাশীনাথ (১৯১৭), শেষপ্রশ্ন (১৯৩১)।
রমেশচন্দ্র দত্তবঙ্গবিজেতা (১৮৭৪), সংসার (১৮৮৬), সমাজ (১৮৯৪)।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরনৌকাডুবি (১৯০৬), গোরা (১৯১০), ঘরে বাইরে (১৯১৬), চতুরঙ্গ (১৯১৬), শেষের কবিতা (১৯২৯)।
তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ধাত্রী দেবতা (১৯৩৯), গণদেবতা (১৯৪২), হাঁসুলী বাঁকের উপকথা (১৯৪৭), জলসা ঘর (১৯৪২), পঞ্চগ্রাম (১৯৪৩)।
মানিক বন্দোপাধ্যয়পদ্মা নদীর মাঝি (১৯৩৬), পুতুল নাচের ইতিকথা ( ১৯৩৬), শহরতলী (১৯৪০), শহর বাসের ইতিকথা (১৯৪৬), অহিংসা (১৯৪১), সোনার চেয়ে দামী (১৯৫১)।
বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়পথের পাঁচালী (১৯২৯), অপরাজিতা (১৯৩১), আরণ্যক (১৯৩৮), দৃষ্টি প্রদীপ (১৯৩৫), ইছামতি (১৯৪৯)।
টেকচাঁদ ঠাকুরআলালের ঘরে দুলাল (১৮৫৮) | বাংলা উপন্যাস
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহলাল সালু (১৯৪৮), চাঁদের অমাবস্যা (১৯৪৫), কাঁদো নদী কাঁদো (১৯৬৫)।

 

মুক্তিযুদ্ধের ১০ উপন্যাসঃঃ

 

রাইফেল রোটি আওরাত
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ শুরুর পরের তিন দিনের গল্প আনোয়ার পাশা 'রাইফেল রোটি আওরাত'। এপ্রিলে লেখা শুরু করে শেষ করেছিলেন জুনে। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম উপন্যাস এটি।যুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যে, প্রত্যক্ষ বাস্তবতার ভেতর তিনি উপন্যাসটি লেখেন। যুদ্ধের এমন প্রত্যক্ষ, এমন মৌলিক ব্যাপ্তি সত্যিই বিরল। এ উপন্যাস শুধু বিপন্ন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি নয়, রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে উদ্ভাসিত এক নতুন বাংলাদেশ। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র সুদীপ্ত শাহীন-ই যেন সেই বাংলাদেশ। তিনি ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নিহত হন।

নেকড়ে অরণ্য
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে শওকত ওসমান একাধিক উপন্যাস লিখেছেন। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত ৬৪ পৃষ্ঠার ছোট্ট একটি উপন্যাস 'নেকড়ে অরণ্য' ছাড়াও তাঁর উল্লেখযোগ্য মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস 'জাহান্নাম হইতে বিদায়', 'দুই সৈনিক' এবং 'জলাংগী'। 'নেকড়ে অরণ্য' উপন্যাসে লেখক একটি গুদামঘরের বর্ণনা দিয়েছেন। টিনে ছাওয়া, সমতল মেঝের বিশাল এক গুদামঘর। একসময় এই ঘরটিই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাপ্টেন রেজা খান, আলী খানদের নারী ধর্ষণের প্রধান ক্ষেত্র হয়ে ওঠে। সে আস্তানায় তানিমা, জায়েদা, রশিদারা ধর্ষিত হয় কখনো পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনের দ্বারা, কখনো সাধারণ সৈনিকের দ্বারা। তাদের চিৎকার, আর্তনাদ, স্বপ্নভঙ্গের বেদনা, বিপর্যস্ততার নির্মোহ রূপটি তুলে আনেন লেখক এ উপন্যাসে। বনের ভেতর নেকড়ের নৃশংসতাও হার মানে যেন ছোট্ট একটুকরো গুদামঘরে। কিন্তু তার পরও থেমে থাকে না প্রতিবাদ। ক্যাপ্টেনের গুলি বুক পেতে নেয় তানিমা। আর আত্মহত্যার মাধ্যমে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পায় এইসব বীরাঙ্গানারা।

যাত্রা
যুদ্ধের প্রথম দিকের ঘটনা ও সময় নিয়ে রচিত উপন্যাস শওকত আলীর 'যাত্রা'। শুরুর প্রাক্কালে দলে দলে মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে; আবার পেছন ফিরে তাকাচ্ছে। এ পলায়ন শুধু চেতনাগত নয়, মানসিকভাবেও পলায়ন। কিন্তু ওই যে ফিরে তাকানো, সেখানেই আছে উপন্যাসের অন্তর্নিহিত মনস্তত্ত্ব। আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর গোপন ইচ্ছাটুকু ওখানেই আছে। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র অধ্যাপক রায়হান মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছেন। একসময় প্রগতিশীল রাজনীতিক রায়হান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেবেন কি নেবেন না- এ সংশয় ও দ্বিধায় শেষাবধি যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। ১৯৭২ সালে রচিত হয় 'যাত্রা' উপন্যাসটি। তবে প্রকাশ পায় ১৯৭৬ সালে।

হাঙর নদী গ্রেনেড
মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিতে বেশ কিছু উপন্যাস লিখেছেন সেলিনা হোসেন। তার মধ্যে ভীষণ আলোচিত উপন্যাস 'হাঙর নদী গ্রেনেড'। মুক্তিযুদ্ধের এক আবেগী ও প্রতিবাদী উপন্যাস এটি। হলদী গ্রামের এক বয়স্ক নারীর জীবন এই উপন্যাসে মূর্ত হয়ে ওঠে। এই নারী তাঁর নিজের ছেলেদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে যেমন উদ্বুদ্ধ করেন, তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচাতে নিজের মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে তুলে দেন পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে। উপন্যাসে এই মায়ের আত্মসংগ্রাম, দেশের জন্য ত্যাগের অপার মহিমা ভাস্বর হয়ে ওঠে। আর উপন্যাসে বর্ণিত গ্রামটিও যেন মুক্তিযুদ্ধের প্রতীকী এক বাংলাদেশ।

জীবন আমার বোন
মাহমুদুল হকের বহুল পঠিত উপন্যাস 'জীবন আমার বোন'। বরাবরই মধ্যবিত্তের জীবনসংগ্রাম, তাদের দ্বিধাগ্রস্ততা, অপূর্ণতা আর সুবিধাবাদী চরিত্র অসাধারণভাবে এঁকেছেন এই শিল্পী তাঁর প্রতিটি উপন্যাসে। 'জীবন আমার বোন' উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র জাহেদুল করিমের মধ্যবিত্তীয় সুবিধাবাদী মানসিকতার পাশাপাশি যুদ্ধের নানা বাস্তবতায় নিজের বোঝাপড়াও লেখক তুলে ধরেন পাঠকের সামনে। লেখকের অসামান্য উপস্থাপনা, ভাষার কাব্যিক ব্যঞ্জনায় ছোট্ট, হৃদয়গ্রাহী উপন্যাসটি যতই পড়া যায় ততই বিষমবেদনায় ভারাক্রান্ত করে।

দ্বিতীয় দিনের কাহিনী
'বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ', 'নীল দংশন', 'নিষিদ্ধ লোবান'-এর পর সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মুক্তিযুদ্ধের আরেকটি উপন্যাস 'দ্বিতীয় দিনের কাহিনী' (১৯৮৪)। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতাকে চমৎকারভাবে চিহ্নিত করেছেন তিনি। বাঙালি জাতিসত্তার আত্মপরিচয়, সংগ্রাম, স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার কথা পরম মমতায় তুলে ধরেছেন এ উপন্যাসে। একজন প্রধান শিক্ষক তাহের উদ্দীন খন্দকারের আত্মোপলব্ধি, অন্বেষণ ও স্মৃতিচারণার মধ্য দিয়ে উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধে জলেশ্বরীর দুর্বার ভূমিকার কথা। বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা জলেশ্বরীর সন্তানদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার বিষয়টিও উঠে আসে তাহেরের স্মৃতিচারণায়।

খাঁচায়
মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শুরুর দিকে রচিত উপন্যাস রশীদ হায়াদারের 'খাঁচায়'। অবরুদ্ধ ঢাকার বন্দি নগরবাসীর চিত্র তিনি এ উপন্যাসে চমৎকারভাবে তুলে এনেছেন। এ শহরে অবরুদ্ধ জাফরের শঙ্কাময় উপলব্ধি, অনুভূতির কথা আমরা জানতে পারি উপন্যাস থেকে। যখন সে ভাবে, 'সমস্ত অনুভূতি নিষ্ক্রিয় হয়ে রাস্তার মতো হয়ে গেছে, যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে আমেরিকা, খাঁচাটা আরো সংকুচিত হয়ে আসছে, খাঁচার চারপাশে উদ্যত মারণাস্ত্র'; তখন এই বিপন্নতা স্পর্শ করে পাঠককেও।

জোছনা ও জননীর গল্প
মৃত্যুর মাত্র কয়েক বছর আগে কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ লেখেন 'জোছনা ও জননীর গল্প' উপন্যাসটি। এটি যতটা উপন্যাস, ততটাই মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিল। মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন তথ্য, বিবরণ, ঐতিহাসিক চরিত্র ও তার ভূমিকা, নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণকে উপজীব্য করে লিখেছেন দীর্ঘ এই উপন্যাসটি। একাত্তরের পুরো ৯ মাসের গল্প পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উঠে এসেছে 'জোছনা ও জননীর গল্প' উপন্যাসে। কোনো একটি নির্দিষ্ট চরিত্র বা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এই রচনা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া সম্ভব নয়। লেখকের চিরায়ত গল্প বলার সৌন্দর্য এ উপন্যাসেও যে পাঠক উপভোগ করেন, তা বলা বাহুল্য।

সাড়ে তিন হাত ভূমি
একটি কবরের আয়তন কত? এই প্রশ্নের উত্তর, 'সাড়ে তিন হাত ভূমি'। জনপ্রিয় কথাশিল্পী ইমদাদুল হক মিলনের বেশ কিছু মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসের মধ্যে এটিও উল্লেখযোগ্য একটি উপন্যাস। মুক্তিযোদ্ধা রবি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে গ্রামে আসেন পরিবারের খোঁজ নিতে। এসে দেখেন উঠানে পড়ে আছে বাবার মৃতদেহ, ঘরে মা ও বোনের লাশ। আর সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর মৃতদেহ পড়ে আছে বাড়ির পেছনে। হতবিহ্বল, অসাড়, অনুভূতিহীন রবি উঠানে নিজ হাতেই খুঁড়ে চলেন প্রিয় স্বজনদের কবর। যেন খুঁড়ে চলেন স্মৃতির গহিন পরিখা। মা-বাবা, বোন, স্ত্রী; এমনকি অনাগত সন্তানের সঙ্গেও স্মৃতির ঝাঁপি পাখা মেলে। আর তা দৃশ্যমান হতে থাকে পাঠকের চোখের সামনে। উপস্থাপনার দিক থেকে উপন্যাসটি একেবারেই আলাদা।

জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা
প্রয়াত লেখক শহীদুল জহিরের 'জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা' উপন্যাসটি মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের গল্প হলেও এর সূত্রপাত মুক্তিযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে। উপন্যাসে উল্লেখযোগ্য একটি চরিত্র বদু মওলানা। একাত্তরের কুখ্যাত এক রাজাকার সে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও দেশের নানা অস্থিতিশীলতা, প্রগতিশীল শক্তির ঐক্যবদ্ধতার অভাব আর ক্ষমতার রাজনীতির সুযোগে বদু মওলানাদের রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত হওয়ার গল্প। আজকের এ সময়ের পরিপ্রেক্ষিতেও কী ভীষণ বাস্তব সে দৃশ্য! উপন্যাসের এক চরিত্র আবদুল মজিদের চোখে দেখা মোমেনার নৃশংস অবয়বের বর্ণনার মতো নির্মম বাস্তবতার গল্প 'জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা'।

 

common.content_added_by
common.content_updated_by

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

শহীদুল্লা কায়সার
জহির রায়হান
হুমায়ূন আহমেদ
সৈয়দ শামসুল হক

লালসালু

1.5k
1.5k
common.please_contribute_to_add_content_into লালসালু.
common.content
common.content_added_by
common.content_updated_by

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নের উত্তর দাও :

তাহেরার বিয়ে হলো তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বয়সী হামিদ আলীর সাথে। বিয়ের আগে পাত্রী দেখতে এলে হামিদ আলীকে তাহেরা ভেবেছিল সে তার হবু শ্বশুর।

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নের উত্তর দাও :

জালালের দুই বউয়ের মধ্যে মিমি ছোট। বয়স অল্প হওয়ার কারণে সংসার সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। হেসে-খেলে দিন কাটে তার। সুযোগ ফেলেই সমবয়সী মেয়েদের সাথে গল্প-গুজবে মেতে ওঠে সে। 

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নের উত্তর দাও :

আমি পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম। কাহাকে পাইলাম। এ যে দুর্লভ, এ যে মানবী, ইহার রহস্যের কী অন্ত আছে!

বাংলা ছোট গল্প

1.3k
1.3k
common.please_contribute_to_add_content_into বাংলা ছোট গল্প.
common.content

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

জলৌকাবৃত্তি
কুম্ভিলকাবৃত্তি
বেতসবৃত্তি
কোনোটিই না

সামাজিক

রাজনৈতিক

অর্থনৈতিক

সাংস্কৃতিক

ছন্দ

392
392
common.please_contribute_to_add_content_into ছন্দ.
common.content

গ্রন্থ

410
410
common.please_contribute_to_add_content_into গ্রন্থ.
common.content

কাব্য

816
816

চলচ্চিত্র

420
420
common.please_contribute_to_add_content_into চলচ্চিত্র.
common.content

ভাষা আন্দোলনভিত্তিক সাহিত্য

433
433

ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক গ্রন্থ চলচ্চিত্র 

common.content_added_by

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বাংলা সাহিত্য

469
469

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গ্রন্থ / রচনা / সাহিত্যকর্ম

 

উপন্যাস

রচয়িতাউপন্যাস
আনোয়ার পাশা“রাইফেল রোটি আওরাত”- (মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ১ম উপন্যাস)
সৈয়দ শামসুল হক“নিষিদ্ধ লোবান” , “নীলদংশন”
শওকত ওসমান“দুই সৈনিক” , “নেকড়ে অরণ্য” , “জাহান্নাম হতে বিদায়” , “জলাঙ্গী” , “ক্রীতদাসের হাসি” , “পিতল পিঞ্জর”
শওকত আলী“যাত্রা”
হুমায়ূন আহম্মেদ১. শ্যামল ছায়া ২. জ্যোছনা ও জননীর গল্প ৩. ১৯৭১ ৪. আগুনের পরশমনি ৫. নির্বাসন
মনের রাখার কৌশল: শ্যামল এবং জোছনা ১৯৭১ সালে দেশকে আগুনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য নির্বাসনে যায় ।
আল মাহমুদ“উপমহাদেশ”
আবু জাফর শামসুদ্দিন“দেয়াল”
রশীদ হায়দার“খাঁচায়”
সরদার জয়েনউদ্দিন“বিধ্বস্ত রোদের ঢেউ”
সেলিনা হোসেন“হাঙর নদী গ্রেনেড” , “যুদ্ধ”
ইমদাদুল হক মিলন“কালো ঘোড়া”
রাবেয়া খাতুন“ফেরারী সূর্য”
তাহমিনা আনাম“এ গোল্ডেন এজ”
মুহম্মদ জাফর ইকবাল“আমার বন্ধু রাশেদ”: একটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক শিশুতোষ উপন্যাস ।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়“একটি কালো মেয়ের কথা”
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়“পূর্ব-পশ্চিম” ['পূর্ব-পশ্চিম' উপন্যাসটিতে বিভাজনপূর্ব বাংলার একটি পরিবার, ১৯৪৭ এর ভারত বিভাগের সময়কার পরিস্থিতি, দেশত্যাগ উদ্বাস্তুদের জীবন, নতুন প্রজন্মের চিন্তাধারা, পশ্চিমবঙ্গের নক্সাল আন্দোলন, এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ স্থান পেয়েছে।]
মাহমুদুল হক“জীবন আমার বোন”
আমজাদ হোসেন“অবেলায় অসময়”

নাটক

রচয়িতানাটক
সৈয়দ শামসুল হকপায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়: যুদ্ধশেষে মুক্তিবাহিনীর গ্রামে প্রবেশের সময়কার ঘটনা এখানে স্থান পেয়েছে। (মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ১ম নাটক)
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহতরঙ্গভঙ্গ
মমতাজ উদ্দিন আহমেদ“কী চাহ শঙ্খচীল” , “বর্ণচোর” , “স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা” , “বকুলপুরের স্বাধীনতা”
আলাউদ্দিন আল আজাদ“নরকে লাল গোলাপ”
নীলিমা ইব্রাহিম“যে অরণ্যে আলো নেই”
আব্দুল্লাহ আল মামুন“আয়নায় বন্ধুর মুখ”
জিয়া হায়দার“পঙ্কজবিভাস”
সাইদ আহমদ“প্রতিদিন একদিন”
রণেশ দাশগুপ্ত“ফেরী আসছে”

প্রবন্ধ

রচয়িতাপ্রবন্ধ
মেজর আব্দুল জলিল“A search for Identity”
মেজর জেনারেল সুখওয়ান্ত সিং“The liberation of Bangladesh”
ডঃ নীলিমা ইব্রাহীম“আমি বীরাঙ্গনা বলছি”
সেলিনা হোসেন“একাত্তরের ঢাকা”
রাবেয়া খাতুন“একাত্তরের নিশান”
আলাউদ্দিন আল আজাদ“ফেরারী ডায়েরী”

সম্পাদিত গ্রন্থ

রচয়িতাগ্রন্থ
হাসান হাফিজুর রহমান”মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসঃ দলিলপত্র ”: শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে ষোল খন্ডে “বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধ” বিষয়ক দলির সংগ্রহের প্রকল্প গৃহীত হয়েছিল ।
শামসুর রাহমান“বাংলাদেশ কথা কয়”
রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম“লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে” , “একাত্তরের বিজয় গাঁথা” , “শেখ মুজিব ও স্বাধীনতা সংগ্রাম” , “মুক্তিযুদ্ধ ও বুদ্ধিজীবী” , “মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস” , “প্রতিরোধের প্রথম প্রহর”

স্মৃতিকথা

রচয়িতাগল্প
এম আর আখতার মুকুল“আমি বিজয় দেখেছি”
জাহানারা ইমাম“একাত্তরের দিনগুলি” , “বুকের ভেতর আগুন”
সুফিয়া কামাল“একাত্তরের ডায়েরি”
আলাউদ্দিন আল আজাদ“ফেরারী ডায়েরী”

গল্প

রচয়িতাগল্প
শওকত ওসমান“জন্ম যদি তব বঙ্গে”
রাবেয়া খাতুন“মুক্তিযুদ্ধের গল্প (গল্প সংকলন)”

কবিতা

কবিকবিতা
শামসুর রহমান“স্বাধীনতা তুমি”
অ্যালেন গিনসবার্গ (USA)“সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড”

পত্রসংকলন

রচয়িতাগ্রন্থ
প্রথম আলো ( পত্রিকা ) ও গ্রামীণফোন কোম্পানি“একাত্তরের চিঠি” –বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানি গ্রামীণফোন ও জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো' যৌথ উদ্যোগে একাত্তরের চিঠি নামের মুক্তিযোদ্ধাদের এ পত্র সংকলনটি প্রকাশ করেছে (প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত)। এতে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের কাছে লিখিত ৮২টি পত্র স্থান পেয়েছে। ২৭মার্চ ২০০৯ বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় ।

অন্যান্য গ্রন্থ

রচয়িতাগ্রন্থ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান“আমার কিছু কথা”
মোনায়েম সরকার“বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু”
বেগম নুরজাহান“একাত্তরের কথামালা”
এন্থনি মাসকারেনহাস“বাংলাদেশ রক্তের ঋণ” , “দ্য রেইপ অব বাংলাদেশ”
আব্দুল গাফফার চৌধুরী“ইতিহাসের রক্ত পলাশ”
এম আর আখতার মুকুল“ওরা চারজন”

 

চলচ্চিত্র

 

প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ও পরিচালক

পরিচালকপ্রামাণ্য চলচ্চিত্র
জহির রায়হান“Stop Genocide (1971)” , “A state is Born (1971)”
বাবুল চৌধুরী“Innocent Millions (1971)”
তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ“মুক্তির গান (১৯৯৫)”
আলমগীর কবির“Liberation Fighters (1972)”

স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও পরিচালক

পরিচালকস্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র
খান আখতার হোসেন“দুরন্ত”
নাসির উদ্দীন ইউসুফ“একাত্তরের যীশু”
মোস্তফা কামাল“প্রত্যাবর্তন”
সুমন আহমেদ“নীল দংশন”
তানভীর মোকাম্মেল“হুলিয়া” , “জীবনঢুলী”: এই ছবিতে নিম্নবর্ণের দরিদ্র ঢাকি "জীবনকৃষ্ণ দাস" এর জীবন এবং তার এলাকায় ঘটে যাওয়া নারকীয় হত্যাযজ্ঞ আবির্ভূত হয়েছে।

পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও পরিচালক

পরিচালকপূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র
চাষী নজরুল ইসলাম“ওরা ১১ জন (১৯৭২)” , “হাঙ্গর নদী গ্রেনেড (১৯৯৭)”
আলমগীর কবির“ধীরে বহে মেঘনা (১৯৭৩)”
খান আতাউর রহমান“আবার তোরা মানুষ হ” , “এখনও অনেক রাত (১৯৯৭)”
সুভাষ দত্ত“অরুণোদয়ের অগ্নি সাক্ষী (১৯৭২)”
হুমায়ুন আহমেদ“আগুনের পরশমণি (১৯৯৫)”
গীতা মেহতা“ডেডলাইন বাংলাদেশ (১৯৭২)”
মমতাজ আলী“রক্তাক্ত বাংলা (১৯৭২)”

একাত্তর নামক সকল গ্রন্থ একসাথে দেওয়া হল কনফিউশন দূর করার জন্য

রচয়িতাগ্রন্থ
জাহানারা ইমামএকাত্তরের দিন গুলি (স্মৃতিকথা)
সুফিয়া কামালএকাত্তরের ডায়েরী (স্মৃতিকথা)
সেলিনা হোসেনএকাত্তরের ঢাকা (প্ৰবন্ধ)
রাবেয়া খাতুনএকাত্তরের নিশান
বেগম নূরজাহানএকাত্তরের কথামালা
এম আর আখতার মুকুলএকাত্তরের বর্ণমালা
এম আর আখতার মুকুলবিজয়-৭১
মেজর রফিকুল ইসলামএকাত্তরের বিজয় গাঁথা
গ্রামীণ ফোন ও প্রথম আলো কর্তৃক প্রকাশিতএকাত্তরের চিঠি
শাহরিয়ার কবিরএকাত্তরের যীশু
শামসুল হুদা চৌধুরীএকাত্তরের রণাঙ্গণ
common.content_added_by

বাংলায় উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ও চরিত্র

476
476
common.please_contribute_to_add_content_into বাংলায় উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ও চরিত্র.
common.content

সাহিত্যিকদের উপাধি ও ছদ্মনাম

1.3k
1.3k
নংকবি সাহিত্যিকদের প্রকৃত নামছদ্মনাম
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়অনিলা দেবী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরভানু সিংহ/আন্নাকালি পাকড়াশী
কাজী নজরুল ইসলামধুমকেতু/ব্যাঙাচি
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কমলাকান্ত
সুকুমার রায়তাতা
সুবোধ ঘোষকালপুরুষ/সুপান্থ
প্রেমেন্দ্র মিত্রকৃত্তিবাস
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ক্বচিৎ প্রৌঢ়
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়নীললোহিত
১০বিমল ঘোষমৌমাছি
১১তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়হাবু শর্মা
১২কালীপ্রসন্ন সিংহহুতোম পেঁচা
১৩মধুসূদন দত্তটিমোথি পেনপোয়েম
১৪অখিল নিয়োগীস্বপন বুড়ো
১৫প্রমথ চৌধুরীবীরবল
১৬সমরেশ বসুকালকূট/ভ্রমর
১৭প্রভাত কিরণ বসুকাকাবাবু
১৮রাজশেখর বসুপরশুরাম
১৯দেবব্রত মল্লিকভীষ্মদেব
২০নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়সুনন্দ
২১বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায়বনফুল
২২নিহাররঞ্জন গুপ্তবানভট্ট
২৩প্যারীচাঁদ মিত্রটেকচাঁদ ঠাকুর
২৪দেবেশ রায়বেদুইন
২৫বিনয় ঘোষকালপেঁচা
২৬চারুচন্দ্র চক্রবর্তীজরাসন্ধ
২৭বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রবিরূপাক্ষ
২৮বিনয় মুখোপাধ্যায়যাযাবর
২৯সৈয়দ মুজতবা আলীসত্যপীর
৩০আশুতোষ মুখোপাধ্যায়শ্রীবাস
৩১নিখিল সরকারশ্রীপান্থ
৩২অন্নদাশঙ্কর রায়লীলাময় রায়
৩৩শক্তি চট্টোপাধ্যায়রূপচাঁদ পক্ষী
৩৪প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়রাধারানী দেবী
৩৫ললিত মুখোপাধ্যায়বিজ্ঞান ভিক্ষু
৩৬অশোক গুপ্তবিক্রমাদিত্য
৩৭বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য্যবাণীকুমার
৩৮সুভাষ মুখোপাধ্যায়পদাতিক/ঢোল গোবিন্দ
৩৯শক্তিপদ রাজগুরুপঞ্চমুখ
৪০সত্যেন্দ্রনাথ দত্তনবকুমার/কিংশুক
৪১অচিন্তকুমার সেনগুপ্তনীহারিকা দেবী
৪২দীপেন্দ্র সান্যালনীলকন্ঠ
৪৩সুধীরকুমার রায়দেবদত্ত রায়
৪৫শরৎচন্দ্র পন্ডিতদাদাঠাকুর
৪৬শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়চন্দ্রহাঁস
৪৭ভবানী সেনগুপ্তচানক্য সেন
৪৮সতীনাথ ভাদুড়িচিত্রগুপ্ত
৪৯কিন্নর রায়শ্বেত কৃষ্ণ
৫০বিমল করবিদুর
৫১মতি নন্দীকালকেতু
৫২জীবনানন্দ দাশশ্রী
৫৩বিহারীলাল চট্টোপাধ্যায়নাদাপেটা হাঁদারাম
৫৪মোহিতলাল মজুমদারসত্য সুন্দর দাস
৫৫মধুসূদন মজুমদারদৃষ্টিহীন
৫৬প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
৫৭মহাশ্বেতা দেবীসুমিত্রা দেবী
৫৮গৌরকিশোর ঘোষরূপদর্শী
৫৯শম্ভু মিত্রশ্রী সঞ্জীব
৬০সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়অমিতাভ
৬১অমৃতলাল বন্দ্যোপাধ্যায়অমিয়া দেবী
৬২পরিমল গোস্বামীএককলমী
৬৩প্রাণতোষ ঘটকউদয় ভানু
৬৪রাম বসুকনিস্ক
৬৫শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়গৌড় মল্লার
৬৬মনমোহন ঘোষচিত্ত গুপ্ত
৬৭সুজিত নাগদিলদার
৬৮ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়পাঁচু ঠাকুর
৬৯শৈলেশ দেবহুরূপী
৭০প্রেমাঙ্কুর আতর্থীমহাস্থবির
৭১দিনেশ গঙ্গোপাধ্যায়শ্রীভট্ট
৭২সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়বীরভদ্র
৭৩তারাপদ রায়গ্রন্থকীট
৭৪বিমল মিত্রজাবালী
৭৫রাজা রামমোহন রায়শিবপ্রসাদ রায়
common.content_added_by

প্রায় একই নামের গ্রন্থ ও রচয়িতা

427
427
common.please_contribute_to_add_content_into প্রায় একই নামের গ্রন্থ ও রচয়িতা.
common.content

বিখ্যাত সাহিত্যিকদের পঙ্‌ক্তি ও উৎস

487
487
common.please_contribute_to_add_content_into বিখ্যাত সাহিত্যিকদের পঙ্‌ক্তি ও উৎস.
common.content

আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা

406
406
common.please_contribute_to_add_content_into আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা.
common.content

বাংলা সাহিত্যিক ও সাহিত্যকর্ম

2k
2k
common.please_contribute_to_add_content_into বাংলা সাহিত্যিক ও সাহিত্যকর্ম.
common.content

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

প্রমথ চৌধুরী

2.3k
2.3k

 

প্রমথ চৌধুরী

প্রমথ চৌধুরী বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক। তিনি ছিলেন একাধারে প্রাবন্ধিক, কবি ও ছোটগল্পকার। প্রমথ চৌধুরীর ছদ্মনাম ‘বীরবল’। প্রমথ চৌধুরী ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ৭ আগস্ট ব্রিটিশ ভারতের যশোরে জন্মগ্রহণ করেন তার পৈতৃক নিবাস বর্তমান বাংলাদেশের পাবনা জেলার অন্তর্গত চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রামে।

প্রমথ চৌধুরী বাংলা গদ্যে চলিত রীতির প্রবর্তক হিসাবে পরিচিত। সবুজপত্র পত্রিকা সম্পাদনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে চলিতরীতি প্রবর্তন করেন। এছাড়া বাংলা সাহিত্যে প্রথম বিদ্রূপাত্মক প্রবন্ধ রচনা করেন প্রমথ চৌধুরী। ছোটোগল্প ও সনেট রচনাতেও হিসেবেও তার বিশিষ্ট অবদান রয়েছে।

প্রমথ চৌধুরীর সম্পাদিত পত্রিকা সবুজপত্র এবং

বিশ্বভারতী পত্রিকা। তিনি ছিলেন বাংলা রেনেসাঁর সাহিত্যিক।

 

প্রমথ চৌধুরীর শিক্ষাজীবন

শিক্ষাজীবনে প্রমথ চৌধুরী ছিলেন অসাধারণ কৃতিত্বের অধিকারী। তিনি কলকাতা হেয়ার স্কুল থেকে এন্ট্রান্স ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে এফ এ পাস করেন।

প্রমথ চৌধুরী প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৮৮৯ সালে দর্শনে বিএ (অনার্স) এবং ১৮৯০ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম শ্রেণিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন এবং পরে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য বিলাত যান।

বিলাত থেকে ফিরে এসে ব্যারিস্টারি পেশায় যোগদান না করে তিনি কিছুকাল ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা করেন এবং পরে সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৪১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘জগত্তারিণী পদক’ লাভ করেন ।

 

পারিবারিক ও কর্মজীবনে প্রমথ চৌধুরী

প্রমথ চৌধুরী কিছুদিন কলকাতা হাইকোর্টে আইনব্যবসা করেন। কিছুকাল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কলেজে পড়িয়েছেন। তিনি ঠাকুর এস্টেটের ম্যানেজার ছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড়ো ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৪২-১৯২৩) কন্যা ইন্দিরা দেবীর (১৮৭৩-১৯৬০) সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সে হিসেবে প্রমথ চৌধুরী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইঝি জামাতা। লেখক আশুতোষ চৌধুরী (১৮৮৮-১৯৪৪) সম্পর্কে প্রমথ চৌধুরীর বড়ো ভাই। রবীন্দ্রনাথের ভগিনী প্রতিভা দেবীর সহিত আশুতোষ চৌধুরী বিবাহ হয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও প্রমথ চৌধুরী

প্রবন্ধ সাহিত্যের জন্য প্রমথ চৌধুরী বেশি বিখ্যাত। তার প্রথম প্রবন্ধ জয়দেব প্রকাশিত হয় সাধনা পত্রিকায় ১৮৯৩ সালে। প্রমথ চৌধুরীর সাহিত্যিক ছদ্মনাম ছিল ‘বীরবল’।

প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত সবুজপত্র বাংলা সাহিত্যে চলতি ভাষারীতি প্রবর্তনে আগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তার প্রবর্তিত গদ্যরীতিতে সবুজপত্র নামে বিখ্যাত সাহিত্যপত্র ইতিহাসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তারই নেতৃত্বে বাংলা সাহিত্যে নতুন গদ্যধারা সূচিত হয়।

প্রমথ চৌধুরী বাংলা সাহিত্যে ইতালিয় রূপবন্ধের সনেট লিখেছেন। এছাড়াও তিনি বিশ্বভারতী পত্রিকার সম্পাদনা করেন।

 

প্রমথ চৌধুরীর রচনাসমগ্র

প্রবন্ধ গ্রন্থ

তেল-নুন-লকড়ী (১৯০৬)

বীরবলের হালখাতা (১৯১৬)

নানাকথা (১৯১৯)

ভাষার কথা

আমাদের শিক্ষা (১৯২০)

রায়তের কথা (১৯১৯)

নানাচর্চা (১৯৩২)

প্রবন্ধ সংগ্রহ (১৯৫২ ১ম খণ্ড ও ১৯৫৩ ২য় খণ্ড)

গল্পগ্রন্থ

চার-ইয়ারী কথা (১৯১৬)

আহুতি (১৯১৯)

নীললোহিত (১৯৪১)

অনুকথা সপ্তক

ঘোষালে ত্রিকথা

কাব্যগ্রন্থ

সনেট পঞ্চাশৎ (১৯১৩)

পদচারণ (১৯১৯)

 

মৃত্যু

প্রমথ চৌধুরী ২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬ তারিখ ব্রিটিশ ভারতের কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

common.content_added_by

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

কালান্তর
বীরবলের হালখাতা
পান্থজনের কথা
একদা
লোককে শিক্ষা দেয়া
আনন্দ দেয়া
জ্ঞানদান করা
মনোরঞ্জন করা

কাজী নজরুল ইসলাম

1.6k
1.6k

ইসলাম, কাজী নজরুল (১৮৯৯-১৯৭৬)  বাংলাদেশের জাতীয় কবি এবং অবিভক্ত বাংলার সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। নজরুল ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ  (২৪ মে ১৮৯৯) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা কাজী ফকির আহমদ ছিলেন মসজিদের  ইমাম ও মাযারের খাদেম। নজরুলের ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। ১৯০৮ সালে পিতার মৃত্যু হলে নজরুল পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য হাজী পালোয়ানের মাযারের সেবক এবং মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করেন। তিনি গ্রামের  মকতব থেকে নিম্ন প্রাথমিক পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন। শৈশবের এ শিক্ষা ও শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে নজরুল অল্পবয়সেই ইসলাম ধর্মের মৌলিক আচার-অনুষ্ঠান, যেমন পবিত্র  কুরআন পাঠ,  নামায, রোযা,  হজ্জ,  যাকাত প্রভৃতি বিষয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ লাভ করেন। পরবর্তী জীবনে বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীতে ইসলামি ঐতিহ্যের রূপায়ণে ওই অভিজ্ঞতা সহায়ক হয়েছিল।

কাজী ইসলাম নজরুল

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তিনি ‘বিদ্রোহী কবি’ এবং আধুনিক বাংলা গানের জগতে ‘বুলবুল’ নামে খ্যাত। রবীন্দ্রনাথের অনুকরণমুক্ত কবিতা রচনায় তাঁর অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর ব্যতিক্রমধর্মী কবিতার জন্যই ‘ত্রিশোত্তর আধুনিক কবিতা’র সৃষ্টি সহজতর হয়েছিল বলে মনে করা হয়। নজরুল সাহিত্যকর্ম এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে অবিভক্ত বাংলায় পরাধীনতা, সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, মৌলবাদ এবং দেশি-বিদেশি শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন। এ কারণে ইংরেজ সরকার তাঁর কয়েকটি গ্রন্থ ও পত্রিকা নিষিদ্ধ করে এবং তাঁকে কারাদন্ডে দন্ডিত করে। নজরুলও আদালতে লিখিত রাজবন্দীর জবানবন্দী দিয়ে এবং প্রায় চল্লিশ দিন একটানা  অনশন করে ইংরেজ সরকারের জেল-জুলুমের প্রতিবাদ জানিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন এবং এর সমর্থনে নোবেল বিজয়ী  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে গ্রন্থ উৎসর্গ করে শ্রদ্ধা জানান।

নজরুল তাঁর কবিতায় ব্যতিক্রমী এমন সব বিষয় ও শব্দ ব্যবহার করেন, যা আগে কখনও ব্যবহূত হয়নি। কবিতায় তিনি সমকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক যন্ত্রণাকে ধারণ করায় অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তবে মানবসভ্যতার কয়েকটি মৌলিক সমস্যাও ছিল তাঁর কবিতার উপজীব্য।

নজরুল তাঁর সৃষ্টিকর্মে হিন্দু-মুসলিম মিশ্র ঐতিহ্যের পরিচর্যা করেন। কবিতা ও গানে তিনি এ মিশ্র ঐতিহ্যচেতনাবশত প্রচলিত বাংলা ছন্দোরীতি ছাড়াও অনেক সংস্কৃত ও আরবি ছন্দ ব্যবহার করেন। নজরুলের ইতিহাস-চেতনায় ছিল সমকালীন এবং দূর ও নিকট অতীতের ইতিহাস, সমভাবে স্বদেশ ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব।

বাংলা সঙ্গীতের প্রায় সবকটি ধারার পরিচর্যা ও পরিপুষ্টি, বাংলা গানকে উত্তর ভারতীয় রাগসঙ্গীতের দৃঢ় ভিত্তির ওপর স্থাপন এবং লোকসঙ্গীতাশ্রয়ী বাংলা গানকে উপমহাদেশের বৃহত্তর মার্গসঙ্গীতের ঐতিহ্যের সঙ্গে সংযুক্তি নজরুলের মৌলিক সঙ্গীতপ্রতিভার পরিচায়ক।  নজরুলসঙ্গীত বাংলা সঙ্গীতের অণুবিশ্ব, তদুপরি উত্তর ভারতীয় রাগসঙ্গীতের বঙ্গীয় সংস্করণ। বাণী ও সুরের বৈচিত্র্যে নজরুল বাংলা গানকে যথার্থ আধুনিক সঙ্গীতে রূপান্তরিত করেন।

মকতব, মাযার ও মসজিদ-জীবনের পর নজরুল  রাঢ় বাংলার (পশ্চিম বাংলার বর্ধমান-বীরভূম অঞ্চল) কবিতা, গান আর নৃত্যের মিশ্র আঙ্গিক  লোকনাট্য লেটোদলে যোগদান করেন। ঐসব লোকনাট্যের দলে বালক নজরুল ছিলেন একাধারে  পালাগান রচয়িতা ও অভিনেতা। নজরুলের কবি ও শিল্পী জীবনের শুরু এ লেটোদল থেকেই। হিন্দু পুরাণের সঙ্গে নজরুলের পরিচয়ও লেটোদল থেকেই শুরু হয়েছিল। তাৎক্ষণিকভাবে কবিতা ও গান রচনার কৌশল নজরুল  লেটো বা কবিগানের দলেই রপ্ত করেন। এ সময় লেটোদলের জন্য কিশোর কবি নজরুলের সৃষ্টি চাষার সঙ, শকুনিবধ, রাজা যুধিষ্ঠিরের সঙ, দাতা কর্ণ, আকবর বাদশাহ, কবি কালিদাস, বিদ্যাভূতুম, রাজপুত্রের সঙ, বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ, মেঘনাদ বধ প্রভৃতি।

১৯১০ সালে নজরুল পুনরায় ছাত্রজীবনে ফিরে যান। প্রথমে তিনি রানীগঞ্জ সিয়ারসোল রাজ স্কুল এবং পরে মাথরুন উচ্চ ইংরেজি স্কুলে (পরে নবীনচন্দ্র ইনস্টিটিউশন) ভর্তি হন। শেষোক্ত স্কুলের হেড-মাস্টার ছিলেন কবি  কুমুদরঞ্জন মল্লিক; নজরুল তাঁর সান্নিধ্য লাভ করেন। দুর্ভাগ্যক্রমে আর্থিক অনটনের কারণে ষষ্ঠ শ্রেণির পর নজরুলের ছাত্রজীবনে আবার বিঘ্ন ঘটে। মাথরুন স্কুল ছেড়ে তিনি প্রথমে বাসুদেবের কবিদলে, পরে এক খ্রিস্টান রেলওয়ে গার্ডের খানসামা পদে এবং শেষে আসানসোলে চা-রুটির দোকানে কাজ নেন। এভাবে কিশোর শ্রমিক নজরুল তাঁর বাল্যজীবনেই রূঢ় বাস্তবতার সঙ্গে সম্যকভাবে পরিচিত হন।

চা-রুটির দোকানে চাকরি করার সময় আসানসোলের দারোগা রফিজউল্লার সঙ্গে নজরুলের পরিচয় হয় এবং তাঁর সুবাদেই নজরুল ১৯১৪ সালে  ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এক বছর পর তিনি পুনরায় নিজের গ্রামে ফিরে যান এবং ১৯১৫ সালে আবার রানীগঞ্জ সিয়ারসোল রাজস্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এ স্কুলে নজরুল ১৯১৫-১৭ সালে একটানা অষ্টম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। প্রিটেস্ট পরীক্ষার সময় ১৯১৭ সালের শেষদিকে নজরুল সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ছাত্রজীবনের শেষ বছরগুলিতে নজরুল সিয়ারসোল স্কুলের চারজন শিক্ষক দ্বারা নানাভাবে প্রভাবিত হন। তাঁরা হলেন উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে সতীশচন্দ্র কাঞ্জিলাল, বিপ্লবী ভাবধারায় নিবারণচন্দ্র ঘটক, ফারসি সাহিত্যে হাফিজ নুরুন্নবী এবং সাহিত্যচর্চায় নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।

১৯১৭ সালের শেষদিক থেকে ১৯২০ সালের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় আড়াই বছর নজরুলের সামরিক জীবনের পরিধি। এ সময়ের মধ্যে তিনি ৪৯ বেঙ্গলি রেজিমেন্টের একজন সাধারণ সৈনিক থেকে ব্যাটেলিয়ন কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার পর্যন্ত হয়েছিলেন। রেজিমেন্টের পাঞ্জাবি মৌলবির নিকট তিনি ফারসি ভাষা শেখেন, সঙ্গীতানুরাগী সহসৈনিকদের সঙ্গে দেশি-বিদেশি  বাদ্যযন্ত্র সহযোগে সঙ্গীতচর্চা করেন এবং একই সঙ্গে সমভাবে গদ্যে-পদ্যে সাহিত্যচর্চা করেন। করাচি সেনানিবাসে বসে রচিত এবং কলকাতার বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত নজরুলের রচনাবলির মধ্যে রয়েছে ‘বাউন্ডুলের আত্মকাহিনী’ (সওগাত, মে ১৯১৯) নামক প্রথম গদ্য রচনা, প্রথম প্রকাশিত কবিতা ‘মুক্তি’ (বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, জুলাই ১৯১৯) এবং অন্যান্য রচনা: গল্প ‘হেনা’, ‘ব্যথার দান’, ‘মেহের নেগার’, ‘ঘুমের ঘোরে’; কবিতা ‘আশায়’, ‘কবিতা সমাধি’ প্রভৃতি। উল্লেখযোগ্য যে, করাচি সেনানিবাসে থেকেও তিনি কলকাতার বিভিন্ন সাহিত্যপত্রিকা, যেমন:  প্রবাসী,  ভারতবর্ষ,  ভারতী,  মানসী, মর্ম্মবাণী,  সবুজপত্র, সওগাত ও বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকার গ্রাহক ছিলেন। তাছাড়া তাঁর কাছে রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, এমনকি ফারসি কবি হাফিজেরও কিছু গ্রন্থ ছিল। প্রকৃতপক্ষে নজরুলের আনুষ্ঠানিক সাহিত্যচর্চার শুরু করাচির সেনানিবাসে থাকাবস্থায়ই।

প্রথম মহাযুদ্ধ শেষে ১৯২০ সালের মার্চ মাসে নজরুল দেশে ফিরে কলকাতায় সাহিত্যিক-সাংবাদিক জীবন শুরু করেন। কলকাতায় তাঁর প্রথম আশ্রয় ছিল ৩২নং কলেজ স্ট্রীটে  বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি-র অফিসে সমিতির অন্যতম কর্মকর্তা মুজফ্ফর আহমদের সঙ্গে। শুরুতেই  মোসলেম ভারত, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, উপাসনা  প্রভৃতি পত্রিকায় তাঁর সদ্যোরচিত বাঁধন-হারা   উপন্যাস এবং ‘বোধন’, ‘শাত-ইল-আরব’, ‘বাদল প্রাতের শরাব’, ‘আগমনী’, ‘খেয়া-পারের তরণী’, ‘কোরবানী’, ‘মোহরর্ম’, ‘ফাতেহা-ই-দোয়াজ্দহম্’ প্রভৃতি কবিতা প্রকাশিত হলে বাংলা সাহিত্য ক্ষেত্রে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বাংলা সাহিত্যের এ নবীন প্রতিভার প্রতি সাহিত্যানুরাগীদের দৃষ্টি পড়ে। কবি-সমালোচক  মোহিতলাল মজুমদার মোসলেম ভারত পত্রিকায় প্রকাশিত এক পত্রের মাধ্যমে নজরুলের ‘খেয়া-পারের তরণী’ এবং ‘বাদল প্রাতের শরাব’ কবিতাদুটির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং বাংলার সারস্বত সমাজে তাঁকে স্বাগত জানান। নজরুল বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির অফিসে মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, আফজালুল হক,  কাজী আবদুল ওদুদ,  মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমুখ সমকালীন মুসলমান সাহিত্যিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন। অপরদিকে কলকাতার তৎকালীন জমজমাট দুটি সাহিত্যিক আসর ‘গজেনদার আড্ডা’ ও ‘ভারতীয় আড্ডা’য়  অতুলপ্রসাদ সেন, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর,  অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর,  সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, ওস্তাদ করমতুল্লা খাঁ,  প্রেমাঙ্কুর আতর্থী,  শিশিরকুমার ভাদুড়ী, হেমেন্দ্রকুমার রায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নির্মলেন্দু লাহিড়ী, ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ বাংলার সমকালীন শিল্প, সাহিত্য,  সঙ্গীত ও নাট্যজগতের দিকপালদের সঙ্গে পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ হবার সুযোগ পান। নজরুল ১৯২১ সালের অক্টোবর মাসে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন; তখন থেকে ১৯৪১ পর্যন্ত দু দশক বাংলার দু প্রধান কবির মধ্যে যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠতা অক্ষুণ্ণ ছিল।

এ.কে ফজলুল হকের (শেরে-বাংলা) সম্পাদনায় অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ১৯২০ সালের ১২ জুলাই সান্ধ্য দৈনিক  নবযুগ প্রকাশিত হলে তার মাধ্যমেই নজরুলের সাংবাদিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। নজরুলের লেখা ‘মুহাজিরীন হত্যার জন্য দায়ী কে?’ প্রবন্ধের জন্য ওই বছরেরই আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে পত্রিকার জামানত বাজেয়াপ্ত হয় এবং নজরুলের ওপর পুলিশের দৃষ্টি পড়ে। নবযুগ পত্রিকার সাংবাদিকরূপে নজরুল যেমন একদিকে স্বদেশ ও আন্তর্জাতিক জগতের রাজনৈতিক-সামাজিক অবস্থা নিয়ে লিখছিলেন, তেমনি মুজফ্ফর আহমদের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমিতিতে উপস্থিত থেকে সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল হচ্ছিলেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ঘরোয়া আসর ও অনুষ্ঠানে যোগদান এবং সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে তরুণ কবির সংস্কৃতিচর্চাও অগ্রসর হচ্ছিল। নজরুল তখনও নিজে গান লিখে সুর করতে শুরু করেন নি, তবে তাঁর কয়েকটি কবিতায় সুর দিয়ে তার স্বরলিপিসহ পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করেছিলেন ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গীতজ্ঞ মোহিনী সেনগুপ্তা, যেমন: ‘হয়ত তোমার পাব দেখা’, ‘ওরে এ কোন্ স্নেহ-সুরধুনী’। নজরুলের গান ‘বাজাও প্রভু বাজাও ঘন’ প্রথম প্রকাশিত হয় সওগাত পত্রিকার ১৩২৭ সালের বৈশাখ সংখ্যায়।

১৯২১ সালের এপ্রিল-জুন মাস নজরুলের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ সময়। এ সময় তিনি মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে পরিচিত হন পুস্তক প্রকাশক আলী আকবর খানের সঙ্গে এবং তাঁর সঙ্গেই নজরুল প্রথম কুমিল্লায় বিরজাসুন্দরী দেবীর বাড়িতে আসেন। এখানে তিনি প্রমীলার সঙ্গে পরিচিত হন এবং এ পরিচয়ের সূত্র ধরেই পরে তাঁরা পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন।

কুমিল্লা থেকে নজরুল দৌলতপুর গ্রামে আলী আকবর খানের বাড়িতে গিয়ে কিছুকাল অবস্থান করেন। সেখান থেকে ১৯ জুন পুনরায় কুমিল্লায় ফিরে তিনি ১৭ দিন অবস্থান করেন। তখন অসহযোগ আন্দোলনে  কুমিল্লা উদ্বেলিত। নজরুল বিভিন্ন শোভাযাত্রা ও সভায় যোগ দিয়ে গাইলেন সদ্যোরচিত ও সুরারোপিত স্বদেশী গান: ‘এ কোনো পাগল পথিক ছুটে এলো বন্দিনী মার আঙ্গিনায়’, ‘আজি রক্ত-নিশি ভোরে/ একি এ শুনি ওরে/ মুক্তি-কোলাহল বন্দী-শৃঙ্খলে’ প্রভৃতি। এভাবেই কলকাতার সৌখিন গীতিকার ও গায়ক নজরুল কুমিল্লায় অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান এবং পরাধীনতার বিরুদ্ধে জাগরণী গান রচনা ও পরিবেশনার মধ্য দিয়ে স্বদেশী গান রচয়িতা ও রাজনৈতিক কর্মীতে পরিণত হন।

১৯২১ সালের নভেম্বর মাসে নজরুল আবার কুমিল্লা যান। ২১ নভেম্বর ভারতব্যাপী হরতাল ছিল। নজরুল পুনরায় পথে নামেন এবং অসহযোগ মিছিলের সঙ্গে শহর প্রদক্ষিণ করে গাইলেন: ‘ভিক্ষা দাও! ভিক্ষা দাও! ফিরে চাও ওগো পুরবাসী।’ এ সময় তুরস্কে মধ্যযুগীয় সামন্ত শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতে মুসলমানরা  খিলাফত আন্দোলন করছিল। মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অসহযোগ আর মওলানা মোহাম্মদ আলী ও শওকত আলীর নেতৃত্বে খিলাফত আন্দোলনের দর্শনে নজরুল আস্থাশীল ছিলেন না। স্বদেশে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে স্বরাজ বা স্বাধীনতা অর্জন আর মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে তুরস্কের সালতানাত উচ্ছেদকারী নব্য তুর্কি আন্দোলনের প্রতি নজরুলের সমর্থন ছিল; তথাপি ভারতের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের সম্মিলিত সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের জন্যই তিনি ওই দুটি আন্দোলনে যোগদান করেন।

১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কুমিল্লা থেকে  কলকাতা ফেরার পর নজরুলের দুটি ঐতিহাসিক ও বৈপ্লবিক সৃষ্টিকর্ম হচ্ছে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ও ‘ভাঙার গান’ সঙ্গীত। এ দুটি রচনা বাংলা কবিতা ও গানের ধারাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিল; ‘বিদ্রোহী’ কবিতার জন্য নজরুল বিপুল খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

১৯২১ সালের শেষদিকে নজরুল আরেকটি বিখ্যাত কবিতা ‘কামাল পাশা’ রচনা করেন, যার মাধ্যমে তাঁর সমকালীন আন্তর্জাতিক ইতিহাস-চেতনা এবং ভারতীয় মুসলমানদের খিলাফত আন্দোলনের অসারতার পরিচয় পাওয়া যায়। নজরুল তাঁর রাষ্ট্রীয় ধ্যান-ধারণায় সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছিলেন মোস্তফা কামাল পাশার নেতৃত্ব দ্বারা, কারণ তিনি সামন্ততান্ত্রিক খিলাফত বা তুরস্কের সুলতানকে উচ্ছেদ করে তুরস্ককে একটি আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরিত করেছিলেন। তুরস্কের সমাজজীবন থেকে মোস্তফা কামাল যে মৌলবাদ ও পর্দাপ্রথা দূর করেছিলেন, তা নজরুলকে বেশি অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি ভেবেছিলেন, তুরস্কে যা সম্ভবপর, ভারত ও বাংলায় তা সম্ভবপর নয় কেন? বস্ত্তত, গোঁড়ামি, রক্ষণশীলতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার ও আচারসর্বস্বতা থেকে দেশবাসী, বিশেষত স্বধর্মীদের মুক্তির জন্য নজরুল আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। ১৯১৭ সালের রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবও নজরুলকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছিল। নজরুলের  লাঙল ও গণবাণী পত্রিকায় প্রকাশিত ‘সাম্যবাদী’ ও ‘সর্বহারা’ কবিতাগুচ্ছ এবং কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল-এর অনুবাদ ‘জাগ অনশন বন্দী ওঠ রে যত’ এবং ‘রেড ফ্লাগ’ অবলম্বনে রক্তপতাকার গান এর প্রমাণ।

১৯২২ সালে নজরুলের যেসব সাহিত্যকর্ম প্রকাশিত হয় সেসবের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল গল্প-সংকলন ব্যথার দান, কবিতা-সংকলন অগ্নি-বীণা ও প্রবন্ধ-সংকলন যুগবাণী। বাংলা কবিতার পালাবদলকারী কাব্য অগ্নি-বীণা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রথম সংস্করণ শেষ হয়ে যায় এবং পরপর কয়েকটি নতুন সংস্করণ প্রকাশ করতে হয়; কারণ এ কাব্যে নজরুলের ‘প্রলয়োল্লাস’, ‘আগমনী’, ‘খেয়াপারের তরণী’, ‘শাত-ইল্-আরব’, ‘বিদ্রোহী’, ‘কামাল পাশা’ প্রভৃতি বাংলা সাহিত্যে সাড়া জাগানো এবং বাংলা কবিতার মোড় ফেরানো কবিতা সংকলিত হয়েছিল।

১৯২২ সালে নজরুলের অপর বিপ্লবী উদ্যম হলো  ধূমকেতু পত্রিকার প্রকাশ (১২ আগস্ট)। পত্রিকাটি সপ্তাহে দুবার প্রকাশিত হতো। বিশের দশকে অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনের ব্যর্থতার পর সশস্ত্র বিপ্লববাদের পুনরাবির্ভাবে ধূমকেতু পত্রিকার তাৎপর্যপূর্ণ অবদান ছিল। এক অর্থে এ পত্রিকা হয়ে উঠেছিল সশস্ত্র বিপ্লবীদের মুখপত্র। পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো ‘কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু, আয় চলে আয়রে ধূমকেতু। অাঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এ দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।’ রবীন্দ্রনাথের এ আশীর্বাণী শীর্ষে ধারণ করে। ধূমকেতুর ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯২২ সংখ্যায় নজরুলের প্রচ্ছন্ন রাজনৈতিক কবিতা ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ প্রকাশিত হলে ৮ নভেম্বর পত্রিকার ওই সংখ্যাটি নিষিদ্ধ করা হয়। নজরুলের প্রবন্ধগ্রন্থ যুগবাণী বাজেয়াপ্ত হয় ২৩ নভেম্বর ১৯২২। একই দিনে নজরুলকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করে কলকাতায় আনা হয়। বিচারাধীন বন্দি হিসেবে ১৯২৩ সালের ৭ জানুয়ারি নজরুল আত্মপক্ষ সমর্থন করে চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট সুইনহোর আদালতে যে জবানবন্দী প্রদান করেন, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তা ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ নামে সাহিত্য-মর্যাদা পেয়ে আসছে। ১৬ জানুয়ারি বিচারের রায়ে নজরুল এক বছর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হন।

নজরুল যখন আলীপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দি তখন রবীন্দ্রনাথ তাঁর বসন্ত গীতিনাট্য তাঁকে উৎসর্গ করেন (২২ জানুয়ারি ১৯২৩)। এ ঘটনায় উল্লসিত নজরুল জেলখানায় বসে তাঁর অনুপম কবিতা ‘আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’ রচনা করেন। সমকালীন অনেক রবীন্দ্রভক্ত ও অনুরাগী কবি-সাহিত্যিক বিষয়টি ভালো চোখে দেখেন নি। এ ব্যাপারে কেউ কেউ অভিযোগ করলে রবীন্দ্রনাথ তাঁদের নজরুল-কাব্যপাঠের পরামর্শ দেন এবং বলেন, ‘...যুগের মনকে যা প্রতিফলিত করে, তা শুধু কাব্য নয়, মহাকাব্য।’

১৯২৩ সালের ১৪ এপ্রিল নজরুলকে হুগলি জেলে স্থানান্তর করা হয়। রাজবন্দিদের প্রতি ইংরেজ জেল-সুপারের দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে ওই দিন থেকেই তিনি অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। রবীন্দ্রনাথ অনশন ভঙ্গ করার অনুরোধ জানিয়ে নজরুলকে টেলিগ্রাম করেন: ‘Give up hunger strike, our literature claims you.’ অবশ্য জেল কর্তৃপক্ষের বিরূপ মনোভাবের কারণে নজরুল টেলিগ্রামটি পান নি। এদিকে জনমতের চাপে ১৯২৩ সালের ২২ মে জেল-পরিদর্শক ড. আবদুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী হুগলি জেল পরিদর্শন করেন এবং তাঁর আশ্বাস ও অনুরোধে ওই দিনই নজরুল চল্লিশ দিনের অনশন ভঙ্গ করেন। নজরুলকে ১৯২৩ সালের ১৮ জুন বহরমপুর জেলে স্থানান্তর করা হয় এবং এক বছর তিন সপ্তাহ কারাবাসের পর ১৫ ডিসেম্বর তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। হুগলি জেলে বসে নজরুল রচনা করেন ‘এই শিকল-পরা ছল মোদের এ শিকল-পরা ছল’, আর বহরমপুর জেলে ‘জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত-জালিয়াৎ খেল্ছে জুয়া’ এ বিখ্যাত গান দুটি।

নজরুলের প্রেম ও প্রকৃতির কবিতার প্রথম সংকলন দোলন-চাঁপা  প্রকাশিত হয় ১৯২৩ সালের অক্টোবরে। এতে সংকলিত দীর্ঘ কবিতা ‘পূজারিণী’-তে নজরুলের রোমান্টিক প্রেম-চেতনার বহুমাত্রিক স্বরূপ  প্রকাশিত হয়েছে।

১৯২৪ সালের ২৫ এপ্রিল কলকাতায় নজরুল ও প্রমীলার বিবাহ সম্পন্ন হয়। প্রমীলা ছিলেন ব্রাহ্মসমাজভুক্ত। তাঁর মা গিরিবালা দেবী ছাড়া পরিবারের অন্যরা এ বিবাহ সমর্থন করেননি। নজরুলও আত্মীয়-স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। হুগলির মহীয়সী মহিলা মিসেস মাসুমা রহমান বিবাহপর্বে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। নজরুল হুগলিতে সংসার পাতেন।

১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নজরুলের গান ও কবিতা সংকলন বিষের বাঁশী এবং একই মাসে ভাঙ্গার গান প্রকাশিত হয়। দুটি গ্রন্থই ওই বছর অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হয়।

১৯২৫ সালে নজরুলের গানের প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয় হিজ মাস্টার্স ভয়েস (এইচ.এম.ভি) কোম্পানি থেকে, যদিও ১৯২৮ সালের আগে নজরুল  গ্রামোফোন কোম্পানির সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট হন নি। শিল্পী হরেন্দ্রনাথ দত্তের কণ্ঠে ‘জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত-জালিয়াৎ খেল্ছে জুয়া’ ও ‘যাক পুড়ে যাক বিধির বিধান সত্য হোক’ গান দুটি রেকর্ড করা হয়।

নজরুল এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমিতি ও অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন এবং স্বরচিত স্বদেশী গান পরিবেশন করে পরাধীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রামে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি তাঁর একটি জনপ্রিয় স্বদেশী গান ‘ঘোর্ রে ঘোর্ রে আমার সাধের চর্কা ঘোর’ ১৯২৫ সালের মে মাসে ফরিদপুরে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের অধিবেশনে মহাত্মা গান্ধী ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের উপস্থিতিতে পরিবেশন করেন। ১৯২৫ সালের শেষ দিকে নজরুল প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগদান করেন। তিনি কুমিল্লা, মেদিনীপুর, হুগলি,  ফরিদপুর, বাঁকুড়া এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক সভা-সমিতিতে অংশগ্রহণ করেন। নজরুল এ সময় বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সদস্য হওয়া ছাড়াও শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলনের জন্য ‘শ্রমিক-প্রজা-স্বরাজ দল’ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। রাজনীতিক নজরুলের একটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ ছিল সাপ্তাহিক লাঙ্গল পত্রিকা প্রকাশ (১৬ ডিসেম্বর ১৯২৫)। তিনি এ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ছিলেন। এর প্রথম সংখ্যাতেই নজরুলের ‘সাম্যবাদী’ কবিতাসমষ্টি মুদ্রিত হয়। লাঙ্গল ছিল বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম শ্রেণিসচেতন সাপ্তাহিক পত্রিকা। এতে প্রকাশিত ‘শ্রমিক-প্রজা-স্বরাজ দলে’র ম্যানিফেস্টোতে প্রথম ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি উত্থাপিত হয়। এ সময় নজরুল পেশাজীবী শ্রমিক-কৃষক সংগঠনের উপযোগী সাম্যবাদী ও সর্বহারা  কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন।

১৯২৬ সালে নজরুল কৃষ্ণনগরে বসবাস শুরু করেন এবং বাংলা গানে এক নতুন ধারার সংযোজন করেন। তিনি স্বদেশী গানকে স্বাধীনতা ও দেশাত্মবোধের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সর্বহারা শ্রেণির গণসঙ্গীতে রূপান্তরিত করেন। স্মরণীয় যে, ১৯২৭ সালের এপ্রিল মাসে নজরুল কলকাতার প্রথম বামপন্থী সাপ্তাহিক গণবাণীর (১৯২৭ সালের ১২ আগস্ট থেকে গণবাণী ও লাঙ্গল একীভূত হয়) জন্য রচনা করেন ‘কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল’ ও ‘রেড ফ্লাগ’ অবলম্বনে ‘জাগো অনশন বন্দী’, ‘রক্তপতাকার গান’ ইত্যাদি। ১৯২৫ সালে নজরুলের প্রকাশনাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল: গল্প-সংকলন রিক্তের বেদন, কবিতা ও গানের সংকলন চিত্তনামা, ছায়ানট, সাম্যবাদী ও পূবের হাওয়া। হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের অগ্রদূত দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের অকাল মৃত্যুতে (১৬ জুন ১৯২৫) শোকাহত নজরুল কর্তৃক রচিত গান ও কবিতা নিয়ে চিত্তনামা গ্রন্থটি সংকলিত হয়।

১৯২৬ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় আইনসভার উচ্চ পরিষদের সদস্যপদের জন্য পূর্ববঙ্গ থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নজরুলের রাজনৈতিক জীবনে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এ উপলক্ষে তিনি পূর্ববাংলায়, বিশেষত ঢাকা বিভাগে ব্যাপকভাবে সফর করেন। স্কুলজীবনে ত্রিশাল-দরিরামপুরে থাকাকালে এ অঞ্চল সম্পর্কে তাঁর যে অভিজ্ঞতার সূত্রপাত হয়, রাজনৈতিক ও বৈবাহিক কারণে তা আরও গভীর হয়।

নজরুল ছিলেন বাংলা  গজল গানের স্রষ্টা। গণসঙ্গীত ও গজলে যৌবনের দুটি বিশিষ্ট দিক সংগ্রাম ও প্রেমের পরিচর্যাই ছিল মুখ্য। নজরুল গজল আঙ্গিক সংযোজনের মাধ্যমে বাংলা গানের প্রচলিত ধারায় বৈচিত্র্য আনয়ন করেন। তাঁর অধিকাংশ গজলের বাণীই উৎকৃষ্ট কবিতা এবং তার সুর রাগভিত্তিক। আঙ্গিকের দিক থেকে সেগুলি উর্দু গজলের মতো তালযুক্ত ও তালছাড়া গীত। নজরুলের বাংলা গজল গানের জনপ্রিয়তা সমকালীন বাংলা গানের ইতিহাসে ছিল তুলনাহীন। ১৯২৬-২৭ সালে কৃষ্ণনগর জীবনে নজরুল উভয় ধারায় বহুসংখ্যক গান রচনা করেন। ওই সময়ে তিনি নিজের গানের স্বরলিপি প্রকাশ করতে থাকেন। এসব গান থেকে স্পষ্ট হয় যে, নজরুলের সৃজনশীল মৌলিক সঙ্গীত প্রতিভার প্রথম স্ফুরণ ঘটে ১৯২৬-২৭ সালে কৃষ্ণনগরে। অথচ নজরুলের কৃষ্ণনগর জীবন ছিল অভাব-অনটন, রোগ-শোক ও দুঃখ-দারিদ্র্যক্লিষ্ট। তখনও পর্যন্ত নজরুল কোনো প্রচার মাধ্যমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হন নি, তবে  দিলীপকুমার রায় ও সাহানা দেবীর মতো বড় মাপের শিল্পী ও সঙ্গীতজ্ঞ নজরুলের গানকে বিভিন্ন আসরে ও অনুষ্ঠানে পরিবেশন করে জনপ্রিয় করে তোলেন।

১৯২৭ সালে একদিকে সাপ্তাহিক  শনিবারের চিঠি-তে রক্ষণশীল হিন্দু বিশেষত ব্রাহ্মণসমাজের একটি অংশ থেকে, অপরদিকে মৌলবাদী মুসলমান সমাজের ইসলাম দর্শন, মোসলেম দর্পণ প্রভৃতি পত্রিকায় নজরুল-সাহিত্যের বিরূপ সমালোচনার ঝড় ওঠে। শনিবারের চিঠি-তে নজরুলের বিভিন্ন রচনার প্যারডি প্রকাশিত হতে থাকে। তবে নজরুলের সমর্থনে কল্লোল, কালিকলম প্রভৃতি প্রগতিশীল পত্রিকা এগিয়ে আসে। ১৯২৭ সালে নজরুলের কবিতা ও গানের সংকলন ফণি-মনসা এবং পত্রোপন্যাস বাঁধন হারা প্রকাশিত হয়।

১৯২৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নজরুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের প্রবক্তা  মুসলিম সাহিত্য সমাজ-এর প্রথম বার্ষিক সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯২৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে নজরুল মুসলিম সাহিত্য সমাজ-এর দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনে যোগদানের জন্য পুনরায় ঢাকা আসেন। সেবার তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক  কাজী মোতাহার হোসেন, ছাত্র  বুদ্ধদেব বসু, অজিত দত্ত এবং গণিতের ছাত্রী ফজিলাতুন্নেসার সঙ্গে পরিচিত হন। একই বছর জুন মাসে পুনরায় ঢাকা এলে সঙ্গীত চর্চাকেন্দ্রের রানু সোম (প্রতিভা বসু) ও উমা মৈত্রের (লোটন) সঙ্গে কবির ঘনিষ্ঠতা হয়। অর্থাৎ এ সময় পরপর তিনবার ঢাকায় এসে নজরুল ঢাকার প্রগতিশীল অধ্যাপক, ছাত্র ও শিল্পীদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠেন। ওদিকে ১৯২৮ সালে কলকাতায় মওলানা মৈাহাজ্ঞঞ্ছদ আকরমখাঁ-র মাসিক  মোহাম্মদী পত্রিকায় নজরুল-বিরোধিতা শুরু হয়, কিন্তু মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের সওগাত পত্রিকা বলিষ্ঠভাবে নজরুলকে সমর্থন করে। নজরুল সওগাতে যোগদান করে একটি রম্য বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সওগাতে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে  আবুল কালাম শামসুদ্দীন নজরুলকে যুগপ্রবর্তক কবি ও বাংলার জাতীয় কবি হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

নজরুল ১৯২৮ সালে গ্রামোফোন কোম্পানির সঙ্গে, ১৯২৯ সালে বেতার ও মঞ্চের সঙ্গে এবং ১৯৩৪ সালে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯২৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত তিনি এইচ.এম.ভি গ্রামোফোন কোম্পানির সঙ্গে সঙ্গীত-রচয়িতা ও প্রশিক্ষকরূপে যুক্ত ছিলেন। এইচ.এম.ভি-তে নজরুলের প্রশিক্ষণে প্রথম রেকর্ডকৃত তাঁর দুটি গান ‘ভুলি কেমনে’ ও ‘এত জল ও কাজল চোখে’ গেয়েছিলেন আঙ্গুরবালা। নজরুলের নিজের প্রথম রেকর্ড ছিল স্বরচিত ‘নারী’ কবিতার আবৃত্তি। নজরুল কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রথম অনুষ্ঠান প্রচার করেন ১৯২৯ সালের ১২ নভেম্বর সান্ধ্য অধিবেশনে। ১৯২৯ সালে মনোমোহন থিয়েটারে প্রথম মঞ্চস্থ শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের রক্তকমল নাটকের জন্য নজরুল গান রচনা ও সুর সংযোজনা করেন। শচীন্দ্রনাথ ওই নাটকটি নজরুলকে উৎসর্গ করেন। ১৯৩০ সালে মঞ্চস্থ মন্মথ রায়ের চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী নাটক কারাগার-এ নজরুলের আটটি গান ছিল, নাটকটি একটানা ১৮ রজনী মঞ্চস্থ হওয়ার পর সরকার নিষিদ্ধ করে।

১৯২৯ সালের ১০ ডিসেম্বর কলকাতার এলবার্ট হলে বাঙালিদের পক্ষ থেকে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে এক বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তাতে সভাপতিত্ব করেন আচার্য  প্রফুল্লচন্দ্র রায়, অভিনন্দন-পত্র পাঠ করেন ব্যারিস্টার  এস ওয়াজেদ আলি, শুভেচ্ছা ভাষণ দেন বিশিষ্ট রাজনীতিক  সুভাষচন্দ্র বসু (নেতাজী) এবং রায়বাহাদুর  জলধর সেন। কবিকে সোনার দোয়াত-কলম উপহার দেওয়া হয়। এ সংবর্ধনা সভায় প্রফুল্লচন্দ্র রায় বলেছিলেন, ‘আমার বিশ্বাস, নজরুল ইসলামের কবিতা পাঠে আমাদের ভাবী বংশধরেরা এক একটি অতি মানুষে পরিণত হইবে।’ সুভাষচন্দ্র বসু বলেছিলেন, ‘আমরা যখন যুদ্ধ ক্ষেত্রে যাব তখন সেখানে নজরুলের যুদ্ধের গান গাওয়া হবে! আমরা যখন কারাগারে যাব, তখনও তাঁর গান গাইব।’

১৯২৯ সালের জানুয়ারি মাসে নজরুল  চট্টগ্রাম সফরে আসেন এবং  হবীবুল্লাহ বাহার ও  শামসুন্নাহার ভাইবোনের আতিথ্য গ্রহণ করেন; বন্ধু কমরেড মুজফ্ফর আহমদের জন্মস্থান সনদ্বীপও ভ্রমণ করেন। ১৯২৮-২৯ সালে নজরুলের প্রকাশিত কবিতা ও গানের সংকলনের মধ্যে ছিল: সিন্ধু-হিন্দোল (১৯২৮), সঞ্চিতা (১৯২৮); বুলবুল (১৯২৮), জিঞ্জীর (১৯২৮) ও চক্রবাক (১৯২৯)। ১৯২৯ সালে কবির তৃতীয় পুত্র কাজী সব্যসাচীর জন্ম হয়, আর মে মাসে চার বছরের প্রিয়পুত্র বুলবুল বসন্ত রোগে মারা যায়। কবি এতে প্রচন্ড আঘাত পান। অনেকে বলেন এ মৃত্যু কবির জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তিনি ক্রমশ অন্তর্মুখী হয়ে ওঠেন এবং আধ্যাত্মিক সাধনার দিকে ঝুঁকে পড়েন। বুলবুলের রোগশয্যায় বসে নজরুল হাফিজের রুবাইয়াৎ অনুবাদ করছিলেন, যা পরে রুবাইয়াৎ-ই-হাফিজ নামে প্রকাশিত হয়। ১৯৩০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল নজরুলের রাজনৈতিক উপন্যাস মৃত্যুক্ষুধা, গানের সংকলন নজরুল-গীতিকা, নাটিকা ঝিলিমিলি এবং কবিতা ও গানের সংকলন প্রলয়-শিখা ও চন্দ্রবিন্দু। শেষোক্ত গ্রন্থটি বাজেয়াপ্ত এবং প্রলয়-শিখা-র জন্য নজরুলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। ১৯৩০ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত আদালতের রায়ে নজরুলের ছয় মাসের সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ হয়, নজরুল হাইকোর্টে আপিল ও জামিন লাভ করেন। ইতোমধ্যে গান্ধী-আরউইন চুক্তির ফলে হাইকোর্ট কর্তৃক নজরুলের বিরুদ্ধে মামলা খারিজের আদেশ দেওয়া হয়, ফলে নজরুলকে দ্বিতীয়বার কারাবাস করতে হয় নি।

১৯৩১ সালের জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত নজরুল দার্জিলিং সফর করেন। রবীন্দ্রনাথও তখন দার্জিলিং-এ ছিলেন। তাঁর সঙ্গে নজরুলের সাক্ষাৎ হয়। এ বছর প্রকাশিত হয় নজরুলের উপন্যাস কুহেলিকা, গল্প-সংকলন শিউলিমালা, গানের স্বরলিপি নজরুল-স্বরলিপি এবং গীতিনাট্য আলেয়া। নজরুলের এ নাটকটি কলকাতার নাট্যনিকেতনে (৩ পৌষ ১৩৩৮) প্রথম মঞ্চস্থ হয়। এতে গানের সংখ্যা ছিল ২৮টি। ওই বছর নজরুল আরও যেসব নাটকের জন্য গান রচনা ও সুরারোপ করেন সেসবের মধ্যে ছিল যতীন্দ্রমোহন সিংহের ধ্রুবতারা উপন্যাসের নাট্যরূপের চারটি গান (কেবল সুর সংযোজন), মন্মথ রায়ের সাবিত্রী নাটকের ১৩টি গান (রচনা ও সুরারোপ)। ১৯৩২ সালে কলকাতা বেতার থেকে প্রচারিত মন্মথ রায়ের মহুয়া নাটকের গানগুলির রচয়িতাও ছিলেন নজরুল।

১৯৩২ সালের নভেম্বর মাসে নজরুল সিরাজগঞ্জে বঙ্গীয় মুসলমান তরুণ সম্মেলনে এবং ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর কলকাতা এলবার্ট হলে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মেলনে যোগদান করেন। সম্মেলনের সভাপতি কবি  কায়কোবাদ নজরুলকে মাল্যভূষিত করেন। ১৯৩২ সালে নজরুলের প্রকাশনার মধ্যে সবগুলিই ছিল গীতিসংকলন, যেমন: সুর-সাকী, জুলফিকার ও বন-গীতি।

১৯৩২-৩৩ সাল এক বছর নজরুল এইচ.এম.ভি ছেড়ে মেগাফোন রেকর্ড কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এ কোম্পানির রেকর্ড করা প্রথম দুটি নজরুলসঙ্গীত ছিল ধীরেন দাসের গাওয়া ‘জয় বাণী বিদ্যাদায়িনী’ ও ‘লক্ষ্মী মা তুই’। ১৯৩৩ সালে নজরুল এক্সক্লুসিভ কম্পোজাররূপে এইচ.এম.ভি-তে পুনরায় যোগদান করেন। এ সময় তাঁর অনেক গান রেকর্ড হয়। ১৯৩৩ সালে নজরুল তিনটি মূল্যবান অনুবাদ-কর্ম সমাপ্ত করেন: রুবাইয়াৎ-ই-হাফিজ, রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম এবং কাব্য আমপারা।

রেকর্ড, বেতার ও মঞ্চের পর নজরুল ১৯৩৪ সালে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি প্রথমে যে ছায়াছবির জন্য কাজ করেন সেটি ছিল গিরিশচন্দ্র ঘোষের কাহিনী ভক্ত ধ্রুব (১৯৩৪)। এ ছায়াছবির পরিচালনা, সঙ্গীত রচনা, সুর সংযোজনা ও পরিচালনা এবং নারদের ভূমিকায় অভিনয় ও নারদের চারটি গানের প্লেব্যাক নজরুল নিজেই করেন। ছবির আঠারোটি গানের মধ্যে সতেরোটির রচয়িতা ও সুরকার ছিলেন নজরুল। এ ছাড়া তিনি আর যেসব চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন সেগুলি হলো: পাতালপুরী (১৯৩৫), গ্রহের ফের (১৯৩৭), বিদ্যাপতি (বাংলা ও হিন্দি ১৯৩৮), গোরা (১৯৩৮), নন্দিনী (১৯৪৫) এবং অভিনয় নয় (১৯৪৫)। বিভিন্ন ছায়াছবিতে ১৯৪৫ সালের মধ্যে ব্যবহূত নজরুলসঙ্গীতের সংখ্যা প্রায় অর্ধশত। চলচ্চিত্রের মতো মঞ্চনাটকের সঙ্গেও নজরুল ত্রিশের দশকে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯২৯ থেকে ১৯৪১ সালের মধ্যে কলকাতার বিভিন্ন মঞ্চে নিজের রচিত দুটি নাটক আলেয়া ও মধুমালা সহ প্রায় ২০টি মঞ্চ নাটকের সঙ্গে নজরুল যুক্ত ছিলেন এবং সেসবে প্রায় ১৮২টি নজরুলসঙ্গীত অন্তর্ভুক্ত ছিল।

 এরূপ কয়েকটি নাটক হলো: রক্তকমল, মহুয়া, জাহাঙ্গীর, কারাগার, সাবিত্রী, আলেয়া, সর্বহারা, সতী, সিরাজদ্দৌলা, দেবীদুর্গা, মধুমালা, অন্নপূর্ণা, নন্দিনী, হরপার্বতী, অর্জুনবিজয়, ব্ল্যাক আউট ইত্যাদি। ১৯৩৪ সালে নজরুল-প্রকাশনার সবই ছিল সঙ্গীত-বিষয়ক, যেমন: গীতি-শতদল ও গানের মালা গীতিসংকলন এবং সুরলিপি ও সুরমুকুর স্বরলিপি সংগ্রহ।

১৯৩৯ সালের অক্টোবর মাস থেকে নজরুল কলকাতা বেতারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হন এবং তাঁর তত্ত্বাবধানে অনেক মূল্যবান সঙ্গীতানুষ্ঠান প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘হারামণি’, ‘মেল-মিলন’ ও ‘নবরাগমালিকা’। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪২ সালের মধ্যে নজরুল বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তীর সহযোগিতায় কলকাতা বেতার থেকে অনেক রাগভিত্তিক ব্যতিক্রমধর্মী সঙ্গীতানুষ্ঠান পরিবেশন করেন, যা ছিল নজরুলের সঙ্গীতজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৩৯ সালে নজরুল বেতারের সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িত থাকলেও এইচ.এম.ভি, মেগাফোন, টুইন ছাড়াও কলম্বিয়া, হিন্দুস্থান, সেনোলা, পাইওনিয়ার, ভিয়েলোফোন প্রভৃতি থেকেও নজরুলসঙ্গীতের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। ১৯৫০ সালের মধ্যে নজরুলের এইচ.এম.ভি থেকে ৫৬৭টি, টুইন থেকে ২৮০টি, মেগাফোন থেকে ৯১টি, কলম্বিয়া থেকে ৪৪টি, হিন্দুস্থান থেকে ১৫টি, সেনোলা থেকে ১৩টি, পাইওনিয়ার থেকে ২টি, ভিয়েলোফোন থেকে ২টি এবং রিগ্যান থেকে ১টি মিলে প্রায় সহস্রাধিক গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। সব মিলে নজরুলের গানের সংখ্যা দ্বিসহস্রাধিক।

১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট (২২ শ্রাবণ ১৩৪৮) রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুতে শোকাহত নজরুল তাৎক্ষণিকভাবে রচনা করেন ‘রবিহারা’ ও ‘সালাম অস্তরবি’ কবিতা এবং ‘ঘুমাইতে দাও শ্রান্ত রবিরে’ শোকসঙ্গীত। ‘রবিহারা’ কবিত্র্রা নজরুল স্বকণ্ঠে আবৃত্তি করেন কলকাতা বেতারে, গ্রামোফোন রেকর্ডে। ‘ঘুমাইতে দাও’ গানটিও কয়েকজন শিল্পীকে নিয়ে স্বকণ্ঠে গেয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর বছরখানেকের মধ্যেই নজরুল নিজেও অসুস্থ এবং ক্রমশ নির্বাক ও সম্বিতহারা হয়ে যান। দেশে ও বিদেশে কবির চিকিৎসার ব্যবস্থা হয় বটে, কিন্তু কোনো সুফল পাওয়া যায় নি। ১৯৪২ সালের জুলাই থেকে ১৯৭৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৪টি বছর কবির এ অসহনীয় নির্বাক জীবনকাল অতিবাহিত হয়।

ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবিকে সপরিবারে স্বাধীন বাংলাদেশে আনা হয়।  বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে কবির অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক বিশেষ সমাবর্তনে কবিকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে নজরুলকে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান এবং ২১ ফেব্রুয়ারি ‘একুশে পদকে’ ভূষিত করে। ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ (১২ ভাদ্র ১৩৮৩) ঢাকার পিজি হাসপাতালে কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের উত্তর পার্শ্বে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয় বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে।

common.content_added_by

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

মৃত্যুক্ষুধা
ব্যথার দান
কুহেলিকা
বাঁধনহারা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

823
823

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৭ই মে, ১৮৬১ - ৭ই আগস্ট, ১৯৪১) (২৫ বৈশাখ, ১২৬৮ - ২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাঁকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ১৩টি উপন্যাস ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খণ্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত। এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

গীতাঞ্জলি হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি কাব্যগ্রন্থ। এই বইয়ে মোট ১৫৭টি গীতিকবিতা সংকলিত হয়েছে। কবিতাগুলি ব্রাহ্ম-ভাবাপন্ন ভক্তিমূলক রচনা। এর বেশিরভাগ কবিতাতেই রবীন্দ্রনাথ নিজে সুরারোপ করেছিলেন। ১৯০৮-০৯ সালে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এই কবিতাগুলি প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯১০ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।

১৯৩০-এ আইনস্টাইনের সাথে রবীন্দ্রনাথ

বাল্মীকি-প্রতিভা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি গীতিনাট্য। ১৮৮১ সালে প্রকাশিত এই নাটকটি রবীন্দ্রনাথ রচিত প্রথম নাট্যসাহিত্য। ১৮৮১ সালেই প্রথম মঞ্চায়িত হয় এই নাটক। বাল্মীকি-প্রতিভা –র আখ্যানবস্তু কৃত্তিবাসি রামায়ণ থেকে গৃহীত। নাটকের আঙ্গিকে ভারতীয় ও পাশ্চাত্য সঙ্গীতের সুর নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়েছে। এই নাটকের হাত ধরেই বাংলায় গীতিনাট্য ঐতিহ্যের সূচনা হয়। বাল্মীকি-প্রতিভা রচনার অব্যবহিত পরে এর সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে রবীন্দ্রনাথ কালমৃগয়া নামক আর একটি গীতিনাট্য রচনা করেছিলেন।

ভানুসিংহের প্রথম কবিতা রচনাকালে "ভানুসিংহ" কিশোর রবীন্দ্রনাথ, ১৮৭৭; জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্কেচ অবলম্বনে গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর অঙ্কিত

ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর ব্রজবুলি ভাষায় রচিত একটি কাব্যগ্রন্থ। রবীন্দ্রনাথ কৈশোর ও প্রথম যৌবনে "ভানুসিংহ" ছদ্মনামে বৈষ্ণব কবিদের অনুকরণে কিছু পদ রচনা করেছিলেন। ১৮৮৪ সালে সেই কবিতাগুলিই ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী নামে প্রকাশিত হয়। কবিতাগুলি গ্রন্থাকারে প্রকাশের পূর্বে বিভিন্ন সময়ে ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। কবিতাগুলি রচনার ইতিহাস পরবর্তীকালে জীবনস্মৃতি গ্রন্থের ভানুসিংহের কবিতা অধ্যায় বিবৃত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

চোখের বালি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি সামাজিক উপন্যাস। ১৯০১-০২ সালে নবপর্যায় বঙ্গদর্শন পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। ১৯০৩ সালে বই আকারে প্রকাশিত হয়। উপন্যাসের বিষয় "সমাজ ও যুগযুগান্তরাগত সংস্কারের সঙ্গে ব্যক্তিজীবনের বিরোধ"। আখ্যানভাগ সংসারের সর্বময় কর্ত্রী মা, এক অনভিজ্ঞা বালিকাবধূ, এক বাল্যবিধবা ও তার প্রতি আকৃষ্ট দুই পুরুষকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে।

উদ্ধৃতিসমূহঃ

❁আশা করিবার অধিকারই মানুষের শক্তিকে প্রবল করিয়া তোলে। 

❁ মানবের মধ্যে দেবতার প্রকাশ, সংসারের মধ্যে দেবতার প্ৰতিষ্ঠা, আমাদের প্রতি মুহূর্তের সুখ-দুঃখের মধ্যে দেবতার সঞ্চার, ইহাই নব হিন্দুধর্মের মর্মকথা হইয়া উঠল। 

❁ যাহার হৃদয়ে যত সৌন্দর্য বিরাজ করিতেছে সে তত সৌন্দর্য উপভোগ করিতে পারে। সৌন্দর্যের সহিত তাহার নিজের ঐক্য যতই সে বুঝিতে পারে ততই সে আনন্দ লাভ করে। আমি যে এত ফুল ভালোবাসি তাহার কারণ আর কিছু নয়, ফুলের সহিত আমার হৃদয়ের গূঢ় একটি ঐক্য আছে - আমার মনে হয় ও একই কথা, যে সৌন্দর্য ফুল হইয়া ফুটিয়াছে, সেই সৌন্দর্যই অবস্থাভেদে আমার হৃদয় হইয়া বিকশিত হইয়াছে। 

❁ বহুবিধ বিষয় পাঠনার ব্যবস্থা করিলেই যে শিক্ষায় লাভের অংক অগ্রসর হয় তাহা নহে, মানুষ যে বাড়ে সে'ন মেধয়া ন বহুনা শ্রুতেন'। যেখানে নিভৃতে তপস্যা হয় সেখানেই আমরা শিখতে পারি। যেখানে গোপনে ত্যাগ, যেখানে একান্তে সাধনা, সেখানেই আমরা শক্তিলাভ করি। যেখানে সম্পূর্ণভাবে দান সেখানেই সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ সম্ভবপর। যেখানে অধ্যাপকগন জ্ঞানের চর্চায় স্বয়ং প্রবৃত্ত সেখানেই ছাত্রগণ বিদ্যাকে প্রত্যক্ষ দেখিতে পায়। বাহিরে বিশ্বপ্রকৃতির আবির্ভাব যেখানে বাধাহীন অন্তরে সেখানেই মন সম্পূর্ন বিকশিত। ব্রহ্মচর্জের সাধনায় চরিত্র যেখানে সুস্থ এবং আত্মবশ, ধর্মশিক্ষা সেখানেই সরল ও স্বাভাবিক।

❁ চোখে দেখিস, প্রাণে কানা হিয়ার মাঝে দেখ না ধরে ভুবনখানা।

❁বিশ্বকে আমরা জানি, তার কারণ বিশ্বে সত্যের আবির্ভাব। বিশ্বে আমাদের তৃপ্তি, তার কারণ বিশ্ব আনন্দের প্রকাশ। 

❁বল, বুদ্ধি ও ঐশ্বর্য মনুষ্যত্বের একটা অঙ্গ হইতে পারে, কিন্তু শান্তি, সামঞ্জস্য এবং মঙ্গলও কি তদপেক্ষা উচ্চতর অঙ্গ নহে। 

❁বই পড়াটা যে শিক্ষার একটা সুবিধাজনক সহায়মাত্র তাহা আর আমাদের মনে হয় না, আমরা বই পড়াটাকে শিক্ষার একমাত্র উপায় বলিয়া ঠিক করিয়া বসিয়া আছি। মনের জীবন মননক্রিয়া এবং সেই জীবনেই মনুষ্যত্ব। 

❁আনন্দ যে রূপ ধরেছে এই তো হল রস। 

❁শিখিবার কালে, বাড়িয়া উঠিবার সময়ে প্রকৃতির সহায়তা নিতান্তই চাই। 

❁ বইয়ের ভিতর দিয়া জানাইকে আমরা পান্ডিত্য বলিয়া গর্ব করি। জগৎকে আমরা মন দিয়ে ছুঁই না, বই দিয়ে ছুঁই। 

❁আমাদের স্কুল-কলেজেও তপস্যা আছে, কিন্তু সে মনের তপস্যা, তপস্যা, বোধের তপস্যা নয়। .... বোধের তপস্যার বাধা হচ্ছে রিপুর বাধা। প্রবৃত্তি অসংগত হয়ে উঠলে চিত্তের সাম্য থাকে না, সুতরাং বোধ বিকৃত হয়ে যায়। কামনার জিনিসকে আমরা শ্রেয় দেখি, সে জিনিসটা সত্যই শ্রেয় বলে নয়, আমাদের কামনা আছে বলেই। লোভের জিনিসকে আমরা বড়ো দেখি, সে জিনিস সত্যই বড়ো বলে নয়, আমাদের লোভ আছে বলেই। 

❁আমাদের শিক্ষার মধ্যে এমন একটি সম্পদ থাকা চাই যা কেবল আমাদের তথ্য দেয় না, সত্য দেয়, যা কেবল ইন্ধন দেয় না, অগ্নি দেয়।

common.content_added_by

আবুল কাসেম ফজলুল হক

459
459
common.please_contribute_to_add_content_into আবুল কাসেম ফজলুল হক.
common.content

আবুল ফজল (সাহিত্যিক)

409
409
common.please_contribute_to_add_content_into আবুল ফজল (সাহিত্যিক).
common.content

আবদুল গাফফার চৌধুরী

411
411
common.please_contribute_to_add_content_into আবদুল গাফফার চৌধুরী.
common.content

আমীরুল ইসলাম

477
477
common.please_contribute_to_add_content_into আমীরুল ইসলাম.
common.content

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

441
441
common.please_contribute_to_add_content_into ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.
common.content

কাজী আনোয়ার হোসেন

482
482
common.please_contribute_to_add_content_into কাজী আনোয়ার হোসেন.
common.content

কাজী মোতাহার হোসেন

422
422
common.please_contribute_to_add_content_into কাজী মোতাহার হোসেন.
common.content

কামিনী রায়

431
431
common.please_contribute_to_add_content_into কামিনী রায়.
common.content

বেগম রোকেয়া

424
424
common.please_contribute_to_add_content_into বেগম রোকেয়া.
common.content

কালীপ্রসন্ন সিংহ

430
430
common.please_contribute_to_add_content_into কালীপ্রসন্ন সিংহ.
common.content

কায়কোবাদ

417
417
common.please_contribute_to_add_content_into কায়কোবাদ.
common.content

জসীম উদ্দীন

420
420
common.please_contribute_to_add_content_into জসীম উদ্দীন.
common.content

জহির রায়হান

393
393
common.please_contribute_to_add_content_into জহির রায়হান.
common.content

জাহানারা ইমাম

407
407
common.please_contribute_to_add_content_into জাহানারা ইমাম.
common.content

জীবনানন্দ দাশ

1.4k
1.4k

রূপসী বাংলার, তিমির হননের ও ধূসরতার কবি জীবনানন্দ দাশ রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হলো - ঝরাপালক (১৯২৭, এটি কবির ১ম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ) , ধূসর পান্ডুলিপি (১৯৩৬), বনলতা সেন (১৯৪২), মহাপৃথিবী (১৯৪৪), সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮), রূপসী বাংলা (১৯৫৭), বেলা অবেলা কালবেলা (১৯৬১) ।

তাঁর ১ম উপন্যাস - মাল্যবান (১৯৭৩)। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য উপন্যাস - সুতীর্থ, কল্যাণী, কারুবাসনা। 

জীবনানন্দ দাশ রচিত প্রবন্ধ: কবিতার কথা

তাঁর একটি আলোচিত কবিতা হলো - অদ্ভুত আঁধার এক। 

জন্ম : ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯, বরিশালে (আদি নিবাস বিক্রমপুরের গাওপাড়া গ্রামে)

মৃত্যু: ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর, ট্রাম দুর্ঘটনায় ।

পিতা-মাতা: তাঁর মা কুসুমকুমারী দাশ একজন কবি। তার পিতা ছিলেন বরিশাল ব্রজমোহন স্কুলের প্রধান শিক্ষক।

জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য:-

  • জীবনানন্দ দাশ প্রধানত প্রকৃতির কবি। তাঁর কবিতার মৌলিক প্রেরণা - প্রকৃতির রহস্যময় সৌন্দর্য । 
  • জীবনানন্দের প্রথম কাব্যে কাজী নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী।
  • জীবনানন্দ দাশ কবিতায় যে জগৎ তৈরি করে তা -সূক্ষ্ম ও গভীর অনুভবের
  • জীবনানন্দ দাশের কবিতাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন- চিত্ররূপময় কবিতা
  • জীবনানন্দ দাশকে বুদ্ধদেব বসু 'নির্জনতার কবি' বলে আখ্যায়িত করেছেন।
  • অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁকে ‘শুদ্ধতম কবি’ অভিধায় আখ্যায়িত করেছেন
  • জীবনানন্দ দাশের উপর গবেষণা করেন- ক্লিনটন বি-সীলি
  • তাঁর কবিতায় স্থান পেয়েছে- উপমা, প্রতীক, চিত্রকল্প, রঙের ব্যবহার
  • ১৯৭১ সালে মুক্তিবাহিনীকে অনুপ্রাণিত করে- তাঁর নিসর্গ বিষয়ক কবিতাগুলো।
  • জীবনানন্দ দাশ এর ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ নামক কবিতায় ব্যবহৃত ‘শঙ্খমালা’ নামক নারী চরিত্রটি হলো - রোমান্টিক কবি কল্পনা।

==> মৃত্যুর পূর্বে তিনি ২১টি উপন্যাস এবং ১২৬টি ছোটগল্প রচনা করেছিলেন যার একটিও তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি।

==> জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থ নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত (১৯৫৩) হয়। 

==> ১৯৫৫ সালে ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ গ্রন্থটি ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করে।

common.content_added_by

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

অর্কেস্ট্রা
প্রথম পার্থ
উর্বশী ও আর্টেমিস
মহাপৃথিবী
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
স্বদেশপ্রেম
প্রকৃতিপ্রীতি
প্রকৃতির রহস্যময় সৌন্দর্য
ঝরা পালক
মহাপৃথিবী
সাতটি তারার তিমির
নিজ বাসভূমে

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

442
442
common.please_contribute_to_add_content_into দ্বিজেন্দ্রলাল রায়.
common.content

ধীরেন্দ্রলাল ধর

413
413
common.please_contribute_to_add_content_into ধীরেন্দ্রলাল ধর.
common.content

সুকুমার রায়

376
376
common.please_contribute_to_add_content_into সুকুমার রায়.
common.content

নির্মলেন্দু গুণ

374
374
common.please_contribute_to_add_content_into নির্মলেন্দু গুণ.
common.content

ফকির গরীবুল্লাহ

416
416
common.please_contribute_to_add_content_into ফকির গরীবুল্লাহ.
common.content

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

439
439
common.please_contribute_to_add_content_into বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.
common.content

বন্দে আলী মিয়া

446
446
common.please_contribute_to_add_content_into বন্দে আলী মিয়া.
common.content

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়

379
379
common.please_contribute_to_add_content_into বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়.
common.content

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

460
460

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪-১৯৫০)  কথাসাহিত্যিক। ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ১২ সেপ্টম্বর পশ্চিমবঙ্গের চবিবশ পরগনা জেলার কাঁচরাপাড়ার নিকটবর্তী ঘোষপাড়া-মুরারিপুর গ্রামে মাতুলালয়ে জন্ম। তাঁর পৈতৃক নিবাস ওই জেলারই ব্যারাকপুর গ্রামে। পিতা মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সংস্কৃত পন্ডিত; পান্ডিত্য ও কথকতার জন্য তিনি ‘শাস্ত্রী’ উপাধিতে ভূষিত হন।

স্বগ্রামের পাঠশালায় বিভূতিভূষণের পড়াশোনা শুরু হয়। তিনি বরাবরই একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। এন্ট্রান্স (১৯১৪) ও আইএ (১৯১৬) উভয় পরীক্ষায় তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। বিএ (১৯১৮) পরীক্ষায়ও তিনি ডিসটিংকশনসহ পাস করেন। পরে এমএ ও আইন বিষয়ে ভর্তি হয়েও পাঠ অসমাপ্ত রেখে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি হুগলির একটি মাইনর স্কুলে শিক্ষকতার পেশা গ্রহণ করেন। কিছুদিন তিনি ‘গোরক্ষিণী সভা’র ভ্রাম্যমাণ প্রচারক হিসেবে বাংলা, আসাম, ত্রিপুরা ও আরাকানের বিভিন্ন অঞ্চল ভ্রমণ করেন। পরে তিনি খেলাৎচন্দ্র ঘোষের বাড়িতে সেক্রেটারি ও গৃহশিক্ষক এবং তাঁর এস্টেটের ভাগলপুর সার্কেলের সহকারী ম্যানেজার হন। পরে ধর্মতলাস্থ খেলাৎচন্দ্র মেমোরিয়াল স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর তিনি গোপালনগর স্কুলে যোগদান করেন এবং আমৃত্যু সেখানেই কর্মরত ছিলেন।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

 

১৩২৮ বঙ্গাব্দের (১৯২১) মাঘ প্রবাসীতে প্রথম গল্প ‘উপেক্ষিতা’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে বিভূতিভূষণের সাহিত্যিক জীবন শুরু হয়। ভাগলপুরে চাকরি করার সময় ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি  পথের পাঁচালী রচনা শুরু করেন এবং শেষ করেন ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে। 

তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো:-

অপরাজিত (১৯৩১), 

মেঘমল্লার  (১৯৩১), 

মৌরীফুল (১৯৩২), 

যাত্রাবদল (১৯৩৪), 

চাঁদের পাহাড় (১৯৩৭), 

কিন্নরদল (১৯৩৮), 

আরণ্যক (১৯৩৯), 

আদর্শ হিন্দু হোটেল (১৯৪০), 

মরণের ডঙ্কা বাজে (১৯৪০), 

স্মৃতির রেখা (১৯৪১), 

দেবযান (১৯৪৪), 

হীরামানিক জ্বলে (১৯৪৬), 

উৎকর্ণ (১৯৪৬), 

হে অরণ্য কথা কও (১৯৪৮), 

ইছামতী (১৯৫০), 

অশনি সংকেত (১৯৫৯) ইত্যাদি।

পথের পাঁচালী বিভূতিভূষণের শ্রেষ্ঠ রচনা। প্রথম রচিত এই উপন্যাসের মাধ্যমেই তিনি বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন। অপরাজিত পথের পাঁচালীরই পরবর্তী অংশ। উভয়গ্রন্থে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের ছায়াপাত ঘটেছে। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার  সত্যজিৎ রায় পথের পাঁচালীকে চলচ্চিত্রে রূপদানের মাধ্যমে তাঁর পরিচালক জীবন শুরু করেন এবং এর জন্য তিনি দেশিবিদেশী বহু পুরস্কার লাভ করেন। তিনি অপরাজিত এবং অশনি সংকেত উপন্যাস দুটি অবলম্বনেও অসাধারণ চলচ্চিত্র নির্মাণ করে প্রশংসিত হন। পথের পাঁচালী  উপন্যাসটি ভারতীয় বিভিন্ন ভাষাসহ ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

নিভৃতচারী এই কথাশিল্পীর রচনায় পল্লীর জীবন ও নিসর্গ রূপায়ণে বাংলার আবহমানকালের চালচিত্র ও মানবজীবনের অন্তর্লীন সত্তা প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর রচনায় প্রকৃতি কেবল প্রকৃতিরূপেই আবির্ভূত হয়নি, বরং প্রকৃতি ও মানবজীবন একীভূত হয়ে অভিনব রসমূর্তি ধারণ করেছে। মানুষ যে প্রকৃতিরই সন্তান এ সত্য তাঁর বিভিন্ন রচনায় প্রতিফলিত হয়েছে। প্রকৃতির লতাপাতা, ঘাস, পোকামাকড় সবকিছুই গুরুত্বের সঙ্গে স্বস্বভাবে তাঁর রচনায় স্থান পেয়েছে। প্রকৃতির অনুপুঙ্খ বর্ণনার মধ্য দিয়ে বিভূতিভূষণ গভীর জীবনদৃষ্টিকেও তুলে ধরেছেন। তবে তাঁর রচনায় নিম্ন মধ্যবিত্ত বাঙালির জীনবচিত্র ও সমকালের আর্থসামাজিক বাস্তবতাও সমভাবে উন্মোচিত হয়েছে। তাই বাংলা কথাসাহিত্যে শরৎচন্দ্রের পরে বিভূতিভূষণই সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় সাহিত্যিকের মর্যাদা পেয়েছেন।

সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি বিভূতিভূষণ সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেন। তিনি চিত্রলেখা (১৯৩০) নামে একটি সিনেমা পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তাছাড়া হেমন্তকুমার গুপ্তের সঙ্গে যৌথভাবে তিনি দীপক (১৯৩২) পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ইছামতী উপন্যাসের জন্য বিভূতিভূষণ মরণোত্তর ‘রবীন্দ্র-পুরস্কার’ (১৯৫১) লাভ করেন। ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর ব্যারাকপুরের ঘাটশিলায় তাঁর মৃত্যু হয়।

common.content_added_by

বুদ্ধদেব বসু

460
460

বুদ্ধদেব বসু বিংশ শতাব্দীর একজন প্রভাবশালী বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, কথাসাহিত্যিক, অনুবাদক, সম্পাদক ও সাহিত্য-সমালোচক ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর বিশ ও ত্রিশের দশকে আধুনিক কবিতার যারা পথিকৃৎ তিনি তাদের একজন। তিনি বাংলা সাহিত্য সমালোচনার দিকপাল ও কবিতা পত্রিকার প্রকাশ ও সম্পাদনার জন্য তিনি বিশেষভাবে সমাদৃত।

common.content_added_by

ভারতচন্দ্র, রায়গুনাকর

421
421
common.please_contribute_to_add_content_into ভারতচন্দ্র, রায়গুনাকর.
common.content

মদন মোহন তর্কালঙ্কার

390
390
common.please_contribute_to_add_content_into মদন মোহন তর্কালঙ্কার.
common.content

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

461
461
common.please_contribute_to_add_content_into শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.
common.content

শামসুর রাহমান

483
483
common.please_contribute_to_add_content_into শামসুর রাহমান.
common.content

শেখ ফজলল করিম

474
474
common.please_contribute_to_add_content_into শেখ ফজলল করিম.
common.content

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

439
439
common.please_contribute_to_add_content_into সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত.
common.content

সিকান্দার আবু জাফর

460
460
common.please_contribute_to_add_content_into সিকান্দার আবু জাফর.
common.content

সুকান্ত ভট্টাচার্য

556
556
common.please_contribute_to_add_content_into সুকান্ত ভট্টাচার্য.
common.content

সুকুমার রায়

407
407
common.please_contribute_to_add_content_into সুকুমার রায়.
common.content

সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ

441
441
common.please_contribute_to_add_content_into সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ.
common.content

সৈয়দ মুর্তাজা আলী

430
430
common.please_contribute_to_add_content_into সৈয়দ মুর্তাজা আলী.
common.content

নীলিমা ইব্রাহিম

436
436
common.please_contribute_to_add_content_into নীলিমা ইব্রাহিম.
common.content

শেখ মুজিবুর রহমান

376
376
common.please_contribute_to_add_content_into শেখ মুজিবুর রহমান.
common.content

দীনবন্ধু মিত্র

399
399
common.please_contribute_to_add_content_into দীনবন্ধু মিত্র.
common.content

অক্ষয়কুমার বড়াল

532
532
common.please_contribute_to_add_content_into অক্ষয়কুমার বড়াল.
common.content

অক্ষয়চন্দ্র সরকার

589
589
common.please_contribute_to_add_content_into অক্ষয়চন্দ্র সরকার.
common.content

অক্ষয়কুমার দত্ত

573
573
common.please_contribute_to_add_content_into অক্ষয়কুমার দত্ত.
common.content

অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরী

601
601
common.please_contribute_to_add_content_into অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরী.
common.content

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত

529
529
common.please_contribute_to_add_content_into অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত.
common.content

অজয় ভট্টাচার্য

463
463
common.please_contribute_to_add_content_into অজয় ভট্টাচার্য.
common.content

অজয় রায়

483
483
common.please_contribute_to_add_content_into অজয় রায়.
common.content

অজিত দত্ত

370
370
common.please_contribute_to_add_content_into অজিত দত্ত.
common.content

অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়

370
370
common.please_contribute_to_add_content_into অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়.
common.content

অজিতকুমার গুহ

416
416
common.please_contribute_to_add_content_into অজিতকুমার গুহ.
common.content

অজিতকুমার চক্রবর্তী

364
364
common.please_contribute_to_add_content_into অজিতকুমার চক্রবর্তী.
common.content

অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

349
349
common.please_contribute_to_add_content_into অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়.
common.content

অতুলপ্রসাদ সেন

444
444
common.please_contribute_to_add_content_into অতুলপ্রসাদ সেন.
common.content

অতুলচন্দ্র গুপ্ত

425
425
common.please_contribute_to_add_content_into অতুলচন্দ্র গুপ্ত.
common.content

অদ্বৈত মল্লবর্মণ

451
451
common.please_contribute_to_add_content_into অদ্বৈত মল্লবর্মণ.
common.content

অনিতা অগ্নিহোত্রী

433
433
common.please_contribute_to_add_content_into অনিতা অগ্নিহোত্রী.
common.content

অনিল মুখার্জি

466
466
common.please_contribute_to_add_content_into অনিল মুখার্জি.
common.content

অনির্বাণ

443
443
common.please_contribute_to_add_content_into অনির্বাণ.
common.content

অনীশ দেব

411
411
common.please_contribute_to_add_content_into অনীশ দেব.
common.content

অনুরূপা দেবী

409
409
common.please_contribute_to_add_content_into অনুরূপা দেবী.
common.content

অন্নদাশঙ্কর রায়

528
528
common.please_contribute_to_add_content_into অন্নদাশঙ্কর রায়.
common.content

অন্নদাচরণ খাস্তগীর

432
432
common.please_contribute_to_add_content_into অন্নদাচরণ খাস্তগীর.
common.content

অবধূত

432
432
common.please_contribute_to_add_content_into অবধূত.
common.content

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর

408
408
common.please_contribute_to_add_content_into অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.
common.content

অমর মিত্র

415
415
common.please_contribute_to_add_content_into অমর মিত্র.
common.content

অমলেন্দু দে

445
445
common.please_contribute_to_add_content_into অমলেন্দু দে.
common.content

অমিতাভ ঘোষ

424
424
common.please_contribute_to_add_content_into অমিতাভ ঘোষ.
common.content

অমিতাভ চৌধুরী

382
382
common.please_contribute_to_add_content_into অমিতাভ চৌধুরী.
common.content

অমিতাভ দাশগুপ্ত

462
462
common.please_contribute_to_add_content_into অমিতাভ দাশগুপ্ত.
common.content

অমূল্যকুমার দাশগুপ্ত

358
358
common.please_contribute_to_add_content_into অমূল্যকুমার দাশগুপ্ত.
common.content

অমিয় চক্রবর্তী

407
407
common.please_contribute_to_add_content_into অমিয় চক্রবর্তী.
common.content

অমিয়ভূষণ মজুমদার

370
370
common.please_contribute_to_add_content_into অমিয়ভূষণ মজুমদার.
common.content

অমৃতলাল বসু

439
439
common.please_contribute_to_add_content_into অমৃতলাল বসু.
common.content

অমর্ত্য সেন

419
419
common.please_contribute_to_add_content_into অমর্ত্য সেন.
common.content

অরবিন্দ পোদ্দার

370
370
common.please_contribute_to_add_content_into অরবিন্দ পোদ্দার.
common.content

অরুণ মিত্র

406
406
common.please_contribute_to_add_content_into অরুণ মিত্র.
common.content

অরুণ রায়

444
444
common.please_contribute_to_add_content_into অরুণ রায়.
common.content

অরুণকুমার মিত্র

431
431
common.please_contribute_to_add_content_into অরুণকুমার মিত্র.
common.content

অরূপরতন ভট্টাচার্য

380
380
common.please_contribute_to_add_content_into অরূপরতন ভট্টাচার্য.
common.content

অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত

360
360
common.please_contribute_to_add_content_into অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত.
common.content

অশোকবিজয় রাহা

369
369
common.please_contribute_to_add_content_into অশোকবিজয় রাহা.
common.content

অশোক মিত্র

408
408
common.please_contribute_to_add_content_into অশোক মিত্র.
common.content

অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

357
357
common.please_contribute_to_add_content_into অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়.
common.content

অসীম সাহা

491
491
common.please_contribute_to_add_content_into অসীম সাহা.
common.content

আকবর হোসেন (সাহিত্যিক)

416
416
common.please_contribute_to_add_content_into আকবর হোসেন (সাহিত্যিক).
common.content

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

388
388
common.please_contribute_to_add_content_into আখতারুজ্জামান ইলিয়াস.
common.content

আজিজুর রহমান

462
462
common.please_contribute_to_add_content_into আজিজুর রহমান.
common.content

আজিজুল হাকিম

425
425
common.please_contribute_to_add_content_into আজিজুল হাকিম.
common.content

আতিকুল হক চৌধুরী

379
379
common.please_contribute_to_add_content_into আতিকুল হক চৌধুরী.
common.content

আনিস চৌধুরী

361
361
common.please_contribute_to_add_content_into আনিস চৌধুরী.
common.content

আনিসুজ্জামান

404
404
common.please_contribute_to_add_content_into আনিসুজ্জামান.
common.content

আনিসুল হক

403
403
common.please_contribute_to_add_content_into আনিসুল হক.
common.content

আনোয়ার পাশা

426
426
common.please_contribute_to_add_content_into আনোয়ার পাশা.
common.content

আফজাল চৌধুরী

428
428
common.please_contribute_to_add_content_into আফজাল চৌধুরী.
common.content

আবু ইসহাক

816
816

বাংলা সাহিত্য রচনাসম্ভার সংখ্যার বিচারে স্বল্প হলেও বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের এক উজ্জ্বলতম নাম আবু ইসহাক । বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মৌলভী মোহাম্মদ এবাদুল্লা ও আতহারুন্নিসা দম্পত্তির ছয় সন্তানের মধ্যে আবু ইসহাক ছিলেন পঞ্চম । ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষের খণ্ডচিত্র যেমন স্থান পেয়েছে তার লেখনিতে তেমনি বাংলার স্বাধীনতা পরবর্তী চিত্রও তুলে ধরেছেন তাঁর সাহিত্যকর্মে । আবু ইসহাক বাংলা ভাষার নতুন ধরনের অভিধান প্রণেতা হিসেবেও বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন ।

আবু ইসহাক

বাংলা সাহিত্য রচনাসম্ভার সংখ্যার বিচারে স্বল্প হলেও বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের এক উজ্জ্বলতম নাম আবু ইসহাক ।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মৌলভী মোহাম্মদ এবাদুল্লা ও আতহারুন্নিসা দম্পত্তির ছয় সন্তানের মধ্যে আবু ইসহাক ছিলেন পঞ্চম ।

ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষের খণ্ডচিত্র যেমন স্থান পেয়েছে তার লেখনিতে তেমনি বাংলার স্বাধীনতা পরবর্তী চিত্রও তুলে ধরেছেন তাঁর সাহিত্যকর্মে ।

আবু ইসহাক বাংলা ভাষার নতুন ধরনের অভিধান প্রণেতা হিসেবেও বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন ।

সাহিত্যিক আবু ইসহাক জন্মগ্রহণ করেন – ১ নভেম্বর, ১৯২৬ সালে, শরিয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার শিরঙ্গল গ্রামে ।

বিশিষ্ট এই সাহিত্যিকের শিক্ষা জীবন – নড়িয়া ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৪২ সালে এসএসসি, ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ হতে ১৯৪৪ সালে এইচএসসি এবং করাচি বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৬০ সালে স্নাতক ।

স্বামী পরিত্যক্তা জয়গুনের দু-সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম, গ্রাম ছেড়ে নগরজীবন গ্রহণ, আবার গ্রামেই ফিরে আসলে সমাজপতিদের ধর্বান্ধতা ও প্রতিহিংসা প্রভৃতি যে উপন্যাসের বিষয়বস্তু – আবু ইসহাকের ‘সূর্য-দীঘল বাড়ী’ উপন্যাসের ।

 

’সূর্য-দীঘল বাড়ী’ বিখ্যাত এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় – ধারাবাহিকভাবে (১৯৫০-৫১) পর্যন্ত মাসিক নওবাহার পত্রিকায় (গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৫৫ সালে) ।

 

আবু ইসহাক ‘সূর্য- দীঘল বাড়ী’ উপন্যাসের তুলে ধরেছেন – বিশ্বযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং দেশ ভাগ ।

আবু ইসহাকের প্রথম প্রকাশিত রচনার নাম – ১৯৪০ সালে নবযুগ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘অভিশাপ’ গল্পটি ।

’সূর্য-দীঘল বাড়ী’ উপন্যাসটিকে চলচ্চিত্রে রূপদান করেন – শেখ নিয়ামত আলী ও মসীহউদ্দিন শাকের (১৯৭৯) সালে ।

পদ্মার বুকে জেগে ওঠা নতুন চরের দখল নিয়ে দুই গোষ্ঠীর সংঘাত, খুন, হিংসা বিদ্বেষ, স্বার্থপর মানুষের সম্পদের লোভ প্রভৃতি যে উপন্যাসের আলোচ্য বিষয় – আবু ইসহাকের ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’ উপন্যাসের ।

’পদ্মার পলিদ্বীপ’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় – প্রথমে বাংলা একাডেমির ‘উত্তরাধিকার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ‘মুখর মাটি’ নামে (১৯৮৬) সালে । এই উপন্যাসে প্রধান প্রধান চরিত্রের মধ্যে রয়েছে – জরিনা, রূপজাল, ফজল, এরফান মাতবর, জঙ্গুরুল্লা প্রভৃতি ।

লেখক যখন পুলিশ ছিলেন তখন বেশ কিছু জাল নোটের মামলা তদন্ত করেছিলেন সেই আলোকে রচনা করেছিলেন – ‘জাল’ উপন্যাস ।

আবু ইসহাকের উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় – আনন্দ পত্র পত্রিকায় (১৯৮৮ সালে) । ”লাঠির জোরে মাটি, লাঠালাঠি কাটাকাটি, আদালতে হাঁটাহাঁটি, এই না হলে চরের মাটি, হয় কবে খাঁটি”- উক্তিটি যে উপন্যাসের – আবু ইসহাকের ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’ উপন্যাসের ।

আবু ইসহাকের গল্প গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে – হারেম (১৯৬২) ও মহাপতঙ্গ (১৯৬৩) । নিজের জীবনের স্মৃতি তুলে ধরেছেন তাঁর নকশাধর্মী রচনা – ‘স্মৃতিবিচিত্র’ নামক স্মৃতিকথায় ।

’জয়ধ্বনি’ আবু ইসহাকের যে শ্রেণির রচনা – একমাত্র নাটক (ধানশালিকের দেশ পত্রিকায় ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত হয়) ।

’একটি ময়নার আত্মকাহিনী’ তাঁর যে শ্রেণির রচনা – ছোট গল্প (লেখকের মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ার কাহিনী) ।

’সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধান’ আবু ইসাহকের যে শ্রেণির রচনা – বাংলা ভাষার অভিধান ।

আবু ইসহাক রচিত ‘ সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধান’ ‘অন্ধকার’ শব্দের সমার্থক শব্দ ব্যবহার করেছেন – ১২৭ টি ।

’বারে বা, বড় পাখির বড় রং, আণ্ডা পাড়ার দেখ ঢং, উক্তিটি আবু ইসহাকের যে রচনার – ‘মহাপতঙ্গ’ নামক ছোট গল্পের ।

তাঁর মহাপতঙ্গ গল্পে যে বিষয়টি তুলে ধরেছেন – একজোড়া চড়ুই পাখির জবানিতে একদিকে বিজ্ঞানের আশীর্বাদ অন্যদিকে বিজ্ঞানের অভিশাপ ।

’সূর্য-দীঘল বাড়ী’ আবু ইসহাকের যে শ্রেণির রচনা – সামাজিক উপন্যাস ।

ওসমান, তোতা মিয়া, টুনি, করিম গাজী, নবুখা প্রভৃতি যে গল্পের চরিত্র – আবু ইসহাকের ‘জোক’ নামক ছোট গল্পের ।

সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য আবু ইসহাক যে যে পুরস্কার লাভ করেন – বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৩), বাংলাদেশ লেখক সংঘ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯০), একুশে পদক (১৯৯৭), স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর, ২০০৬) প্রভৃতি ।

কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের প্রথম সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় – আবু ইসহাককে ১৯৭৬ সালে ।

স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিক ও বিশিষ্ট অভিধান প্রণেতা আবু ইসহাক মৃত্যুবরণ করেন – ২০০৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি (মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবর স্থানে তাকে সমাহিত করা হয়) ।

common.content_added_by

আবু জাফর শামসুদ্দীন

448
448
common.please_contribute_to_add_content_into আবু জাফর শামসুদ্দীন.
common.content

আবু রুশদ

419
419
common.please_contribute_to_add_content_into আবু রুশদ.
common.content

আবু হেনা মোস্তফা কামাল

417
417
common.please_contribute_to_add_content_into আবু হেনা মোস্তফা কামাল.
common.content

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ

430
430
common.please_contribute_to_add_content_into আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ.
common.content

আবু হাসান শাহরিয়ার

406
406
common.please_contribute_to_add_content_into আবু হাসান শাহরিয়ার.
common.content

আবুবকর সিদ্দিক

429
429
common.please_contribute_to_add_content_into আবুবকর সিদ্দিক.
common.content

আবুল কালাম শামসুদ্দীন

514
514
common.please_contribute_to_add_content_into আবুল কালাম শামসুদ্দীন.
common.content

আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ

381
381
common.please_contribute_to_add_content_into আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ.
common.content

আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া

539
539
common.please_contribute_to_add_content_into আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া.
common.content

আবুল কাসেম (ভাষা সৈনিক)

454
454
common.please_contribute_to_add_content_into আবুল কাসেম (ভাষা সৈনিক).
common.content

আবুল বাশার

481
481
common.please_contribute_to_add_content_into আবুল বাশার.
common.content

আবুল হাসান

381
381
common.please_contribute_to_add_content_into আবুল হাসান.
common.content

আবুল হোসেন

398
398
common.please_contribute_to_add_content_into আবুল হোসেন.
common.content

আবুল হুসেন

401
401
common.please_contribute_to_add_content_into আবুল হুসেন.
common.content

আবুল মনসুর আহমেদ

344
344
common.please_contribute_to_add_content_into আবুল মনসুর আহমেদ.
common.content

আবদুর রউফ চৌধুরী

375
375
common.please_contribute_to_add_content_into আবদুর রউফ চৌধুরী.
common.content

আবদুল কাদির

409
409
common.please_contribute_to_add_content_into আবদুল কাদির.
common.content

আবদুল জব্বার (জ্যোতির্বিজ্ঞানী)

350
350
common.please_contribute_to_add_content_into আবদুল জব্বার (জ্যোতির্বিজ্ঞানী).
common.content

আবদুল জব্বার (সাহিত্যিক)

404
404
common.please_contribute_to_add_content_into আবদুল জব্বার (সাহিত্যিক).
common.content

আবদুল মান্নান সৈয়দ

391
391
common.please_contribute_to_add_content_into আবদুল মান্নান সৈয়দ.
common.content

আব্দুস সেলিম

379
379
common.please_contribute_to_add_content_into আব্দুস সেলিম.
common.content

আবদুল হক (প্রাবন্ধিক)

387
387
common.please_contribute_to_add_content_into আবদুল হক (প্রাবন্ধিক).
common.content

আবদুল হক চৌধুরী

439
439
common.please_contribute_to_add_content_into আবদুল হক চৌধুরী.
common.content

আবদুল হাই শিকদার

446
446
common.please_contribute_to_add_content_into আবদুল হাই শিকদার.
common.content

আবদুল হাকিম

386
386
common.please_contribute_to_add_content_into আবদুল হাকিম.
common.content

আবদুল্লাহ আল মামুন

462
462
common.please_contribute_to_add_content_into আবদুল্লাহ আল মামুন.
common.content

আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দিন

325
325
common.please_contribute_to_add_content_into আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দিন.
common.content

আবদুশ শাকুর

400
400
common.please_contribute_to_add_content_into আবদুশ শাকুর.
common.content

আবিদ আজাদ

489
489
common.please_contribute_to_add_content_into আবিদ আজাদ.
common.content

আবিদ আনোয়ার

442
442
common.please_contribute_to_add_content_into আবিদ আনোয়ার.
common.content

আরজ আলী মাতুব্বর

410
410
common.please_contribute_to_add_content_into আরজ আলী মাতুব্বর.
common.content

আমজাদ হোসেন

454
454
common.please_contribute_to_add_content_into আমজাদ হোসেন.
common.content

আলী আনোয়ার

411
411
common.please_contribute_to_add_content_into আলী আনোয়ার.
common.content

আলী ইমাম

440
440
common.please_contribute_to_add_content_into আলী ইমাম.
common.content

আল মাহমুদ

434
434
common.please_contribute_to_add_content_into আল মাহমুদ.
common.content

আল মুজাহিদী

431
431
common.please_contribute_to_add_content_into আল মুজাহিদী.
common.content

আলাউদ্দিন আল আজাদ

438
438
common.please_contribute_to_add_content_into আলাউদ্দিন আল আজাদ.
common.content

আলাওল

443
443
common.please_contribute_to_add_content_into আলাওল.
common.content

আশরাফ সিদ্দিকী

470
470
common.please_contribute_to_add_content_into আশরাফ সিদ্দিকী.
common.content

আশাপূর্ণা দেবী

412
412
common.please_contribute_to_add_content_into আশাপূর্ণা দেবী.
common.content

আশুতোষ চৌধুরী

461
461
common.please_contribute_to_add_content_into আশুতোষ চৌধুরী.
common.content

আশুতোষ মুখোপাধ্যায়

426
426
common.please_contribute_to_add_content_into আশুতোষ মুখোপাধ্যায়.
common.content

আসকার ইবনে শাইখ

441
441
common.please_contribute_to_add_content_into আসকার ইবনে শাইখ.
common.content

আসাদ চৌধুরী

385
385
common.please_contribute_to_add_content_into আসাদ চৌধুরী.
common.content

আসাদ্দর আলী

532
532
common.please_contribute_to_add_content_into আসাদ্দর আলী.
common.content

আহমদ শরীফ

396
396
common.please_contribute_to_add_content_into আহমদ শরীফ.
common.content

আহমাদ মোস্তফা কামাল

379
379
common.please_contribute_to_add_content_into আহমাদ মোস্তফা কামাল.
common.content

আহমেদ ছফা

403
403
common.please_contribute_to_add_content_into আহমেদ ছফা.
common.content

আহসান হাবীব

434
434
common.please_contribute_to_add_content_into আহসান হাবীব.
common.content

আ. ন. ম. বজলুর রশীদ

421
421
common.please_contribute_to_add_content_into আ. ন. ম. বজলুর রশীদ.
common.content

এখলাসউদ্দিন আহমদ

434
434
common.please_contribute_to_add_content_into এখলাসউদ্দিন আহমদ.
common.content

এ এম হারুন-অর-রশিদ

425
425
common.please_contribute_to_add_content_into এ এম হারুন-অর-রশিদ.
common.content

এম আর আখতার মুকুল

444
444
common.please_contribute_to_add_content_into এম আর আখতার মুকুল.
common.content

ইবরাহীম খাঁ

442
442
common.please_contribute_to_add_content_into ইবরাহীম খাঁ.
common.content

ইমদাদুল হক মিলন

483
483
common.please_contribute_to_add_content_into ইমদাদুল হক মিলন.
common.content

ইসমাইল হোসেন সিরাজী

386
386
common.please_contribute_to_add_content_into ইসমাইল হোসেন সিরাজী.
common.content

উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়

324
324
common.please_contribute_to_add_content_into উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়.
common.content

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত

481
481
common.please_contribute_to_add_content_into ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত.
common.content

ওমর আলী

427
427
common.please_contribute_to_add_content_into ওমর আলী.
common.content

ওয়াসি আহমেদ

394
394
common.please_contribute_to_add_content_into ওয়াসি আহমেদ.
common.content

ওয়াহিদুল হক

456
456
common.please_contribute_to_add_content_into ওয়াহিদুল হক.
common.content

কবীর চৌধুরী

428
428
common.please_contribute_to_add_content_into কবীর চৌধুরী.
common.content

কমলকুমার মজুমদার

404
404
common.please_contribute_to_add_content_into কমলকুমার মজুমদার.
common.content

করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়

360
360
common.please_contribute_to_add_content_into করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়.
common.content

কাজী আবদুল ওদুদ

471
471
common.please_contribute_to_add_content_into কাজী আবদুল ওদুদ.
common.content

কাজী ইমদাদুল হক

502
502
common.please_contribute_to_add_content_into কাজী ইমদাদুল হক.
common.content

কাজী কাদের নেওয়াজ

395
395
common.please_contribute_to_add_content_into কাজী কাদের নেওয়াজ.
common.content

কাজী দীন মুহাম্মদ

385
385
common.please_contribute_to_add_content_into কাজী দীন মুহাম্মদ.
common.content

কামাল চৌধুরী

370
370
common.please_contribute_to_add_content_into কামাল চৌধুরী.
common.content

কালকূট

410
410
common.please_contribute_to_add_content_into কালকূট.
common.content

কালাম আজাদ

499
499
common.please_contribute_to_add_content_into কালাম আজাদ.
common.content

কালিচন্দ্র রায় চৌধুরী

396
396
common.please_contribute_to_add_content_into কালিচন্দ্র রায় চৌধুরী.
common.content

কালিদাস রায়

441
441
common.please_contribute_to_add_content_into কালিদাস রায়.
common.content

কালীনাথ দত্ত

446
446
common.please_contribute_to_add_content_into কালীনাথ দত্ত.
common.content

কাহ্নপা

419
419
common.please_contribute_to_add_content_into কাহ্নপা.
common.content

কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার

421
421
common.please_contribute_to_add_content_into কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার.
common.content

কেতকী কুশারী ডাইসন

437
437
common.please_contribute_to_add_content_into কেতকী কুশারী ডাইসন.
common.content

কুমুদরঞ্জন মল্লিক

424
424
common.please_contribute_to_add_content_into কুমুদরঞ্জন মল্লিক.
common.content

কোরেশী মাগন ঠাকুর

487
487
common.please_contribute_to_add_content_into কোরেশী মাগন ঠাকুর.
common.content

কৃত্তিবাস ওঝা

462
462
common.please_contribute_to_add_content_into কৃত্তিবাস ওঝা.
common.content

কৃষ্ণদয়াল বসু

474
474
common.please_contribute_to_add_content_into কৃষ্ণদয়াল বসু.
common.content

কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়

391
391
common.please_contribute_to_add_content_into কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়.
common.content

ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ

329
329
common.please_contribute_to_add_content_into ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ.
common.content

খান মোহাম্মদ ফারাবী

375
375
common.please_contribute_to_add_content_into খান মোহাম্মদ ফারাবী.
common.content

খেলারাম চক্রবর্তী

468
468
common.please_contribute_to_add_content_into খেলারাম চক্রবর্তী.
common.content

খান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন

427
427
common.please_contribute_to_add_content_into খান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন.
common.content

গগন হরকরা

348
348
common.please_contribute_to_add_content_into গগন হরকরা.
common.content

গজেন্দ্রকুমার মিত্র

384
384
common.please_contribute_to_add_content_into গজেন্দ্রকুমার মিত্র.
common.content

গিরিশচন্দ্র ঘোষ

446
446
common.please_contribute_to_add_content_into গিরিশচন্দ্র ঘোষ.
common.content

গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী

453
453
common.please_contribute_to_add_content_into গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী.
common.content

গুণময় মান্না

388
388
common.please_contribute_to_add_content_into গুণময় মান্না.
common.content

গোপাল হালদার

400
400
common.please_contribute_to_add_content_into গোপাল হালদার.
common.content

গোবিন্দচন্দ্র দাস

445
445
common.please_contribute_to_add_content_into গোবিন্দচন্দ্র দাস.
common.content

গোলাম মোস্তফা

500
500
common.please_contribute_to_add_content_into গোলাম মোস্তফা.
common.content

গৌড় অভিনন্দ

493
493
common.please_contribute_to_add_content_into গৌড় অভিনন্দ.
common.content

ঘনরাম চক্রবর্তী

419
419
common.please_contribute_to_add_content_into ঘনরাম চক্রবর্তী.
common.content

চন্দ্রাবতী

435
435
common.please_contribute_to_add_content_into চন্দ্রাবতী.
common.content

চণ্ডীদাস

363
363
common.please_contribute_to_add_content_into চণ্ডীদাস.
common.content

চণ্ডীচরণ মুনশী

478
478
common.please_contribute_to_add_content_into চণ্ডীচরণ মুনশী.
common.content

চিত্তরঞ্জন মাইতি

400
400
common.please_contribute_to_add_content_into চিত্তরঞ্জন মাইতি.
common.content

জগদীশ গুপ্ত

381
381
common.please_contribute_to_add_content_into জগদীশ গুপ্ত.
common.content

জয়দেব

404
404
common.please_contribute_to_add_content_into জয়দেব.
common.content

জয় গোস্বামী

369
369
common.please_contribute_to_add_content_into জয় গোস্বামী.
common.content

জয়েন উদ্দীন

385
385
common.please_contribute_to_add_content_into জয়েন উদ্দীন.
common.content

জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী

429
429
common.please_contribute_to_add_content_into জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী.
common.content

জ্ঞান দাস

432
432
common.please_contribute_to_add_content_into জ্ঞান দাস.
common.content

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

416
416
common.please_contribute_to_add_content_into জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.
common.content

ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায়

350
350
common.please_contribute_to_add_content_into ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায়.
common.content

ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ

424
424
common.please_contribute_to_add_content_into ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ.
common.content

তপন চক্রবর্তী

464
464
common.please_contribute_to_add_content_into তপন চক্রবর্তী.
common.content

তপন রায়চৌধুরী

411
411
common.please_contribute_to_add_content_into তপন রায়চৌধুরী.
common.content

তপোবিজয় ঘোষ

425
425
common.please_contribute_to_add_content_into তপোবিজয় ঘোষ.
common.content

তরু দত্ত

398
398
common.please_contribute_to_add_content_into তরু দত্ত.
common.content

তসলিমা নাসরিন

391
391
common.please_contribute_to_add_content_into তসলিমা নাসরিন.
common.content

তাজুল মোহম্মদ

416
416
common.please_contribute_to_add_content_into তাজুল মোহম্মদ.
common.content

তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়

344
344
common.please_contribute_to_add_content_into তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.
common.content

তারাপদ রায়

433
433
common.please_contribute_to_add_content_into তারাপদ রায়.
common.content

তারাপদ সাঁতরা

424
424
common.please_contribute_to_add_content_into তারাপদ সাঁতরা.
common.content

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

590
590

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৮-১৯৭১) কথাসাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ। ১৮৯৮ সালের ২৩ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুর গ্রামে এক জমিদারবংশে তাঁর জন্ম।

তিনি ৬৫টি উপন্যাস, ৫৩টি ছোটোগল্প-সংকলন, ১২টি নাটক, ৪টি প্রবন্ধ-সংকলন, ৪টি স্মৃতিকথা, ২টি ভ্রমণকাহিনি, একটি কাব্যগ্রন্থ এবং একটি প্রহসন রচনা করেন। আরোগ্য নিকেতন উপন্যাসের জন্য তারাশঙ্কর ১৯৫৫ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার ও ১৯৫৬ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার এবং ১৯৬৭ সালে গণদেবতা উপন্যাসের জন্য জ্ঞানপীঠ পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া ১৯৬২ সালে তিনি পদ্মশ্রী এবং ১৯৬৮ সালে পদ্মভূষণ সম্মান অর্জন করেন। ১৯৭১ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

বাল্যকালে পিতাকে হারিয়ে তিনি মা এবং বিধবা পিসিমার আদর-যত্নে লালিত-পালিত হন। ১৯১৬ সালে স্বগ্রামের যাদবলাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পাস করে তিনি কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে আইএ শ্রেণিতে ভর্তি হন। সে সময় মহাত্মা গান্ধীর  অসহযোগ আন্দোলন চলছিল। সেই আন্দোলনে যোগ দিয়ে ১৯২১ সালে তিনি এক বছর অন্তরীণ থাকেন। ফলে তাঁর শিক্ষাজীবনের এখানেই সমাপ্তি ঘটে। পরে তিনি পুরোপুরিভাবে কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন এবং আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে প্রায় এক বছর কারাবরণ করেন (১৯৩০)। কারামুক্তির পর কিছুকাল গ্রামে কাটিয়ে ১৯৪০ সালে তিনি স্থায়িভাবে কলকাতার বাসিন্দা হন এবং সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন।

তারাশঙ্করের প্রথম গল্প ‘রসকলি’ সেকালের বিখ্যাত পত্রিকা কল্লোল-এ প্রকাশিত হয়। এছাড়া কালিকলম, বঙ্গশ্রী,  শনিবারের চিঠি,  প্রবাসী, পরিচয় প্রভৃতি প্রথম শ্রেণির পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। তবে রাজনীতি থেকে তিনি একেবারে বিচ্ছিন্ন হননি। একবার তিনি ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। পরবর্তীকালে তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার নির্বাচিত সদস্য হিসেবে আট বছর দায়িত্ব পালন করেন। কর্মজীবনে তিনি কিছুকাল কলকাতায় কয়লার ব্যবসা এবং কিছুকাল কানপুরে চাকরি করেন। ১৯৭০ সালে তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ-এর সভাপতি নির্বাচিত হন।

প্রথম জীবনে কিছু কবিতা লিখলেও কথাসাহিত্যিক হিসেবেই তারাশঙ্করের প্রধান খ্যাতি। বীরভূম-বর্ধমান অঞ্চলের মাটি ও মানুষ, বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের জীবনচিত্র, স্বাধীনতা আন্দোলন, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, অর্থনৈতিক বৈষম্য, ব্যক্তির মহিমা ও বিদ্রোহ, সামন্ততন্ত্র-ধনতন্ত্রের দ্বন্দ্বে ধনতন্ত্রের বিজয় ইত্যাদি তাঁর উপন্যাসের বিষয়বস্ত্ত।

মানবচরিত্রের নানা জটিলতা ও নিগূঢ় রহস্য তাঁর উপন্যাসে জীবন্তভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি নিজে জমিদারবংশের সন্তান হয়ে কাছ থেকে দেখেছেন কীভাবে জমিদারি ক্রমশ বিলুপ্ত হয়; পাশাপাশি নব্য ধনিক শ্রেণির উদ্ভব ঘটে এবং দিকে দিকে কল-কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। তখন একদিকে চলছিল গ্রাম্য সমাজের ভাঙন, অন্যদিকে শহরজীবনের বিকাশ। সমাজের এ নীরব পরিবর্তন তাঁর রচনায় নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তারাশঙ্করের রচনার আর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য-তিনি পরম যত্নের সঙ্গে মানুষের মহত্ত্বকে তুলে ধরেছেন। শরৎচন্দ্রের পরে কথাসাহিত্যে যাঁরা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, তারাশঙ্কর ছিলেন তাঁদের একজন।

তারাশঙ্কর প্রায় দুশ গ্রন্থ রচনা করেন। সেগুলির মধ্যে চৈতালী ঘূর্ণি (১৯৩২), জলসাঘর (১৯৩৮), ধাত্রীদেবতা (১৯৩৯), কালিন্দী (১৯৪০), গণদেবতা (১৯৪৩), পঞ্চগ্রাম (১৯৪৪), কবি (১৯৪৪), হাঁসুলি বাঁকের উপকথা (১৯৪৭), আরোগ্য নিকেতন (১৯৫৩) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তিনি অনেক গল্পও লিখেছেন।  বেদে,  পটুয়া, মালাকার, লাঠিয়াল, চৌকিদার,  বাগদী, বোষ্টম,  ডোম ইত্যাদি সাধারণ মানুষের জীবনচিত্র তাঁর গল্পে দক্ষতার সঙ্গে অঙ্কিত হয়েছে। ‘রসকলি’, ‘বেদেনী’, ‘ডাকহরকরা’ প্রভৃতি তাঁর প্রসিদ্ধ  ছোটগল্প। তারাশঙ্করের গল্পের সংকলন তিন খন্ডে সাহিত্য সংসদ কর্তৃক প্রকাশিত (১৯৭৭-১৯৭৯) হয়েছে। তাঁর দুই পুরুষ, কালিন্দী, আরোগ্য নিকেতন ও জলসাঘর অবলম্বনে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শরৎস্মৃতি পুরস্কার’ (১৯৪৭) ও ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ (১৯৫৬) লাভ করেন। এছাড়া তিনি ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ (১৯৫৫), ‘সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার’ (১৯৫৬), ‘জ্ঞানপীঠ পুরস্কার’ (১৯৬৭) এবং ‘পদ্মশ্রী’ (১৯৬২) ও ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৭১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।

common.content_added_by

তাহমিমা আনাম

434
434
common.please_contribute_to_add_content_into তাহমিমা আনাম.
common.content

তিলোত্তমা মজুমদার

404
404
common.please_contribute_to_add_content_into তিলোত্তমা মজুমদার.
common.content

ত্রিদিব মিত্র

420
420
common.please_contribute_to_add_content_into ত্রিদিব মিত্র.
common.content

দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার

372
372
common.please_contribute_to_add_content_into দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার.
common.content

দিদারুল আলম

425
425
common.please_contribute_to_add_content_into দিদারুল আলম.
common.content

দিব্যেন্দু পালিত

411
411
common.please_contribute_to_add_content_into দিব্যেন্দু পালিত.
common.content

দিলওয়ার

404
404
common.please_contribute_to_add_content_into দিলওয়ার.
common.content

দীনেশ দাশ

424
424
common.please_contribute_to_add_content_into দীনেশ দাশ.
common.content

দীনেশচন্দ্র সেন

440
440
common.please_contribute_to_add_content_into দীনেশচন্দ্র সেন.
common.content

দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

358
358
common.please_contribute_to_add_content_into দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.
common.content

দীনেশচন্দ্র ভট্টাচার্য

485
485
common.please_contribute_to_add_content_into দীনেশচন্দ্র ভট্টাচার্য.
common.content

দুলেন্দ্র ভৌমিক

451
451
common.please_contribute_to_add_content_into দুলেন্দ্র ভৌমিক.
common.content

দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ

443
443
common.please_contribute_to_add_content_into দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ.
common.content

দেওয়ান নুরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরী

437
437
common.please_contribute_to_add_content_into দেওয়ান নুরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরী.
common.content

দেবী রায়

424
424
common.please_contribute_to_add_content_into দেবী রায়.
common.content

দেবেশ রায়

393
393
common.please_contribute_to_add_content_into দেবেশ রায়.
common.content

দেবেন্দ্রনাথ সেন

480
480
common.please_contribute_to_add_content_into দেবেন্দ্রনাথ সেন.
common.content

দৌলত উজির বাহরাম খান

454
454
common.please_contribute_to_add_content_into দৌলত উজির বাহরাম খান.
common.content

দৌলত কাজী

442
442
common.please_contribute_to_add_content_into দৌলত কাজী.
common.content

দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ

403
403
common.please_contribute_to_add_content_into দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ.
common.content

দ্বিজ বংশী দাস

473
473
common.please_contribute_to_add_content_into দ্বিজ বংশী দাস.
common.content

দ্বিজেন শর্মা

370
370
common.please_contribute_to_add_content_into দ্বিজেন শর্মা.
common.content

দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর

405
405
common.please_contribute_to_add_content_into দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর.
common.content

ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়

354
354
common.please_contribute_to_add_content_into ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়.
common.content

ধ্রুব এষ

526
526
common.please_contribute_to_add_content_into ধ্রুব এষ.
common.content

নবকুমার বসু

427
427
common.please_contribute_to_add_content_into নবকুমার বসু.
common.content

নবনীতা দেবসেন

453
453
common.please_contribute_to_add_content_into নবনীতা দেবসেন.
common.content

নবারুণ ভট্টাচার্য

399
399
common.please_contribute_to_add_content_into নবারুণ ভট্টাচার্য.
common.content

নবীনচন্দ্র দাশ (কবি)

442
442
common.please_contribute_to_add_content_into নবীনচন্দ্র দাশ (কবি).
common.content

নবীনচন্দ্র সেন

395
395
common.please_contribute_to_add_content_into নবীনচন্দ্র সেন.
common.content

নরেন্দ্রনাথ মিত্র

391
391
common.please_contribute_to_add_content_into নরেন্দ্রনাথ মিত্র.
common.content

নরেন্দ্র দেব

473
473
common.please_contribute_to_add_content_into নরেন্দ্র দেব.
common.content

নলিনী দাশ

493
493
common.please_contribute_to_add_content_into নলিনী দাশ.
common.content

নসরুল্লাহ খাঁ

425
425
common.please_contribute_to_add_content_into নসরুল্লাহ খাঁ.
common.content

নাজমুন নেসা পিয়ারি

435
435
common.please_contribute_to_add_content_into নাজমুন নেসা পিয়ারি.
common.content

নাদিরা মজুমদার

376
376
common.please_contribute_to_add_content_into নাদিরা মজুমদার.
common.content

নাসির আহমেদ (কবি)

414
414
common.please_contribute_to_add_content_into নাসির আহমেদ (কবি).
common.content

নারায়ণ দেব

374
374
common.please_contribute_to_add_content_into নারায়ণ দেব.
common.content

নারায়ণ সান্যাল

345
345
common.please_contribute_to_add_content_into নারায়ণ সান্যাল.
common.content

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

367
367
common.please_contribute_to_add_content_into নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়.
common.content

নাসরীন জাহান

455
455
common.please_contribute_to_add_content_into নাসরীন জাহান.
common.content

নিমাই ভট্টাচার্য

349
349
common.please_contribute_to_add_content_into নিমাই ভট্টাচার্য.
common.content

নিশিকান্ত রায় চৌধুরী

402
402
common.please_contribute_to_add_content_into নিশিকান্ত রায় চৌধুরী.
common.content

নিয়াজ জামান

407
407
common.please_contribute_to_add_content_into নিয়াজ জামান.
common.content

নীরদচন্দ্র চৌধুরী

404
404
common.please_contribute_to_add_content_into নীরদচন্দ্র চৌধুরী.
common.content

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

438
438
common.please_contribute_to_add_content_into নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী.
common.content

নীলমণি মুখোপাধ্যায়

340
340
common.please_contribute_to_add_content_into নীলমণি মুখোপাধ্যায়.
common.content

নীহাররঞ্জন গুপ্ত

411
411
common.please_contribute_to_add_content_into নীহাররঞ্জন গুপ্ত.
common.content

নীহাররঞ্জন রায়

394
394
common.please_contribute_to_add_content_into নীহাররঞ্জন রায়.
common.content

নুরুন নবী

477
477
common.please_contribute_to_add_content_into নুরুন নবী.
common.content

নুরুল মোমেন

378
378
common.please_contribute_to_add_content_into নুরুল মোমেন.
common.content

নূরজাহান বোস

405
405
common.please_contribute_to_add_content_into নূরজাহান বোস.
common.content

পূরবী বসু

409
409
common.please_contribute_to_add_content_into পূরবী বসু.
common.content

প্যারীচাঁদ মিত্র

383
383
common.please_contribute_to_add_content_into প্যারীচাঁদ মিত্র.
common.content

প্রচেত গুপ্ত

487
487
common.please_contribute_to_add_content_into প্রচেত গুপ্ত.
common.content

প্রফুল্ল রায়

454
454
common.please_contribute_to_add_content_into প্রফুল্ল রায়.
common.content

প্রবোধকুমার সান্যাল

357
357
common.please_contribute_to_add_content_into প্রবোধকুমার সান্যাল.
common.content

প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়

359
359
common.please_contribute_to_add_content_into প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়.
common.content

প্রেমেন্দ্র মিত্র

425
425
common.please_contribute_to_add_content_into প্রেমেন্দ্র মিত্র.
common.content

প্রভাতরঞ্জন সরকার

394
394
common.please_contribute_to_add_content_into প্রভাতরঞ্জন সরকার.
common.content

ফকরুল আলম

404
404
common.please_contribute_to_add_content_into ফকরুল আলম.
common.content

ফজল শাহাবুদ্দীন

402
402
common.please_contribute_to_add_content_into ফজল শাহাবুদ্দীন.
common.content

ফররুখ আহমদ

412
412
common.please_contribute_to_add_content_into ফররুখ আহমদ.
common.content

ফয়েজ আহমেদ

403
403
common.please_contribute_to_add_content_into ফয়েজ আহমেদ.
common.content

ফারুক মঈনউদ্দীন

469
469
common.please_contribute_to_add_content_into ফারুক মঈনউদ্দীন.
common.content

ফালগুনী রায়

366
366
common.please_contribute_to_add_content_into ফালগুনী রায়.
common.content

ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়

368
368
common.please_contribute_to_add_content_into ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়.
common.content

বদরুদ্দীন উমর

372
372
common.please_contribute_to_add_content_into বদরুদ্দীন উমর.
common.content

বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর

397
397
common.please_contribute_to_add_content_into বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর.
common.content

বড়ু চণ্ডীদাস

415
415
common.please_contribute_to_add_content_into বড়ু চণ্ডীদাস.
common.content

বাণী বসু

405
405
common.please_contribute_to_add_content_into বাণী বসু.
common.content

বাসন্তী দুলাল নাগচৌধুরী

425
425
common.please_contribute_to_add_content_into বাসন্তী দুলাল নাগচৌধুরী.
common.content

বিজয় গুপ্ত

453
453
common.please_contribute_to_add_content_into বিজয় গুপ্ত.
common.content

বিজয়চন্দ্র মজুমদার

419
419
common.please_contribute_to_add_content_into বিজয়চন্দ্র মজুমদার.
common.content

বিজয়া মুখোপাধ্যায়

386
386
common.please_contribute_to_add_content_into বিজয়া মুখোপাধ্যায়.
common.content

বিনয় মুখোপাধ্যায়

376
376
common.please_contribute_to_add_content_into বিনয় মুখোপাধ্যায়.
common.content

বিনয় মজুমদার

509
509
common.please_contribute_to_add_content_into বিনয় মজুমদার.
common.content

বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়

393
393
common.please_contribute_to_add_content_into বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়.
common.content

বিদ্যাপতি

395
395
common.please_contribute_to_add_content_into বিদ্যাপতি.
common.content

বিমল কর

397
397
common.please_contribute_to_add_content_into বিমল কর.
common.content

বিমল ঘোষ

413
413
common.please_contribute_to_add_content_into বিমল ঘোষ.
common.content

বিমল মিত্র

418
418
common.please_contribute_to_add_content_into বিমল মিত্র.
common.content

বিষ্ণু দে

404
404
common.please_contribute_to_add_content_into বিষ্ণু দে.
common.content

বিহারীলাল চক্রবর্তী

441
441
common.please_contribute_to_add_content_into বিহারীলাল চক্রবর্তী.
common.content

বুদ্ধদেব গুহ

396
396
common.please_contribute_to_add_content_into বুদ্ধদেব গুহ.
common.content

বেলাল চৌধুরী

401
401
common.please_contribute_to_add_content_into বেলাল চৌধুরী.
common.content

বেনজির আহমেদ

399
399
common.please_contribute_to_add_content_into বেনজির আহমেদ.
common.content

ভগীরথ মিশ্র

374
374
common.please_contribute_to_add_content_into ভগীরথ মিশ্র.
common.content

মঈদুল হাসান

370
370
common.please_contribute_to_add_content_into মঈদুল হাসান.
common.content

মঈনুল আহসান সাবের

509
509
common.please_contribute_to_add_content_into মঈনুল আহসান সাবের.
common.content

মঈনুস সুলতান

485
485
common.please_contribute_to_add_content_into মঈনুস সুলতান.
common.content

মকবুলা মনজুর

397
397
common.please_contribute_to_add_content_into মকবুলা মনজুর.
common.content

মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়

377
377
common.please_contribute_to_add_content_into মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়.
common.content

মণিভূষণ ভট্টাচার্য

374
374
common.please_contribute_to_add_content_into মণিভূষণ ভট্টাচার্য.
common.content

মণীন্দ্র গুপ্ত

372
372
common.please_contribute_to_add_content_into মণীন্দ্র গুপ্ত.
common.content

মণীন্দ্র রায়

351
351
common.please_contribute_to_add_content_into মণীন্দ্র রায়.
common.content

মণীশ ঘটক

328
328
common.please_contribute_to_add_content_into মণীশ ঘটক.
common.content

মতি নন্দী

359
359
common.please_contribute_to_add_content_into মতি নন্দী.
common.content

মতিউর রহমান মল্লিক

362
362
common.please_contribute_to_add_content_into মতিউর রহমান মল্লিক.
common.content

মতিউল ইসলাম

417
417
common.please_contribute_to_add_content_into মতিউল ইসলাম.
common.content

মনজুরে মওলা

392
392
common.please_contribute_to_add_content_into মনজুরে মওলা.
common.content

মঞ্জু সরকার

377
377
common.please_contribute_to_add_content_into মঞ্জু সরকার.
common.content

মন্দাক্রান্তা সেন

341
341
common.please_contribute_to_add_content_into মন্দাক্রান্তা সেন.
common.content

মনিরউদ্দীন ইউসুফ

421
421
common.please_contribute_to_add_content_into মনিরউদ্দীন ইউসুফ.
common.content

মনোজ বসু

402
402
common.please_contribute_to_add_content_into মনোজ বসু.
common.content

মনোজ মিত্র

389
389
common.please_contribute_to_add_content_into মনোজ মিত্র.
common.content

মনোরঞ্জন ব্যাপারী

390
390
common.please_contribute_to_add_content_into মনোরঞ্জন ব্যাপারী.
common.content

মনোমোহন বসু

408
408
common.please_contribute_to_add_content_into মনোমোহন বসু.
common.content

মফিদুল হক

390
390
common.please_contribute_to_add_content_into মফিদুল হক.
common.content

মবিনউদ্দিন আহমদ

369
369
common.please_contribute_to_add_content_into মবিনউদ্দিন আহমদ.
common.content

মমতাজউদ্দীন আহমেদ

400
400
common.please_contribute_to_add_content_into মমতাজউদ্দীন আহমেদ.
common.content

মমতাজুর রহমান তরফদার

440
440
common.please_contribute_to_add_content_into মমতাজুর রহমান তরফদার.
common.content

মলয় রায়চৌধুরী

378
378
common.please_contribute_to_add_content_into মলয় রায়চৌধুরী.
common.content

মহাদেব সাহা

415
415
common.please_contribute_to_add_content_into মহাদেব সাহা.
common.content

মহাশ্বেতা দেবী

414
414
common.please_contribute_to_add_content_into মহাশ্বেতা দেবী.
common.content

মহীউদ্দিন

403
403
common.please_contribute_to_add_content_into মহীউদ্দিন.
common.content

মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত

425
425
common.please_contribute_to_add_content_into মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত.
common.content

ময়ুখ চৌধুরী

396
396
common.please_contribute_to_add_content_into ময়ুখ চৌধুরী.
common.content

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

432
432
common.please_contribute_to_add_content_into মাইকেল মধুসূদন দত্ত.
common.content

মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

320
320
common.please_contribute_to_add_content_into মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়.
common.content

মান্নান হীরা

355
355
common.please_contribute_to_add_content_into মান্নান হীরা.
common.content

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

474
474

বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক (১৯০৮-১৯৫৬)  কথাসাহিত্যিক। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ২৯ মে পিতার কর্মস্থল বিহারের সাঁওতাল পরগনার দুমকা শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের নিকট মালবদিয়া গ্রামে। পিতা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের গ্রাজুয়েট। তিনি সেটেলমেন্ট বিভাগে চাকরি করতেন এবং শেষজীবনে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার, ‘মানিক’ তাঁর ডাকনাম।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

পিতার চাকরিসূত্রে মানিককে দুমকা, আড়া, সাসারাম, কলকাতা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বারাসাত, টাঙ্গাইল ও মেদিনীপুরের নানা স্কুলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। শেষপর্যন্ত তিনি মেদিনীপুর জেলা স্কুল থেকে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে এন্ট্রান্স পাস করেন। পরে বাঁকুড়া ওয়েসলিয়ন মিশন কলেজ থেকে আইএসসি (১৯২৮) পাস করে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে বিএসসি-তে ভর্তি (১৯২৮) হন, কিন্তু পাঠ অসমাপ্ত রেখেই পেশাগত জীবনে প্রবেশ করেন। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে স্থাপন করা থেকে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সহোদরের সঙ্গে যৌথভাবে ‘উদয়াচল প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং হাউস’ পরিচালনা করেন। একইসঙ্গে তিনি বঙ্গশ্রী (১৯৩৭-৩৯) পত্রিকার সহকারী সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। এছাড়া কিছুদিন তিনি ভারত সরকারের ন্যাশনাল ওয়ার ফ্রন্টের প্রভিন্সিয়াল অরগানাইজার এবং বেঙ্গল দপ্তরে প্রচার সহকারী পদেও কর্মরত ছিলেন।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন ত্রিশোত্তর বাংলা কথাসাহিত্যের একজন শক্তিমান লেখক। স্নাতক শ্রেণিতে অধ্যয়নের সময় বিচিত্রা পত্রিকায় তাঁর প্রথম গল্প ‘অতসী মামী’ (১৯২৮) প্রকাশিত হলে পাঠক মহলে আলোড়নের সৃষ্টি হয়। পরে নিষ্ঠা ও অধ্যবসায়ের ফলে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত লেখকের মর্যাদা লাভ করেন। বিশ শতকের তিরিশের দশকে রবীন্দ্রনাথ-শরৎচন্দ্র ধারার বিরোধিতা করে যে কল্লোল গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটে, সেই গোষ্ঠীর লেখক হিসেবে মানিকের স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ে ওঠে।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় জীবনের প্রথম পর্বে মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড, ইয়ুং, অ্যাডলার প্রমুখ দ্বারা প্রভাবিত হলেও পরবর্তী সময়ে তিনি মার্কসবাদে দীক্ষা নেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য হন এবং আমৃত্যু এই দলের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পী সঙ্ঘের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। সাহিত্যের মাধ্যমে মার্ক্সের শ্রেণিসংগ্রামতত্ত্বের বিশ্লেষণ এবং মানুষের মনোরহস্যের জটিলতা উন্মোচনে তিনি ছিলেন একজন দক্ষশিল্পী। শহরের পাশাপাশি গ্রামজীবনের দ্বন্দ্বসঙ্কুল পটভূমিও তাঁর উপন্যাস ও গল্পে গুরুত্ব পেয়েছে। অর্ধশতাধিক উপন্যাস ও দুশো চবিবশটি গল্প তিনি রচনা করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গন্থ: উপন্যাস জননী (১৯৩৫), দিবারাত্রির কাব্য (১৯৩৫), পদ্মানদীর মাঝি (১৯৩৬), পুতুলনাচের ইতিকথা (১৯৩৬), শহরতলী (১৯৪০-৪১), চিহ্ন (১৯৪৭), চতুষ্কোণ (১৯৪৮), সার্বজনীন (১৯৫২), আরোগ্য (১৯৫৩) প্রভৃতি; আর ছোটগল্প অতসী মামী ও অন্যান্য গল্প (১৯৩৫), প্রাগৈতিহাসিক (১৯৩৭), সরীসৃপ (১৯৩৯), সমুদ্রের স্বাদ (১৯৪৩), হলুদ পোড়া (১৯৪৫), আজ কাল পরশুর গল্প (১৯৪৬), মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৫০), ফেরিওয়ালা (১৯৫৩) ইত্যাদি। পদ্মানদীর মাঝি ও পুতুলনাচের ইতিকথা  উপন্যাস দুটি তাঁর বিখ্যাত রচনা। এ দুটির মাধ্যমেই তিনি সর্বাধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। পদ্মানদীর মাঝি চলচ্চিত্রায়ণ হয়েছে।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর রচনায় মানুষের অন্তর্জীবন ও মনোলোক বিশ্লেষণে শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর প্রথম দিকের রচনায় নিপুণভাবে বিশ্লেষিত হয়েছে মানুষের অবচেতন মনের নিগূঢ় রহস্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও পঞ্চাশের মন্বন্তর পরবর্তী রচনায় তাঁর সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠেছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা নাগরিক জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করে তার নিখুঁত চিত্র অঙ্কিত হয়েছে তাঁর এ পর্যায়ের রচনায়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে চরম দারিদ্রে্যর সম্মুখীন হয়েছেন, তা সত্ত্বেও তিনি সাহিত্যচর্চাকেই পেশা হিসেবে অাঁকড়ে ধরেছেন। এক সময় তাই পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁর জন্য সাহিত্যিক বৃত্তির ব্যবস্থা করেন। এসব কারণে দারিদ্র্য মানুষের স্বভাবে কী পরিবর্তন আনে, বিশেষত যৌনাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে উদরপূর্তি কী সমস্যার সৃষ্টি করে তার একটি বাস্তব চিত্র অঙ্কিত হয়েছে তাঁর পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসে।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তিনি পূর্ববঙ্গ প্রগতি লেখক ও শিল্পী সঙ্ঘের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি এর যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। দুবার তিনি এ সঙ্ঘের সম্মেলনে সভাপতিত্বও করেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় তিনি কলকাতার টালিগঞ্জ অঞ্চলে ঐক্য ও মৈত্রী স্থাপনের প্রয়াসে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে বোম্বেতে অনুষ্ঠিত প্রবাসী বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের গণসাহিত্য শাখায় এবং ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ৪ এপ্রিল প্রগতি লেখক ও শিল্পী সঙ্ঘ আয়োজিত জোসেফ স্টালিনের শোকসভায় তিনি সভাপতিত্ব করেন। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর কলকাতায় তাঁর মৃত্যু

common.content_added_by

মালাধর বসু

352
352
common.please_contribute_to_add_content_into মালাধর বসু.
common.content

মাহবুব আলম

388
388
common.please_contribute_to_add_content_into মাহবুব আলম.
common.content

মাহবুব উল আলম চৌধুরী

340
340
common.please_contribute_to_add_content_into মাহবুব উল আলম চৌধুরী.
common.content

মাহবুব তালুকদার

403
403
common.please_contribute_to_add_content_into মাহবুব তালুকদার.
common.content

মাহবুবুল হক

383
383
common.please_contribute_to_add_content_into মাহবুবুল হক.
common.content

মাহবুব সাদিক

352
352
common.please_contribute_to_add_content_into মাহবুব সাদিক.
common.content

মাহফুজুর রহমান

377
377
common.please_contribute_to_add_content_into মাহফুজুর রহমান.
common.content

মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা

490
490
common.please_contribute_to_add_content_into মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা.
common.content

মাহমুদুল হক

346
346
common.please_contribute_to_add_content_into মাহমুদুল হক.
common.content

মাহাবুব উল আলম

338
338
common.please_contribute_to_add_content_into মাহাবুব উল আলম.
common.content

মিন্নাত আলী

364
364
common.please_contribute_to_add_content_into মিন্নাত আলী.
common.content

মিরজা আবদুল হাই

421
421
common.please_contribute_to_add_content_into মিরজা আবদুল হাই.
common.content

মিহির সেনগুপ্ত

437
437
common.please_contribute_to_add_content_into মিহির সেনগুপ্ত.
common.content

মীর মশাররফ হোসেন

377
377
common.please_contribute_to_add_content_into মীর মশাররফ হোসেন.
common.content

মুকুন্দ দাস

437
437
common.please_contribute_to_add_content_into মুকুন্দ দাস.
common.content

মুকুন্দরাম চক্রবর্তী

377
377
common.please_contribute_to_add_content_into মুকুন্দরাম চক্রবর্তী.
common.content

মুনতাসীর মামুন

383
383
common.please_contribute_to_add_content_into মুনতাসীর মামুন.
common.content

মুন্সী রইসউদ্দীন

367
367
common.please_contribute_to_add_content_into মুন্সী রইসউদ্দীন.
common.content

মুনির চৌধুরী

491
491

 

আবু নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী (২৭ নভেম্বর ১৯২৫ - ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১) ছিলেন একজন বাঙালি শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক, ভাষাবিজ্ঞানী, বাগ্মী এবং বুদ্ধিজীবী। তার রচিত কবর (রচনাকাল ১৯৫৩, প্রকাশকাল ১৯৬৬) পূর্ববাংলার প্রথম প্রতিবাদী নাটক। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের অন্যতম একজন শিকার। তিনি তৎকালীন ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানাধীন গোপাইরবাগ গ্রামে। তিনি ছিলেন ইংরেজ আমলের একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খান বাহাদুর আবদুল হালিম চৌধুরীর চৌদ্দ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। কবীর চৌধুরী তার অগ্রজ, ফেরদৌসী মজুমদার তার অনুজা। ১৯৪৯-এ লিলি চৌধুরীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

মুনীর চৌধুরী

 

জন্মআবু নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী
২৭ নভেম্বর ১৯২৫
মানিকগঞ্জ, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ (বয়স ৪৬)
পেশানাট্যকার, প্রবন্ধকার
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয়
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারত
শিক্ষাএমএ (ভাষাতত্ত্ব)
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানআলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়
উল্লেখযোগ্য রচনারক্তাক্ত প্রান্তর, কবর
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারবাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬২)
স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৮০)
দাম্পত্যসঙ্গীলিলি চৌধুরী
সন্তানআহমেদ মুনীর
আশফাক মুনীর
আসিফ মুনীর
আত্মীয়ফেরদৌসী মজুমদার (বোন)
কবীর চৌধুরী (ভাই)

 

ছাত্রজীবনঃ

মুনীর চৌধুরী ১৯৪১ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাস করেন এবং ১৯৪৩ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় বিভাগে আইএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স (১৯৪৬) এবং মাস্টার্স (১৯৪৭) পাস করেন, উভয় ক্ষেত্রেই দ্বিতীয় শ্রেণীতে। তিনি ছিলেন সলিমুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র। বক্তৃতানৈপুণ্যের সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজীবনের প্রথম বছরেই, ১৯৪৩ সালে, হলের সেরা বক্তা হিসেবে প্রোভোস্ট্‌স কাপ জেতেন।

১৯৪৬ সালে নিখিল বঙ্গ সাহিত্য প্রতিযোগিতায় সর্বাধিক সংখ্যক পুরস্কার জেতেন। ছাত্রাবস্থাতেই এক অঙ্কের নাটক রাজার জন্মদিনে লিখেছিলেন, যা ছাত্র সংসদ মঞ্চস্থ করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেই মুনীর চৌধুরী বামপন্থী রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন, ফলে তার পরীক্ষার ফলাফল এতে ব্যাহত হয়। বামপন্থী রাজনীতিতে অতিমাত্রায় সম্পৃক্ততার কারণে তাকে সলিমুল্লাহ হল থেকে বহিস্কার করা হয়। একই কারণে পিতার আর্থিক সাহায্য থেকেও তিনি বঞ্চিত হন। এসময় তিনি ঢাকা বেতার কেন্দ্রের জন্য নাটক লিখে আয় করতেন। বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ‌১৯৪৭ সালের ৬ই ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে যে প্রথম ছাত্রসভা হয়, তাতে তিনি বক্তৃতা করেন।

 

পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির কাজঃ

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পরপরই ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিটির অধীনে পূর্ববঙ্গে (নববগঠিত পূর্ব পাকিস্তান) কাজকর্ম পরিচালনার জন্য একটি আঞ্চলিক (জোনাল) কমিটি গঠন করা হয়। এই জোনাল কমিটির সাত সদস্যের একজন ছিলেন মুনীর চৌধুরী। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসে মুনীর চৌধুরী যোগদান করেন। একই বছরের শেষের দিকে প্রগতি লেখক সংঘের সম্পাদক নির্বাচিত হন।

 

শিক্ষকতা পর্বঃ

স্ত্রী লিলির সাথে মুনীর চৌধুরী (১৯৫৭)

১৯৪৯ সালে মুনীর চৌধুরী খুলনার ব্রজলাল কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। সেখানে তিনি কিছুদিন বাংলাও পড়িয়েছিলেন। ঐ বছর মার্চে তিনি ঢাকায় এসে রাজনৈতিক তৎপরতার কারণে গ্রেপ্তার হন, তবে রাজনীতি না করার প্রতিশ্রুতিতে ছাড়া পান। একই বছর তিনি লিলি মীর্জাকে বিয়ে করেন। ১৯৫০ সালে তিনি ঢাকার জগন্নাথ কলেজে যোগ দেন এবং সে বছরই আগস্ট মাসে ইংরেজির অস্থায়ী প্রভাষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিযুক্তি লাভ করেন। কিন্তু রাজনীতি থেকে বেশি দূরে থাকতে পারেন নি। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে গিয়ে পুলিশের ধাক্কা খেয়ে পড়ে যান। ২৬শে ফেব্রুয়ারি শিক্ষকদের প্রতিবাদ সভা আহ্বান করতে গিয়ে গ্রেফতার হন ও তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এসময় প্রায় দুই বছর তিনি দিনাজপুর ও ঢাকা জেলে বন্দী জীবনযাপন করেন। বন্দী অবস্থায় ১৯৫৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি কারাবন্দীদের অভিনয়ের জন্য লেখেন কবর নামের একাঙ্কিকা। ১৯৫৩ সালে বামপন্থী রণেশ দাশগুপ্ত জেলখানাতে ২১ ফেব্রুয়ারি উৎযাপনের লক্ষে মুনীর চৌধুরীকে একটি নাটক লেখার অনুরোধ জানান। এই অনুরোধের ভিত্তিতে তিনি ঐ নাটকটি রচনা করেন।[৩] এ নাটকটি তার শ্রেষ্ঠ নাটক হিসেবে খ্যাত এবং এর প্রথম মঞ্চায়ন হয় জেলখানার ভেতরে, যাতে কারাবন্দীরাই বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

সঙ্গী কারাবন্দী অধ্যাপক অজিত গুহের কাছ থেকে তিনি প্রাচীন ও মধ্য যুগের বাংলা সাহিত্যের পাঠ গ্রহণ করেন, কারাগারে থেকেই ১৯৫৩ সালে বাংলায় প্রাথমিক এম এ পরীক্ষা দেন ও প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।

১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসলে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। ১৯৫৪ সালে নিরাপত্তা বন্দী থাকা অবস্থায় এম এ শেষ পর্ব পরীক্ষা দিয়ে তিনি কৃতিত্বের সাথে বাংলায় মাস্টার্স ডিগ্রি পাস করেন।

১৯৫৪ সালের ১৫ই নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজির অস্থায়ী প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালের জানুয়ারিতে মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের প্রচেষ্টায় বাংলা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং আগস্ট মাসে বাংলা বিভাগে সার্বক্ষণিক চাকুরি লাভ করেন। ১৯৫৬ সালের এপ্রিল মাসে তিনি বাংলার প্রভাষক হিসেবে চাকুরি স্থায়ী করেন। ১৯৫৬ সালের শেষ দিকে রকাফেলার বৃত্তি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং ১৯৫৮ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্ত্বে আরও একটি মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সে বছর সেপ্টেম্বরে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৬২ সালে অস্থায়ী রিডার পদে নিযুক্ত হন।

১৯৬৯ সালে মুহম্মদ আবদুল হাই অকালে মৃত্যুবরণ করলে তার স্থানে মুনীর চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান হন। ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত একটি ভাষাতাত্ত্বিক সম্মেলনে যোগ দিতে যান।

 

রাজনৈতিক জীবনঃ

মুনীর চৌধুরী ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে পাকিস্তান সরকারের হাতে বন্দী হন। বন্দী থাকা অবস্থায় তিনি তার বিখ্যাত নাটক কবর রচনা করেন (১৯৫৩)। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের যে কোন ধরনের সংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার। ১৯৬৬ সালে রেডিও ও টেলিভিশনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান প্রচারে পাকিস্তান সরকারের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ করেন। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সরকার বাংলা বর্ণমালাকে রোমান বর্ণমালা দিয়ে সংস্কারের উদ্যোগ নিলে তিনি এর প্রতিবাদ করেন। ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে সে আন্দোলনের সমর্থনে সিতারা-ই-ইমতিয়াজ খেতাব বর্জন করেন।

 

বাংলা টাইপরাইটার ও মুনীর অপ্‌টিমাঃ

মুনীর চৌধুরী ১৯৬৫ সালে কেন্দ্রীয় বাঙলা উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে বাংলা টাইপরাইটারের জন্য উন্নতমানের কী-বোর্ড উদ্ভাবন করেন, যার নাম মুনীর অপ্‌টিমা। An Illustrated Brochure on Bengali Typewriter (1965) শীর্ষক পুস্তিকায় তিনি তার পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেন এবং এই নতুন টাইপরাইটার নির্মাণের লক্ষ্যে বেশ কয়েকবার তৎকালীন পূর্ব জার্মানিতে যান।

 

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানঃ

মুনীর চৌধুরী ১৯৫৩ সালে কারাবন্দী অবস্থায় কবর নাটকটি রচনা করেন। ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত পূর্ববঙ্গ সরকারের ভাষা-সংস্কার কমিটির রিপোর্টের অবৈজ্ঞানিক ও সাম্প্রদায়িক বিষয়বস্তুর তীব্র সমালোচনা করে মুনীর চৌধুরী পূর্ববঙ্গের ভাষা কমিটির রিপোর্ট আলোচনা প্রসঙ্গে একটি দীর্ঘ ভাষাতাত্ত্বিক প্রবন্ধ লেখেন। ১৯৫৯ সালের ২৭শে এপ্রিল প্রবন্ধটি বাংলা একাডেমিতে পঠিত হয়। কিন্তু মুসলিম ধর্মবিশ্বাসে আঘাতের অভিযোগে সামরিক সরকারের কাছে তাকে কৈফিয়ৎ দিতে হয়। এরপর তিনি সাহিত্যে মনোনিবেশ করেন ও বেশ কিছু মৌলিক ও অনুবাদ নাটক লেখেন। অনেকগুলি প্রবন্ধের সংকলনও প্রকাশ করেন। মীর মানস (১৯৬৫) প্রবন্ধ সংকলনের জন্য দাউদ পুরস্কার এবং পাক-ভারত যুদ্ধ সম্পর্কে লেখা সাংবাদিকতাসুলভ রচনা-সংকলন রণাঙ্গন (১৯৬৬)-এর জন্য সিতারা-ই-ইমতিয়াজ উপাধি লাভ করেন। ১৯৬৭-৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বাংলা বর্ণমালা ও বানান-পদ্ধতির সংস্কার প্রচেষ্টার প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে প্রবন্ধ লেখেন এবং পরবর্তীতে এ বিষয়ক বিতর্কে সক্রিয় অংশ নেন।

 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও মৃত্যুঃ

১৯৭১ সালের মার্চে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুনীর চৌধুরী ফিরে আসার কিছুকাল পরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। তার কিশোর ছেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে চলে যায়। এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আদেশে মে-জুন মাসে ইংরেজি বিভাগের প্রধান হিসেবে এবং জুলাই মাস থেকে কলা অনুষদের ডীন হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর মুনীর চৌধুরীকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীদের সহযোগী আল-বদর বাহিনী তার বাবার বাড়ি থেকে অপহরণ করে ও সম্ভবত ঐদিনই তাকে হত্যা করে।

 

উল্লেখযোগ্য রচনাবলিঃ

নাটক

রক্তাক্ত প্রান্তর (১৯৬২): পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের কাহিনী এর মূল উপজীব্য। এতে তিনি যুদ্ধবিরোধী মনোভাব প্রকাশ করেন। নাটকটির জন্য তিনি ১৯৬২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান।

চিঠি (১৯৬৬)

কবর (রচনাকাল ১৯৫৩, প্রকাশকাল ১৯৬৬) পূর্ববাংলার প্রথম প্রতিবাদী নাটক। নাটকটির পটভূমি হলো ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন।

দণ্ডকারণ্য (১৯৬৬): রূপকাশ্রয়ী নাটক।

পলাশী ব্যারাক ও অন্যান্য (১৯৬৯):

মানুষ(১৯৪৭): ১৯৪৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কাহিনী এর মূল উপজীব্য।

নষ্ট ছেলে(১৯৫০): রাজনৈতিক চেতনাসমৃদ্ধ নাটক।

দণ্ডকারণ্য(১৯৬৬): তিনটি নাটকের সমন্বয়। এতে দণ্ড, দণ্ডধর, দণ্ডকারণ্য।

রাজার জন্মদিন(১৯৪৬)

চিঠি(১৯৬৬)

পলাশী ব্যারাক ও অন্যান্য(১৯৬৯)

অনুবাদ নাটক

কেউ কিছু বলতে পারে না (১৯৬৯): জর্জ বার্নার্ড শর You never can tell-এর বাংলা অনুবাদ।

রূপার কৌটা (১৯৬৯): জন গলজ্‌ওয়র্দির The Silver Box-এর বাংলা অনুবাদ।

মুখরা রমণী বশীকরণ (১৯৭০): উইলিয়াম শেক্‌স্‌পিয়ারের Taming of the Shrew-এর বাংলা অনুবাদ।

প্রবন্ধ গ্রন্থ

ড্রাইডেন ও ডি.এল. রায় (১৯৬৩): পরে তুলনামূলক সমালোচনা গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত

মীর মানস (১৯৬৫)

রণাঙ্গন (১৯৬৬): সৈয়দ শামসুল হক ও রফিকুল ইসলামের সাথে একত্রে।

তুলনামূলক সমালোচনা (১৯৬৯)

বাংলা গদ্যরীতি (১৯৭০)

অন্যান্য

An Illustrated Brochure on Bengali Typewriter (1965)

১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমি থেকে আনিসুজ্জামানের সম্পাদনায় চার খণ্ডে মুনীর চৌধুরী রচনাবলি প্রকাশিত হয়। প্রথম খণ্ডে (১৯৮২) মৌলিক নাট্যকর্ম, দ্বিতীয় খণ্ডে (১৯৮৪) অনুবাদ নাট্যকর্ম, তৃতীয় খণ্ডে (১৯৮৪) সমালোচনামূলক গ্রন্থাবলি এবং চতুর্থ খণ্ডে (১৯৮৬) ছোটগল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক সমালোচনা ও আত্মকথনমূলক রচনা প্রকাশিত হয়।

 

পুরস্কার ও সম্মাননাঃ

বাংলা একাডেমি পুরস্কার (নাটক), ১৯৬২

দাউদ পুরস্কার (মীর মানস গ্রন্থের জন্য) ১৯৬৫

সিতারা-ই-ইমতিয়াজ (১৯৬৬) (মার্চ ১৯৭১ বর্জন করেন)

স্বাধীনতা পুরস্কার (সাহিত্য) ১৯৮০

বাংলাদেশ মুজিবনগর কর্মচারী কল্যাণ সংসদ সম্মাননা স্মারক ১৯৯২

ভাষা সৈনিক ও রাজবন্দী পরিষদ সম্মাননা স্মারক ১৯৯৩

মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক সম্মাননা পরিষদ ১৯৯৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালুমনাই অ্যাসোসিয়েশন সম্মাননা স্মারক ২০১৮

ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ সম্মাননা স্মারক ২০১৯

অনুসন্ধান ইঞ্জিন গুগল তার ৯৫তম জন্মদিনে তাকে নিয়ে ডুডল দিনব্যাপী প্রদর্শন করে।

common.content_added_by

মুশাররাফ করিম

386
386
common.please_contribute_to_add_content_into মুশাররাফ করিম.
common.content

মুস্তফা নুরুল ইসলাম

416
416
common.please_contribute_to_add_content_into মুস্তফা নুরুল ইসলাম.
common.content

মুহাম্মদ আবদুর রশিদ সিদ্দিকী

376
376
common.please_contribute_to_add_content_into মুহাম্মদ আবদুর রশিদ সিদ্দিকী.
common.content

মুহম্মদ আবদুল হাই

439
439
common.please_contribute_to_add_content_into মুহম্মদ আবদুল হাই.
common.content

মুহম্মদ আসাদ্দর আলী

342
342
common.please_contribute_to_add_content_into মুহম্মদ আসাদ্দর আলী.
common.content

মুহম্মদ এনামুল হক

388
388
common.please_contribute_to_add_content_into মুহম্মদ এনামুল হক.
common.content

মুহম্মদ কবির

330
330
common.please_contribute_to_add_content_into মুহম্মদ কবির.
common.content

মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা

396
396
common.please_contribute_to_add_content_into মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা.
common.content

মুহম্মদ জাফর ইকবাল

425
425
common.please_contribute_to_add_content_into মুহম্মদ জাফর ইকবাল.
common.content

মুহম্মদ নুরুল হুদা

443
443
common.please_contribute_to_add_content_into মুহম্মদ নুরুল হুদা.
common.content

মুহম্মদ মনসুর উদ্দিন

352
352
common.please_contribute_to_add_content_into মুহম্মদ মনসুর উদ্দিন.
common.content

মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক

372
372
common.please_contribute_to_add_content_into মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক.
common.content

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

383
383
common.please_contribute_to_add_content_into মুহম্মদ শহীদুল্লাহ.
common.content

মুহাম্মদ আকরাম খাঁ

409
409
common.please_contribute_to_add_content_into মুহাম্মদ আকরাম খাঁ.
common.content

মুহাম্মদ নুরুল হক

396
396
common.please_contribute_to_add_content_into মুহাম্মদ নুরুল হক.
common.content

মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান

344
344
common.please_contribute_to_add_content_into মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান.
common.content

মোফাজ্জল করিম

408
408
common.please_contribute_to_add_content_into মোফাজ্জল করিম.
common.content

মোহাম্মদ নজিবর রহমান

334
334
common.please_contribute_to_add_content_into মোহাম্মদ নজিবর রহমান.
common.content

মোহাম্মদ সাদিক

459
459
common.please_contribute_to_add_content_into মোহাম্মদ সাদিক.
common.content

মৃণাল সেন

379
379
common.please_contribute_to_add_content_into মৃণাল সেন.
common.content

মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার

346
346
common.please_contribute_to_add_content_into মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার.
common.content

মৈত্রেয়ী দেবী

382
382
common.please_contribute_to_add_content_into মৈত্রেয়ী দেবী.
common.content

মোজাম্মেল হোসেন মিন্টু

475
475
common.please_contribute_to_add_content_into মোজাম্মেল হোসেন মিন্টু.
common.content

মোতাহের হোসেন চৌধুরী

370
370
common.please_contribute_to_add_content_into মোতাহের হোসেন চৌধুরী.
common.content

মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী

403
403
common.please_contribute_to_add_content_into মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী.
common.content

মোবারক হোসেন খান

421
421
common.please_contribute_to_add_content_into মোবারক হোসেন খান.
common.content

মোবাশ্বের আলী

371
371
common.please_contribute_to_add_content_into মোবাশ্বের আলী.
common.content

মোহাম্মদ আবদুল কাইউম

395
395
common.please_contribute_to_add_content_into মোহাম্মদ আবদুল কাইউম.
common.content

মোহাম্মদ আবদুল জববার

320
320
common.please_contribute_to_add_content_into মোহাম্মদ আবদুল জববার.
common.content

মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী

427
427
common.please_contribute_to_add_content_into মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী.
common.content

মোহাম্মদ কায়কোবাদ

375
375
common.please_contribute_to_add_content_into মোহাম্মদ কায়কোবাদ.
common.content

মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন

382
382
common.please_contribute_to_add_content_into মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন.
common.content

মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন

369
369
common.please_contribute_to_add_content_into মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন.
common.content

মোহাম্মদ নুরুল হুদা

387
387
common.please_contribute_to_add_content_into মোহাম্মদ নুরুল হুদা.
common.content

মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান

403
403
common.please_contribute_to_add_content_into মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান.
common.content

মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিয়া

378
378
common.please_contribute_to_add_content_into মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিয়া.
common.content

মোহাম্মদ রফিক

435
435
common.please_contribute_to_add_content_into মোহাম্মদ রফিক.
common.content

মোহিতলাল মজুমদার

377
377
common.please_contribute_to_add_content_into মোহিতলাল মজুমদার.
common.content

মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ্

371
371
common.please_contribute_to_add_content_into মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ্.
common.content

মোহাম্মদ মোদাব্বের

435
435
common.please_contribute_to_add_content_into মোহাম্মদ মোদাব্বের.
common.content

মোহাম্মদ লুতফর রহমান

371
371
common.please_contribute_to_add_content_into মোহাম্মদ লুতফর রহমান.
common.content

মৌলভী আবদুল করিম

458
458
common.please_contribute_to_add_content_into মৌলভী আবদুল করিম.
common.content

যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত

386
386
common.please_contribute_to_add_content_into যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত.
common.content

যতীন্দ্রমোহন বাগচী

395
395
common.please_contribute_to_add_content_into যতীন্দ্রমোহন বাগচী.
common.content

যতীন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য

369
369
common.please_contribute_to_add_content_into যতীন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য.
common.content

যোগীন্দ্রনাথ সরকার

378
378
common.please_contribute_to_add_content_into যোগীন্দ্রনাথ সরকার.
common.content

যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি

415
415
common.please_contribute_to_add_content_into যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি.
common.content

রওশন ইজদানী

367
367
common.please_contribute_to_add_content_into রওশন ইজদানী.
common.content

রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়

351
351
common.please_contribute_to_add_content_into রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়.
common.content

রজনীকান্ত সেন

361
361
common.please_contribute_to_add_content_into রজনীকান্ত সেন.
common.content

রকিব হাসান

386
386
common.please_contribute_to_add_content_into রকিব হাসান.
common.content

রফিক আজাদ

414
414
common.please_contribute_to_add_content_into রফিক আজাদ.
common.content

রফিকুর রশীদ

378
378
common.please_contribute_to_add_content_into রফিকুর রশীদ.
common.content

রফিকুল হক

350
350
common.please_contribute_to_add_content_into রফিকুল হক.
common.content

রবীন্দ্র গুহ

431
431
common.please_contribute_to_add_content_into রবীন্দ্র গুহ.
common.content

রমাপদ চৌধুরী

351
351
common.please_contribute_to_add_content_into রমাপদ চৌধুরী.
common.content

রমেশচন্দ্র মজুমদার

353
353
common.please_contribute_to_add_content_into রমেশচন্দ্র মজুমদার.
common.content

রণেশ দাশগুপ্ত

427
427
common.please_contribute_to_add_content_into রণেশ দাশগুপ্ত.
common.content

রহীম শাহ

376
376
common.please_contribute_to_add_content_into রহীম শাহ.
common.content

রাজশেখর বসু

450
450
common.please_contribute_to_add_content_into রাজশেখর বসু.
common.content

রাণী চন্দ

462
462
common.please_contribute_to_add_content_into রাণী চন্দ.
common.content

রাধাগোবিন্দ নাথ

431
431
common.please_contribute_to_add_content_into রাধাগোবিন্দ নাথ.
common.content

রাধারমণ দত্ত

370
370
common.please_contribute_to_add_content_into রাধারমণ দত্ত.
common.content

রাবেয়া খাতুন

400
400
common.please_contribute_to_add_content_into রাবেয়া খাতুন.
common.content

রামনিধি গুপ্ত

342
342
common.please_contribute_to_add_content_into রামনিধি গুপ্ত.
common.content

রামপ্রসাদ সেন

360
360
common.please_contribute_to_add_content_into রামপ্রসাদ সেন.
common.content

রাশীদুল হাসান

361
361
common.please_contribute_to_add_content_into রাশীদুল হাসান.
common.content

রাশেদ রউফ

378
378
common.please_contribute_to_add_content_into রাশেদ রউফ.
common.content

রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

373
373
common.please_contribute_to_add_content_into রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ.
common.content

রূপরাম চক্রবর্তী

344
344
common.please_contribute_to_add_content_into রূপরাম চক্রবর্তী.
common.content

রেজাউদ্দিন স্টালিন

441
441
common.please_contribute_to_add_content_into রেজাউদ্দিন স্টালিন.
common.content

রোকনুজ্জামান খান

507
507
common.please_contribute_to_add_content_into রোকনুজ্জামান খান.
common.content

লালন শাহ

355
355
common.please_contribute_to_add_content_into লালন শাহ.
common.content

লীলা মজুমদার

430
430
common.please_contribute_to_add_content_into লীলা মজুমদার.
common.content

লোকনাথ ভট্টাচার্য

415
415
common.please_contribute_to_add_content_into লোকনাথ ভট্টাচার্য.
common.content

শওকত আলী

485
485
common.please_contribute_to_add_content_into শওকত আলী.
common.content

শওকত ওসমান

489
489
common.please_contribute_to_add_content_into শওকত ওসমান.
common.content

শক্তি চট্টোপাধ্যায়

423
423
common.please_contribute_to_add_content_into শক্তি চট্টোপাধ্যায়.
common.content

শঙ্করীপ্রসাদ বসু

397
397
common.please_contribute_to_add_content_into শঙ্করীপ্রসাদ বসু.
common.content

শঙ্কু মহারাজ

384
384
common.please_contribute_to_add_content_into শঙ্কু মহারাজ.
common.content

শঙ্খ ঘোষ

439
439
common.please_contribute_to_add_content_into শঙ্খ ঘোষ.
common.content

শক্তিপদ রাজগুরু

369
369
common.please_contribute_to_add_content_into শক্তিপদ রাজগুরু.
common.content

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়

393
393
common.please_contribute_to_add_content_into শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়.
common.content

শংকর

435
435
common.please_contribute_to_add_content_into শংকর.
common.content

শঙ্কর সেনগুপ্ত

511
511
common.please_contribute_to_add_content_into শঙ্কর সেনগুপ্ত.
common.content

শচীন্দ্রনাথ বসু

434
434
common.please_contribute_to_add_content_into শচীন্দ্রনাথ বসু.
common.content

শহীদ আখন্দ

440
440
common.please_contribute_to_add_content_into শহীদ আখন্দ.
common.content

শহীদুল জহির

390
390
common.please_contribute_to_add_content_into শহীদুল জহির.
common.content

শহীদুল্লা কায়সার

428
428
common.please_contribute_to_add_content_into শহীদুল্লা কায়সার.
common.content

শহীদ কাদরী

464
464
common.please_contribute_to_add_content_into শহীদ কাদরী.
common.content

শাকুর মজিদ

463
463
common.please_contribute_to_add_content_into শাকুর মজিদ.
common.content

শান্তনু কায়সার

451
451
common.please_contribute_to_add_content_into শান্তনু কায়সার.
common.content

শান্তিরঞ্জন ভট্টাচার্য

367
367
common.please_contribute_to_add_content_into শান্তিরঞ্জন ভট্টাচার্য.
common.content

শামসুদ্দীন আবুল কালাম

627
627
common.please_contribute_to_add_content_into শামসুদ্দীন আবুল কালাম.
common.content

শাহ মুহম্মদ সগীর

371
371
common.please_contribute_to_add_content_into শাহ মুহম্মদ সগীর.
common.content

শাহরিয়ার কবির

408
408
common.please_contribute_to_add_content_into শাহরিয়ার কবির.
common.content

শাহাদাৎ হোসেন

477
477
common.please_contribute_to_add_content_into শাহাদাৎ হোসেন.
common.content

শাহাদুজ্জামান

406
406
common.please_contribute_to_add_content_into শাহাদুজ্জামান.
common.content

শাহেদ আলী

437
437
common.please_contribute_to_add_content_into শাহেদ আলী.
common.content

শিবকালী ভট্টাচার্য

411
411
common.please_contribute_to_add_content_into শিবকালী ভট্টাচার্য.
common.content

শিবনারায়ণ রায়

382
382
common.please_contribute_to_add_content_into শিবনারায়ণ রায়.
common.content

শিবনাথ শাস্ত্রী

388
388
common.please_contribute_to_add_content_into শিবনাথ শাস্ত্রী.
common.content

শিতালং শাহ

406
406
common.please_contribute_to_add_content_into শিতালং শাহ.
common.content

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

351
351
common.please_contribute_to_add_content_into শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়.
common.content

শুভাগত চৌধুরী

398
398
common.please_contribute_to_add_content_into শুভাগত চৌধুরী.
common.content

শেখ ভানু

421
421
common.please_contribute_to_add_content_into শেখ ভানু.
common.content

শেখ মুত্তালিব

350
350
common.please_contribute_to_add_content_into শেখ মুত্তালিব.
common.content

শেখ ওয়াজেদ আলি

495
495
common.please_contribute_to_add_content_into শেখ ওয়াজেদ আলি.
common.content

শেখ রেয়াজউদ্দীন আহমদ

398
398
common.please_contribute_to_add_content_into শেখ রেয়াজউদ্দীন আহমদ.
common.content

শেখ হবিবর রহমান

367
367
common.please_contribute_to_add_content_into শেখ হবিবর রহমান.
common.content

শৈলন ঘোষ

380
380
common.please_contribute_to_add_content_into শৈলন ঘোষ.
common.content

শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়

349
349
common.please_contribute_to_add_content_into শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়.
common.content

শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

348
348
common.please_contribute_to_add_content_into শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়.
common.content

শিবরাম চক্রবর্তী

369
369
common.please_contribute_to_add_content_into শিবরাম চক্রবর্তী.
common.content

সজনীকান্ত দাস

418
418
common.please_contribute_to_add_content_into সজনীকান্ত দাস.
common.content

সতীকান্ত গুহ

397
397
common.please_contribute_to_add_content_into সতীকান্ত গুহ.
common.content

সতীনাথ ভাদুড়ী

405
405
common.please_contribute_to_add_content_into সতীনাথ ভাদুড়ী.
common.content

সত্যজিৎ রায়

405
405
common.please_contribute_to_add_content_into সত্যজিৎ রায়.
common.content

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

422
422
common.please_contribute_to_add_content_into সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়.
common.content

সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়

333
333
common.please_contribute_to_add_content_into সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়.
common.content

সন্ধ্যাকর নন্দী

409
409
common.please_contribute_to_add_content_into সন্ধ্যাকর নন্দী.
common.content

সমরেশ বসু

378
378
common.please_contribute_to_add_content_into সমরেশ বসু.
common.content

সমরেশ মজুমদার

463
463
common.please_contribute_to_add_content_into সমরেশ মজুমদার.
common.content

সমরেন্দ্রনাথ সেন

404
404
common.please_contribute_to_add_content_into সমরেন্দ্রনাথ সেন.
common.content

সমর সেন

395
395
common.please_contribute_to_add_content_into সমর সেন.
common.content

সমীর রায়চৌধুরী

373
373
common.please_contribute_to_add_content_into সমীর রায়চৌধুরী.
common.content

সমুদ্র গুপ্ত

450
450
common.please_contribute_to_add_content_into সমুদ্র গুপ্ত.
common.content

সাদাত হোসাইন

429
429
common.please_contribute_to_add_content_into সাদাত হোসাইন.
common.content

সাবিরিদ খান

461
461
common.please_contribute_to_add_content_into সাবিরিদ খান.
common.content

সুকুমার সেন

431
431
common.please_contribute_to_add_content_into সুকুমার সেন.
common.content

সুখময় ভট্টাচার্য

352
352
common.please_contribute_to_add_content_into সুখময় ভট্টাচার্য.
common.content

সুচিত্রা ভট্টাচার্য

343
343
common.please_contribute_to_add_content_into সুচিত্রা ভট্টাচার্য.
common.content

সুধীন্দ্রনাথ দত্ত

420
420
common.please_contribute_to_add_content_into সুধীন্দ্রনাথ দত্ত.
common.content

সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়

363
363
common.please_contribute_to_add_content_into সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়.
common.content

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

407
407
common.please_contribute_to_add_content_into সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়.
common.content

সুরমা জাহিদ

413
413
common.please_contribute_to_add_content_into সুরমা জাহিদ.
common.content

সুফিয়া কামাল

456
456
common.please_contribute_to_add_content_into সুফিয়া কামাল.
common.content

সুবিমল বসাক

364
364
common.please_contribute_to_add_content_into সুবিমল বসাক.
common.content

সুবিমল মিশ্র

429
429
common.please_contribute_to_add_content_into সুবিমল মিশ্র.
common.content

সুবোধ ঘোষ

422
422
common.please_contribute_to_add_content_into সুবোধ ঘোষ.
common.content

সুব্রত বড়ুয়া

428
428
common.please_contribute_to_add_content_into সুব্রত বড়ুয়া.
common.content

সুভাষ মুখোপাধ্যায়

393
393
common.please_contribute_to_add_content_into সুভাষ মুখোপাধ্যায়.
common.content

সুশান্ত মজুমদার

395
395
common.please_contribute_to_add_content_into সুশান্ত মজুমদার.
common.content

সুশোভন সরকার

439
439
common.please_contribute_to_add_content_into সুশোভন সরকার.
common.content

সেলিনা পারভীন

403
403
common.please_contribute_to_add_content_into সেলিনা পারভীন.
common.content

সেলিনা হোসেন

436
436
common.please_contribute_to_add_content_into সেলিনা হোসেন.
common.content

সৈয়দ আলী আহসান

345
345
common.please_contribute_to_add_content_into সৈয়দ আলী আহসান.
common.content

সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী

318
318
common.please_contribute_to_add_content_into সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী.
common.content

সৈয়দ মুজতবা আলী

402
402
common.please_contribute_to_add_content_into সৈয়দ মুজতবা আলী.
common.content

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ

425
425
common.please_contribute_to_add_content_into সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ.
common.content

সৈয়দ শামসুল হক

454
454
common.please_contribute_to_add_content_into সৈয়দ শামসুল হক.
common.content

সৈয়দ শাহনুর

430
430
common.please_contribute_to_add_content_into সৈয়দ শাহনুর.
common.content

সৈয়দ সুলতান

415
415
common.please_contribute_to_add_content_into সৈয়দ সুলতান.
common.content

সৈয়দ হামজা

377
377
common.please_contribute_to_add_content_into সৈয়দ হামজা.
common.content

হর্ষ দত্ত

400
400
common.please_contribute_to_add_content_into হর্ষ দত্ত.
common.content

হরিশ চন্দ্র মিত্র

414
414
common.please_contribute_to_add_content_into হরিশ চন্দ্র মিত্র.
common.content

হাবীবুর রহমান

379
379
common.please_contribute_to_add_content_into হাবীবুর রহমান.
common.content

হাসন রাজা

489
489
common.please_contribute_to_add_content_into হাসন রাজা.
common.content

হাসান আজিজুল হক

408
408
common.please_contribute_to_add_content_into হাসান আজিজুল হক.
common.content

হাসান ফকরী

419
419
common.please_contribute_to_add_content_into হাসান ফকরী.
common.content

হাসান হাফিজুর রহমান

448
448
common.please_contribute_to_add_content_into হাসান হাফিজুর রহমান.
common.content

হাসিরাশি দেবী

405
405
common.please_contribute_to_add_content_into হাসিরাশি দেবী.
common.content

হায়াৎ মামুদ

462
462
common.please_contribute_to_add_content_into হায়াৎ মামুদ.
common.content

হিমানী বন্দ্যোপাধ্যায

444
444
common.please_contribute_to_add_content_into হিমানী বন্দ্যোপাধ্যায.
common.content

হুমায়ুন আজাদ

457
457
common.please_contribute_to_add_content_into হুমায়ুন আজাদ.
common.content

হুমায়ুন কবীর

360
360
common.please_contribute_to_add_content_into হুমায়ুন কবীর.
common.content

হুমায়ূন আহমেদ

418
418
common.please_contribute_to_add_content_into হুমায়ূন আহমেদ.
common.content

হুমায়ূন কবীর ঢালী

415
415
common.please_contribute_to_add_content_into হুমায়ূন কবীর ঢালী.
common.content

হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

367
367
common.please_contribute_to_add_content_into হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়.
common.content

হেমেন্দ্র কুমার রায়

401
401
common.please_contribute_to_add_content_into হেমেন্দ্র কুমার রায়.
common.content

ইব্রাহিম খাঁ

399
399
common.please_contribute_to_add_content_into ইব্রাহিম খাঁ.
common.content

সাহিত্যিকদের জন্ম / জন্মসাল

502
502
common.please_contribute_to_add_content_into সাহিত্যিকদের জন্ম / জন্মসাল.
common.content

সাহিত্যিকদের মৃত্যু / মৃত্যু সাল

361
361
common.please_contribute_to_add_content_into সাহিত্যিকদের মৃত্যু / মৃত্যু সাল.
common.content
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion